শেষ আপডেট: 16th July 2024 17:25
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জম্মুর ডোডায় সেনাবাহিনীর পাঁচজন অফিসার-জওয়ানকে হত্যার দায় নিয়েছে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের মদতপুষ্ট কাশ্মীর টাইগার্স। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এই কাশ্মীর টাইগার্স? কীভাবে তারা দিনেদিনে ভূস্বর্গের ঘুম কেড়ে নিয়েছে? বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে কাশ্মীরের উপর থেকে বিশেষ মর্যাদার ছাতা তুলে নেওয়ার পর থেকেই এরা মাথাচাড়া দিয়েছে।
কাশ্মীর টাইগার্স কি ধর্মনিরপেক্ষ?
জম্মু-কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের রাজ করেছে তাদের বেশিরভাগ সংগঠনের নামেই জড়িয়ে রয়েছে ইসলাম, মহম্মদ বা আল্লার নাম। যেমন, জয়েশ-ই-মহম্মদ, আল্লা টাইগার্স, হিজবুল মুজাহিদিন। যাদের নাম দিয়েই আলাদা করে চিনে নেওয়া যায় তাদের উদ্দেশ্য কী? তাই ইসলামি জেহাদের কৌশল পরিবর্তনে জয়েশ এবং লস্কর একটি ধর্মনিরপেক্ষ নাম চাইছিল ছায়া সংগঠনের। তাই এই নাম বাছাই করা হয়। যাদের মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয় ধর্মের থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি হবে।
কীভাবে উত্থান হল?
ছোট এই সংগঠনের নাম ২০২১ সালের আগে কেউ কখনও শোনেনি। কাশ্মীর টাইগার্স খবরের প্রথম শিরোনামে এল শ্রীনগরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পুলিশ বাসে হামলার ঘটনায়। সেই হামলায় ২ জনের মৃত্যু এবং ১৪ জন জখম হন। তারপর থেকেই একের পর এক জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করে এই সংগঠন। গত ১২ জুন ডোডায় সেনাবাহিনীর অস্থায়ী অপারেটিং ঘাঁটিতে হামলা, কাঠুয়ার একটি চেক পয়েন্টে গ্রেনেড হামলার দায় নেয় কাশ্মীর টাইগার্স। এরপর ফের কাঠুয়াতেই সেনাবাহিনীর একটি টহলদারি গাড়িতে প্রথমে গ্রেনেড নিক্ষেপ ও এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। ওই ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। যদিও জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। তারপর ঘটল এদিনের সংঘর্ষ, যাতে এখনও পর্যন্ত পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে।
আপাত শান্ত জম্মু কেন লক্ষ্যস্থল?
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ মঙ্গলবার অভিযোগ তুলেছেন, গত ৭৮ দিনে কেবলমাত্র জম্মুতেই ১১টি জঙ্গি হামলা ঘটেছে। সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, ২০২১ সাল থেকে জম্মু অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে মোট ৭০ জনের প্রাণ গিয়েছে। যাঁদের মধ্যে ৫২ জনই নিরাপত্তা রক্ষী এবং তাঁদের ভিতর অধিকাংশই সেনাবাহিনীর জওয়ান ও অফিসার। নিরাপত্তা সংক্রান্ত অফিসারদের মতে, পুরনো পথে অনুপ্রবেশের দরজা খুলে যাওয়া, এই অঞ্চলে খুব কম নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন, অত্যন্ত আধুনিক তালিমপ্রাপ্ত জঙ্গিদল এবং প্রায় নির্জীব হয়ে পড়া সোর্স ও প্রযুক্তিগত গোয়েন্দাগিরির দুর্বলতাই জম্মুকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ। কাশ্মীরে জঙ্গিদের জানমাল, সম্পদ বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই জম্মুকে নিশানা করা হয়েছে। এটা এক জাতীয় কৌশল ও ধরনগত পরিবর্তন ছাড়া কিছু নয়।
পাকিস্তান কেন, কেমন করে কৌশল বদলাল?
এতদিন কাশ্মীরে সক্রিয় জঙ্গি দলগুলির সঙ্গে পাকিস্তানের নাম সরাসরি যুক্ত ছিল। আন্তর্জাতিক মহলেও এই সংগঠনগুলি কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল। তাই এদেরই নাম পরিবর্তন করে ছদ্মবেশ ধারণ করার নির্দেশ দেয় পাক চর সংস্থা আইএসআই। আর সেকারণে অনন্তনাগের বাসিন্দা জয়েশ জঙ্গি মুফতি আলতাফ ওরফে আবু জার ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নতুন দল ঘোষণা করে। একটি অনলাইন ভিডিওতে জার বলে তার দলের নাম হচ্ছে কাশ্মীর টাইগার্স। তার পরপরই হিজবুল মুজাহিদিনও একই কৌশল নেয়। তারা রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি ছদ্ম সংগঠনের নাম দেয়। লস্করের নাম বদলে হয়ে যায় পিপলস এগেইন্স্ট ফ্যাসিস্ত ফোর্স।