শেষ আপডেট: 4th January 2021 18:30
করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। রোগ সারিয়েও উঠেছেন অনেকে। করোনার টিকাও চলে আসবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। তবে এইসবের মধ্যেই চিন্তার কারণ হল কোভিড পরবর্তী সময়টা, যাকে বলা হচ্ছে পোস্ট-কোভিড ফেজ। সংক্রমণ সারিয়ে উঠেছেন এমন রোগীরা স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন কীভাবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বিশেষত কোমর্বিডিটির রোগীরা যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, সিওপিডি আছে যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে সতর্কতা আরও বেশি দরকার। সংক্রমণ সারলেও পরবর্তীকালে জটিল রোগ ধরবে না তো? ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বিতীয়বার ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই তো? ক্রনিক রোগ রয়েছে যাঁদের বা হার্টের রোগীরা কীভাবে সাবধান থাকবেন? এইসব প্রশ্নেরই উত্তর নিয়েই দ্য ওয়ালের প্রতিনিধি তিয়াষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট অ্যান্ড ডিভাইস স্পেশ্যালিস্ট ডক্টর দিলীপ কুমার। দ্য ওয়াল: কোভিড নিয়ে কেটে গেল এতগুলো মাস। এখনও কি হার্টের রোগীদের সতর্কতা একই রকম থাকবে? ডক্টর: কোভিড নিয়ে প্রায় আট থেকে নয় মাস কাটিয়ে দিয়েছি আমরা। এখন অনেকটা ভাল সময়। আতঙ্কের একটা প্রহর পেরিয়ে এসেছি আমরা। অনেক রোগী জীবনযুদ্ধে হেরে গেছেন, আবার অনেকে বাঁচার লড়াই করছেন। বিশেষ করে, কোমর্বিডিটি রোগীরা যাঁরা হার্ট, ডায়াবেটিস, সিওপিডিতে ভুগছিলেন এবং সেই সঙ্গে করোনা সংক্রমণও ধরা পড়েছিল, তাঁদের অনেকটা জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। তাই আমি সবসময় বলব, এখন তুলনামূলকভাবে ভাল সময়ের মধ্যে এসেও সতর্কতা ভুলে গেলে চলবে না। আমি ভয় দেখাচ্ছি না, শুধু এটাই বলব, এতমাস যেভাবে সতর্ক হয়ে কোভিড বিধি মেনে মানুষজন চলেছেন, এখনও যেন সেটাই হয়। রাশ আলগা করলে চলবে না। ভ্যাকসিন আসবে, দেশের একটা বড় অংশকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, তারপর রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে উঠবে, এটাও একটা লম্বা প্রক্রিয়া। তাই সাবধান থাকতেই হবে। এবার আসা যাক হার্টের রোগীদের কথায়। হার্টের রোগী যাঁরা করোনা সংক্রমণ সারিয়ে উঠেছেন তাঁদের কীভাবে সাবধান থাকতে হবে, কী কী নিয়ম মানতে হবে সেটাই সহজ করে বলছি। হয়ত সকলেই শুনেছেন, তিন-চার মাসেও হার্টের রোগীদের নিয়ে চিন্তা ছিল খুব বেশি। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছিল, করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে রোগীদের কার্ডিয়াক ফাইব্রোসিস হচ্ছে, ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হচ্ছে। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে জটিল রোগ ধরছে। করোনা সংক্রমণ হলে এই ধরনের রোগের সম্ভাবনা আছে বলে সতর্ক করাও হচ্ছিল। তবে ভাল কথা হল, এই ভয়টা এখন কেটেছে। গত চার মাসে এমন জটিল রোগ কোনও করোনা রোগীর শরীরেই সেভাবে দেখা যায়নি। তাই আমি বলব, হার্ট বা কোমবির্ডিটির রোগী যাঁরা সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাঁরা আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে বাঁচুন। তবে হ্যাঁ, কিছু নিয়ম মানতেই হবে। মাস্ক, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং জরুরি। যে ধরনের নিয়মগুলো বলে দেওয়া হয়েছে সেগুলো মেনে চলতেই হবে। সঠিক ডায়েট মানতে হবে। শরীরকে বিশ্রাম দেওয়াটাও জরুরি। দ্য ওয়াল: কতদিন চলতে হবে এভাবে? ডক্টর: আগেই বলেছি, করোনা সংক্রমণে হার্ট বা ফুসফুসের ফাইব্রোসিস জনিত রোগ এখন ধরা পড়ছে না। তাই অযথা ভয়, উৎকণ্ঠার দরকার নেই। সংক্রমণের ভয়ে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে অনেকের মধ্যেই যেটা ভাল কথা নয়। আমি বলব, সুস্থভাবে, স্বাভাবিক জীবন কাটান। আগে যেমনটা ছিলেন, ঠিক তেমনভাবেই। শরীরের দিকে খেয়াল রেখে চলাটা জরুরি। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেনে, মাস্ক পরে বাইরে বের হতে হবে। রুটিন চেকআপ করানো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে শরীরচর্চা এগুলো করলে আর কোনও ভয়ই থাকবে না।