শেষ আপডেট: 12th August 2024 17:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কর্মসূচি হল শাসন ব্যবস্থার সংস্কার। খবর আসছে, এই ঘোষণার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগ করানো অথবা অফিস দখলের মতো ঘটনা শুরু হয়েছে। ঢাকা-সহ দেশের নানা শহরে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা আধিকারিকদের অনেককেই চাপের মুখে সরে যেতে হয়েছে।
সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ঢাকায় অবস্থিত দেশটির জাতীয় প্রেসক্লাবটিও। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালন করা প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তকে পদচ্যুত করে ওই পদে নিজেদের নাম ঘোষণা করেছেন দুই সাংবাদিক হাসান হাফিজ ও আইয়ুব ভুঁইঞা। তাঁরা ছিলেন যথাক্রমে সহ-সভাপতি এবং যুগ্ম সম্পাদক। তাঁরা নিজেদের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার আগে ওই দুই পদাধিকারীর চেম্বারে ভাঙচুর চালানো হয় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করেছেন নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন ও শ্যামল দত্ত।
তাঁরা আরও বলেছেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে পরিচালিত হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব। একটি নিরপেক্ষ, নিয়মতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে এর ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচিত হয়। আমাদের বিশ্বাস, গণতন্ত্রমনা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ জাতীয় প্রেস ক্লাব জবরদখলের এই গর্হিত কর্মকাণ্ডকে কোনওভাবেই সমর্থন করবেন না।’ এই ব্যাপারে সাংবাদিক হাসান হাফিজ ও আইয়ুব ভুঁইঞার প্রতিক্রিয়া চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।
বন্দর তথা বাণিজ্য শহর চট্টগ্রামেও প্রেস ক্লাব দখলের চেষ্টা হয়েছে বলে বাংলাদেশের একাধিক মিডিয়ার খবর। সেখানে প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মির্জা ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিককে চাপ দিয়ে জোর করে সদস্যপদ দেওয়ার দাবি তুলেছে ক্ষমতাশালী একটি অংশ, যাদের সঙ্গে সাংবাদিকতার কোনও সম্পর্ক নেই। তারা কেউ ব্যবসায়ী, কেউ গুরুতর মামলায় জেল খাটা আসামি কিংবা মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে যুক্ত থাকর অভিযোগ রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কিছু দুষ্কৃতী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা চালায়। পরিস্থিতির কারণে ক্লাব অনির্দিষ্টকারণে বন্ধ রাখা হয়েছে।
সূত্রের খবর, চলমান অস্থির পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বহু সাংবাদিক বিপন্ন। অনেকেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন। কিন্তু নানাভাবে তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, সাংবাদিকতার পেশা তাঁদের ছেড়ে দিতে হবে। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার দিনেই ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে সংবাদমাধ্যমের অফিস, সাংবাদিকদের বাড়িতে হামলা হয়েছ। অথচ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সামনের সারিতে থেকে রিপোর্টিং করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উপর এই সব আক্রমণের তীব্র নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনুসকে প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়েছে দিল্লির দ্য ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অফ সাউথ এশিয়া।
Press bodies, including the Press Club of India express concern over reports of attacks on journalists, print, online and television media
— Press Club of India (@PCITweets) August 12, 2024
outlets and the Press Clubs in Dhaka and Chattogram. @Yunus_Centre #Bangladesh pic.twitter.com/DAzA6sl53v
পাশাপাশি গত শনিবার থেকে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের লেটার প্যাডে লেখা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেশের নামজাদা বহু সাংবাদিকের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ওই সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা থেকে বের করে দিতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তির দায় অস্বীকার করেননি।
বাংলাদেশের বহু প্রবীণ সাংবাদিকের বক্তব্য, এমন পরিস্থিতির খুব বেশি নজির অতীতে নেই। তাঁদের বক্তব্য, হাসিনা বিরোধী আন্দোলন থেকে সাম্প্রতিক হিংসার মতো সাংবাদিকদের নিশানা করে ভয় দেখানো, পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলির পিছনে জামাত-ই ইসলামীর মদত থাকতে পারে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী নেতাদের অনেকেই জামাত অনুগত বলে খবর।