শেষ আপডেট: 23rd August 2024 08:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনি-সহ একাধিক জেলা তিনদিন ধরে জলের তলায়। কয়েক লাখ মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ সেনা কয়েক হাজার মানুষকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ছয় জেলায় মৃতের সংখ্যা ছয়।
বাংলাদেশের উত্তর প্রান্তের জেলাগুলিতে এমন বন্যা বলতে গেলে প্রতি বছর হয়ে থাকে। ওই এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এবার সীমান্ত লাগোয়া ভারতের ত্রিপুরার একটি নদীর উপর তৈরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পর বাঁধকে কাঠগড়ায় তুলে তীব্র ভারত বিরোধী প্রচার শুরু হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে জল ছাড়া নিয়ে কৈফিয়ত তলব করেন। সরকারে আর এক উপদেষ্টা তথা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে ভারত। জল ছেড়ে মানুষকে ডুবিয়ে মারছে।
বাংলাদেশ সরকারের এমন প্রতিক্রিয়ায় অসন্তুষ্ট ভারত। বৃহস্পতিবারই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, বাংলাদেশের চলতি বন্যায় ভারতের বাঁধ থেকে জল ছাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই।কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট, বন্যা নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দায় ভারতের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি সে দেশের সংবাদ মাধ্যমের বড় অংশও ভারত বিরোধী প্রচারে শামিল হয়েছে। যদিও সে দেশের নদী বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, বিগত এক সপ্তাহ যাবত প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়া সত্বেও কেন প্রশাসন জন সাধারণকে আগাম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়নি। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে ভারতের একটি নদী বাঁধ থেকে ছাড়া জলের কারণে জেলাগুলি প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক জোরালো আপত্তি জানায় এই খবরের। তারা বলেছে, প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলেই সীমান্ত লাগোয়া দুই দেশের নদী সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেরও বিরাট অংশ জলের তলায়।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে নেমে আসা গুমতি নদী দুই দেশের মধ্যেই প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত বাংলাদেশ। ওই নদীর উপর যে বাঁধ রয়েছে সেটি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য, বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ওই ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি জায়গায় দুই দেশের যৌথ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আছে নদীর জলস্তরের দিকে নজর রাখার জন্য। বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত এই সংক্রান্ত তথ্য পেয়ে থাকে।
সেই তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে গুমতি নদীর অববাহিকায় গত দু’দিন ধরে যে বৃষ্টি হয়েছে তার কোনও নজির নেই। অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতের অংশও প্লাবিত। ভারত সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঁধটি থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশ ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়ে থাকে।
ত্রিপুরা সরকারের বক্তব্য, যে বাঁধ থেকে জল ছাড়ার কথা বলা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের আগে ভারতের এলাকা প্লাবিত হওয়ার কথা। বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়নি। বাঁধ উপচে জল নদীতে গিয়েছে। তারফলে ত্রিপুরার বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় ডুবে আছে। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিই এর প্রধান কারণ।