শেষ আপডেট: 2nd October 2024 17:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাকে খতম এবং লেবাননে ইজরায়েলের আক্রমণকে ঘিরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গোটা আন্তর্জাতিক মহল এক বিরাট অশান্তির প্রহর গুনছে। কারণ, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই হামলার যোগ্য জবাব দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিশ্বের তাবড় পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির অনুমান ইরান ও ইজরায়েলের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে। যদিও ইরান নিজের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে ঘোষণা করে রেখেছে। এ ঘটনায় আরব দুনিয়া সহ বিশ্বের নজর এখন ইরান-ইজরায়েল পরিস্থিতির দিকে। ইরানের হামলার জবাবে ইজরায়েলের পদক্ষেপ কী হবে, সেটি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ইরান যে প্রায় শদুয়েক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলের দিকে। সেই হানায় শব্দের থেকে পাঁচগুণ গতিসম্পন্ন (ঘণ্টায় ৬১০০ কিমি) ফতেহ ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তার সঙ্গে ছিল হজ কাসেম এবং শাহাব। যদিও এই হামলার অধিকাংশই ধ্বংস করে দিয়েছে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং এবং অ্যারো ২ এবং ৩।
যুদ্ধ ক্ষমতার দিক থেকে তুলনা করলে দেখা যায় দুটি দেশই সামরিক দিক থেকে বেশ শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষমতার বহরের তালিকা নিরূপণকারী সংস্থা গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরান সামরিক ক্ষমতার দিক থেকে ইজরায়েলের তুলনায় তিন ধাপ এগিয়ে আছে। তবে দুটি দেশই বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশের শীর্ষ কুড়িটির মধ্যে আছে। ইরানের অবস্থান ১৪ আর ইজরায়েলের অবস্থান ১৭-তম। প্রতিরক্ষা খাতে ইরান ও ইজরায়েল দুই দেশই প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তবে সামরিক বাজেটে ইরানের তুলনায় ইজরায়েলের ব্যয় দ্বিগুণের বেশি। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেট ২৪৪০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ইরানের বাজেট ৯৯৫ কোটি ডলার।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সৈন্য সংখ্যার হিসেবে ইজরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। ইরানের সেনা সংখ্যা ১১ লাখ ৮০ হাজার, ইজরায়েলের সৈন্য ৬ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ইরানের সংরক্ষিত সেনার সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ আর ইজরায়েলের রিজার্ভ সেনা আছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার।
যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার
ইরানের মোট যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ৫৫১টি আর ইজরায়েলের আছে ৬১২টি। ইরানের পরিবহণ বিমান আছে ৮৬টি, ইজরায়েলের আছে ১২টি। ইরানের প্রশিক্ষণ বিমান ১০২টি আর ইজরায়েলের আছে ১৫৫টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরানের হেলিকপ্টার আছে ১২৯টি আর ইজরায়েলের ১৪৬টি।
ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ি
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের তথ্য বলছে, ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ির দিক থেকে ইজরায়েলের চাইতে এগিয়ে আছে ইরান। ইজরায়েলের ট্যাঙ্ক আছে ১৩৭০টি আর ইরানের ১৯৯৬টি। সাঁজোয়া গাড়ি ইরানের ৬৫ হাজার ৭৬৫টি আর ইজরায়েলের আছে ৪৩ হাজার ৪০৩টি। এছাড়া গোলা ও তোপের ক্ষমতায় এগিয়ে ইরান যেখানে তাদের রকেট আর্টিলারি এমএলআরএস-এর সংখ্যা ৭৭৫টি এবং সেলফ প্রপেলড আর্টিলারির সংখ্যা ৫৮০টি। অন্যদিকে ইজরায়েলের সেফল প্রপেলড আর্টিলারির সংখ্যা ৬৫০টি এবং এমএলআরএস বা রকেট আর্টিলারির সংখ্যা ১৫০টি।
নৌ শক্তি
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, নৌবাহিনীর শক্তির দিক থেকে এগিয়ে আছে ইরান। দেশটির ১০১টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে যেখানে ৭টি ফ্রিগেট এবং ২১টি টহল জাহাজ আর ইজরায়েলের যুদ্ধজাহাজ সংখ্যা ৬৭টি। এর মধ্যে টহল জাহাজ ৪৫টি এবং ইজরায়েলের কোনও ফ্রিগেট নেই। সাবমেরিনের দিক থেকেও ইরান শক্তিশালী। দেশটির সাবমেরিন আছে ১৯টি যেখানে ইজরায়েলের সাবমেরিন আছে ৫টি।
পারমাণবিক শক্তি
সুইডেন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)'র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শুরুতে বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে প্রায় ১২ হাজার ৫১২টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। দেশগুলো হল- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইজরায়েল। তবে অনেকের অনুমান, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ইরানও পরমাণু অস্ত্র শক্তিধর কিন্তু, সত্য গোপন করে রেখেছে। সে কারণে ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষ যদি যুদ্ধের দিকে গড়ায় তাহলে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলিও দুভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এবং মহাযুদ্ধের আশঙ্কা অনেকেই পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারছেন না।