কৌতুকশিল্পীদের সঙ্গে সহাস্যে পোপ ফ্রান্সিস। (ছবিঃ ভ্যাটিক্যান সিটি সম্প্রচার বিভাগের সৌজন্যে)
শেষ আপডেট: 14th June 2024 20:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যতই তিনি হোন ব্যতিক্রমী। তিনি হলেন পোপ। ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ যাজক। এদিকে ধর্মের সঙ্গে কমেডিয়ান বা কৌতুকশিল্পীদের সম্পর্ক ইতিহাসের কোনও কালেই বিশেষ ভাল নয়। বরাবর ধর্মবিশ্বাসী ও ধর্মীয় সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে বিদ্রুপ ছুঁড়ে দিয়েছেন কৌতুকশিল্পীরা। পাল্টা কৌতুকশিল্পীদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছেন রাষ্ট্র থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সকলেই। খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম, হিন্দুধর্ম কেউ খুব একটা আলাদা নয়।
কিন্তু ভ্যাটিক্যান সিটির সর্বময় কর্তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পোপ ফ্রান্সিস বুঝিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস ও ঐতিহ্যকে যত্নের সঙ্গে পালন করতে চান, কিন্তু পাশাপাশি গির্জার দরজা খুলে দিতে চান সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যাজকের সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেও নিজের স্বকীয়তার ছাপ রেখে যেতে চান তিনি। এবারে জি৭ সম্মেলনে যাওয়ার আগে প্রায় নজিরবিহীনভাবেই পৃথিবীর ১৫ দেশ থেকে আসা মোট একশো সাতজন কৌতুকশিল্পীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন পোপ ফ্রান্সিস। তালিকায় ছিলেন ক্রিস রক, জুলিয়া লুই-দ্রেফুজ, জিমি ফ্যালন, স্টিফেন মার্চেন্ট, হুপি গোল্ডবার্গের মত কমেডি-জগতের একাধিক স্বনামধন্য শিল্পী। পোপ নিজেই তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, দেখা করলেন অ্যাপোস্টলিক প্রাসাদে।
নিজের বার্তায় পোপ বলেন, 'আপনারা পৃথিবীকে একত্র করেন। হাস্যরস বড়ই ছোঁয়াচে। আপনাদের হাতে অনবদ্য ক্ষমতা রয়েছে। আপনারা ক্ষমতার বাড়বাড়ন্তকে সমালোচনা করেন, হেনস্থা হওয়ার বিরুদ্ধে সরব হ'ন, দুর্ব্যবহার করলে কাউকে সতর্ক করেন, কিন্তু কারোর মধ্যে কোনও আতঙ্কের সঞ্চার হয় না।' কঠিন সময়েও কারোর মুখে হাসি ফোটানোর ক্ষমতার প্রশংসা করে পোপ বলেন, 'একটা কথা মনে রাখবেন। আপনারা যখন প্রত্যেক দর্শকের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন, তখন নিশ্চিতভাবেই আপনারা ঈশ্বরের মুখেও হাসি ফোটাতে পারেন।'
ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ পদে আসার পর থেকেই নানা ব্যাপারে সদর্থক বার্তা দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি মহিলাদের পূর্ণ সদস্যপদ দিয়েছেন, সমকামীদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন, ধনতন্ত্র ও লাগামছাড়া উন্নয়নের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও একাধিক বার্তা দিয়েছেন। কৌতুকশিল্পীদের সামনে ধর্ম ও কৌতুকের চিরাচরিত বিভাজন নিয়েও বেশ উদার বার্তা দিয়েছেন পোপ। বলেছেন, 'আমরা তো ঈশ্বরকে নিয়েও হাসিঠাট্টা করতেই পারি। যেভাবে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের নিয়ে হাসিতে মেতে উঠি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যেন কাউকে আঘাত না করে ফেলি। বিশেষ করে, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে দরিদ্রদের কথা'।
সম্মেলনে উপস্থিত কৌতুকশিল্পীরা সকলেই আপ্লুত। পোপ নিজে প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কিঞ্চিৎ বাক্যবিনিময় করেছেন। উপস্থিত ছিলেন ভ্যাটিক্যান সিটির একাধিক কর্তা। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ইতালীয় কৌতুকশিল্পীরাই বেশি ছিলেন। ১২ জন ছিলেন অ্যামেরিকান। ৮৭ বছরের বৃদ্ধ পোপ বলেছেন, 'কত কিছু শেখার আছে আপনাদের থেকে।' শিল্পী কোনান ও'ব্রায়েন যেমন বলেছেন, খুবই অল্প কথাই হয়েছে পোপের সঙ্গে, কিন্তু অসাধারণ অভিজ্ঞতা। পোপ ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি ইতালীয় ভাষায় বলেছেন, যেটি কোনানের তেমন জানা নেই। 'আমি ঠিক বুঝিনি, উনি কী বললেন, কিন্তু সব মিলিয়ে দারুণ সময় কেটেছে।'