দিল্লির কোচিংয়ে মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার আরও ৫।
শেষ আপডেট: 30th July 2024 13:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিল্লির কোচিং সেন্টারে তিন পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। আগেই ধরা পড়েছিলেন কোচিংয়ের ২ জন কর্মচারী। এর পরে ধরা পড়লেন চার মালিক এবং এক গাড়িচালক। এই নিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৭। সকলকেই হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, যে গাড়িচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে, ঘটনার দিন তিনিই জমা জলের মধ্যে দিয়ে জোরে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর থর গাড়ি। তাঁর গাড়ির জন্যই জমা জলে স্রোত তৈরি হয়, যা গিয়ে ধাক্কা দেয় কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টের দরজায়। তাতেই দরজা ভেঙে গিয়ে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে বলে পুলিশ জানিয়েছে প্রাথমিক তদন্তে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ওই চালকের নাম মনোজ কাঠুরিয়া। তাঁর বয়স ৫০। ফোর্স গোর্খা চালিয়ে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে গেছিলেন তিনি।। ভিডিওয় ধরা পড়েছে তাঁর গাড়ির জন্যই ভাঙল কোচিংয়ের গেট। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকত খুনের মামলা রুজু হয়েছে। তাঁর আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, ওই রাস্তায় গাড়ির গতিবেগ নিয়ে কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। তাঁর মক্কেলের গাড়ি ঘণ্টায় মাত্র ১৫ কিলোমিটার বেগে চলছিল, যাকে দ্রুতগামী বলা যায় না। রাস্তায় সে সময়ে আড়াই ফুট জল জমে ছিল বলেও জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, এই বেসমেন্টগুলির সমস্যা নিয়ে মাসখানেক আগেই কেন্দ্র, দিল্লি প্রশাসন এবং দিল্লি পুরসভাকে চিঠি লিখেছিলেন এক পড়ুয়া কিশোর সিং কুশওয়াহা। তিনি জানিয়েছিলেন, ইউপিএসসি-র কোচিং হাব দিল্লির রাজেন্দ্র নগরে কী ভাবে নিয়ম ভেঙে চলছে সেন্টারগুলো। এর ফলে ওই কোচিংয়ের পড়ুয়া এবং স্টাফদের জীবন বিপন্ন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি, ভবিষ্যতে বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও সাবধান করেছিলেন। চিঠি লেখার পরে ১৫ জুলাই এবং ২২ জুলাই দু’টি রিমাইন্ডারও পাঠিয়েছিলেন কিশোর, কিন্তু শেষমেশ কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তার মধ্যেই তাঁর আশঙ্কা সত্যি করে ঘটে গেল শনিবারের দুর্ঘটনা।
এর পরে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে এই নিয়ে চিঠি লিখেছেন ইউপিএসসি-র আরও এক পরীক্ষার্থী অবিনাশ দুবে। জানিয়েছেন, জল জমার এই সমস্যার জন্য সুস্থ শরীরে পড়াশোনা করা মুশকিল হয়ে গিয়েছে। নরকের জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার ১৮টি নিকাশি খাল পলি জমে পুরোপুরি অকেজো হয়ে আছে বলে অভিযোগ করেছেন উপরাজ্যপাল বিকে সাক্সেনা। তিনি এজন্য সরাসরি আঙুল তুলেছেন দিল্লির আপ সরকারের মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজের দিকে। এক্স হ্যান্ডেলে পাল্টা পোস্টে মন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত শনিবার ওল্ড রাজেন্দ্র নগরের কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে তিন জন পড়ুয়া প্রাণ হারান। তাঁরা ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন।
কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টটি রাস্তার থেকে আট ফুট নিচে অবস্থিত। ঘটনার সময় প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর সমান জল জমে গিয়েছিল।
উপরাজ্যপালের অভিযোগ, নিকাশি খালগুলির দূরবস্থার কারণেই রাস্তার জল নড়ে না। দিল্লি সরকারের খাল সংস্কার বিভাগের দায়িত্বে আছেন মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। তাঁর বক্তব্য, উপরাজ্যপাল অসত্য কথা বলছেন। খাল সংস্কারের ফাইল আমার দফতরে আটকে নেই। ফাইল অনেক আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্ষা থামলে কাজ শুরু হবে।
এদিকে, দিল্লির ওই ঘটনা নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গড়েছে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মৃত তিন পড়ুয়ার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন উপরাজ্যপাল সাক্সেনা।