শেষ আপডেট: 22nd June 2024 10:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ব্রিটেনের সব থেকে ধনী পরিবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুজা পরিবারকে সুইৎজারল্যান্ডের একটি আদালত কর্মী শোষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করল। একইসঙ্গ পরিবারের চারজনকে ৪ বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা ঘোষণা করেছে।
শুক্রবার সুইৎজারল্যান্ডের আদালত ব্রিটেনের কোটি কোটিপতি ক্লাবের অন্যতম ধনকুবের হিন্দুজা পরিবারের চার সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। জেনেভায় অবস্থিত নিজেদের একটি বাড়িতে ভারতীয় পরিচারিকা ও গার্হস্থ্য কর্মীদের শোষণ, মানসিক নির্যাতন, নিপীড়নের অপরাধে তাঁদের এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে হিন্দুজা পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। মামলাগুলির মধ্যে একটি মানব পাচারের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে অভিযুক্তদের। হিন্দুজা পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা ভারত থেকে সুইৎজারল্যান্ডে কর্মচারী নিয়ে আসত। আনার পর তাদের পাসপোর্ট নিজেদের হেফাজতে রেখে দিত।
কৌঁসুলিদের দাবি, হিন্দুজা পরিবারের সদস্যরা গার্হস্থ্য কর্মীদের সামান্য বেতন দিতেন। অনুমতি ছাড়া তাঁদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। যদিও হিন্দুজা পরিবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারী তিন কর্মচারীর সঙ্গে গোপনে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল হিন্দুজা পরিবার। কিন্তু অভিযোগের ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করে মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কৌঁসুলিরা।
অভিযোগকারীদের কৌঁসুলি আদালতের কাছে প্রকাশ (৭৮) ও কমল হিন্দুজাকে (৭৫) সাড়ে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। মামলাটি শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যের কারণে আদালতে কোনওদিন উপস্থিত হননি প্রকাশ ও কমল হিন্দুজা। আদালতে কৌঁসুলি অভিযোগ করেন, কর্মচারীদের মাসে ২৫০ থেকে ৪৫০ ডলার বেতন দেওয়া হয়েছে। এটা সুইৎজারল্যান্ডের শ্রম আইনের আয়ের চেয়ে কম।
প্রতিবাদে হিন্দুজা পরিবারের আইনজীবীরা বলেন, যে তিন কর্মচারী অভিযোগ করেছেন, তাঁরা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। তাঁদের আলাদা করে রাখা হয়নি। তাঁদের বাড়ি থেকে বের হওয়াতেও বিধিনিষেধ ছিল না। ভালোভাবে জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়ায় কর্মচারীরা হিন্দুজা পরিবারের কাছে বরং কৃতজ্ঞ ছিলেন।
দোষী সাব্যস্ত অজয় হিন্দুজার আইনজীবী কারাদণ্ডকে লঘুপাপে গুরুদণ্ড বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, সামাজিক সুবিচার নয়, বরং ন্যায়বিচারের কথা মাথায় রেখেই মামলা পরিচালিত হওয়া দরকার। আরেক অপরাধী অজয়ের স্ত্রী নম্রতা হিন্দুজার আইনজীবীও মক্কেলের মুক্তির দাবি করেন।
বিশ্বের ৩৮টি দেশে হিন্দুজা পরিবারের তেল, গ্যাস, ব্যাঙ্কিং ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ব্যবসা রয়েছে। পরিবারের মোট সম্পদের অর্থমূল্য প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বিশ্বজুড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
আদালতে শুনানি চলাকালীন অভিযোগকারীদের আইনজীবী বলেছিলেন, পরিচারকদের বেতনের থেকে পোষ্য কুকুরের জন্য হিন্দুজা পরিবার অনেক বেশি খরচ করে। ব্রিটেনের ধনীতম এই পরিবার একজন পরিচারকের বেতনে যত ব্যয় করে, তার থেকে অনেক বেশি খরচ করে তাদের পোষ্য কুকুরের জন্য। গৃহকর্মের জন্য নিযুক্ত কর্মচারী পাচার ও তাঁদের শোষণের অভিযোগে চলা একটি মামলায় সরকারি কৌঁসুলি সুইস আদালতে এই তথ্য তুলে ধরেন।
আইনজীবী ইয়েভস বার্তোস্সা বলেন, হিন্দুজারা একজন পরিচারকের থেকে একটি পোষ্য কুকুরের জন্য বেশি খরচখরচা করে। আদালতে তিনি দাবি করে বলেন, একজন মহিলা পরিচারিকাকে মাত্র ৬৫৬.৭০ টাকা (৭ সুইস ফ্রাঁ) বেতন দেওয়া হয়। সপ্তাহে সাতদিন দিনে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয় ওই মহিলাকে। আইনজীবীর আরও দাবি ছিল, কর্মচারীদের চুক্তিতে কাজের ঘণ্টা এবং ছুটির দিন লেখা থাকে না। যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে তাঁদের ছুটি মেলে, তাও কাজ না থাকলে। পাসপোর্ট পরিবারের জিম্মায় রেখে দেওয়ার ফলে কাজ ছেড়ে তাঁদের চলে যাওয়ারও উপায় থাকে না।
এ কারণে আবেদনকারীর আইনজীবী অজয় হিন্দুজা এবং তাঁর স্ত্রী নম্রতার কারাবাসের শাস্তি দাবি করেছিলেন। এছাড়া আদালতের ব্যয়-জরিমানা হিসাবে ১০ লক্ষ সুইস ফ্রাঁ এবং ওই কর্মীকে ৩৫ লক্ষ সুইস ফ্রাঁ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন আদালতে। অভিযোগ প্রসঙ্গে হিন্দুজা পরিবারের আইনজীবীরা বলেন, পরিচারকদের সঙ্গে সম্মানপূর্বক ব্যবহার করা হয়। বেতন প্রসঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, ওটা ওভাবে হিসাব করলে চলবে না। কারণ সব পরিচারকই বোর্ডিং এবং লজিংয়ের অর্থাৎ থাকা-খাওয়ার খরচসহ থাকেন। ফলে মোট খরচের পরিমাণটা অনেক বেশি।
১৮ ঘণ্টা কাজের প্রসঙ্গে হিন্দুজাদের উকিল বলেন, উনি যখন বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গে টিভি দেখেন, সেটাকে কি কাজ বলা যাবে! আমার মনে হয় তা নয়।