শেষ আপডেট: 24th October 2018 07:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো : হিব্রু বাইবেলের পান্ডুলিপির আদি নিদর্শন ধরা হয় 'ডেড সি স্ক্রল'কে। সময়টা ১৯৪৭, ডেড সি'র উত্তর পশ্চিম তীর সংলগ্ন 'কামরান' নামের এক পাহাড়ি মরু এলাকায় ভেড়া চরাচ্ছিল এক বেদুইন বালক। হটাৎই তার নজরে আসে এক গুহা। পাহাড়ের অনেকটা উপরে। নিছক কৌতুহলের বশে বালকটি তরতরিয়ে উঠে যায় গুহার কাছে। অন্ধকার গুহায় মশাল জ্বালাতেই দেখতে পায় গুহার ভেতরে রাখা মানুষের ব্যবহার করা নানান জিনিসপত্র। গুপ্তধনের গল্প অনেক শুনেছে সে। তন্নতন্ন করে গুপ্তধন খুঁজেও নিরাশ হয়। কাপড়ে মোড়া একটি মোটা পুঁথি পায়। সেটাকেই সে নামিয়ে নিয়ে আসে। বালকটির পরিবারের কেউ পড়াশোনা জানে না। তাই সেই পুঁথিটি বিক্রি করে দেওয়া হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীর কাছে। অনেক হাত ঘুরে পুঁথিটি যায় খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ও গবেষক ডঃ ট্রেভর-এর হাতে। তিনি এই পুঁথিটি হাতে পেয়ে প্রায় লাফিয়ে উঠেছিলেন। ডঃ ট্রেভর খুঁজে পেয়ে গেছেন সবচেয়ে প্রাচীন হিব্রু বাইবেলের প্রথম খণ্ড। বাকিগুলি পাওয়া গেলেও প্রথম খণ্ডটি খুঁজে পাওয়া যায়নি এতদিন। প্রথম খণ্ডটির নাম দেওয়া হয় 'ডেড সি স্ক্রল'। আন্তর্জাতিক পুরাতত্ত্বের বাজারে যার দাম কোটি কোটি টাকা। [caption id="attachment_45086" align="aligncenter" width="660"] আদি হিব্রু বাইবেলের এই জাল কপিটি এতদিন প্রদর্শিত হচ্ছিল[/caption] এর পর কেটে যায় অনেক বছর। অর্থের লোভে হিব্রু বাইবেলের জাল কপি আমেরিকার চোরাই বাজারে আসল বলে বিক্রি করে দেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এদিকে আমেরিকায় ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করে ২০১৭ সালে একটি বাইবেল জাদুঘর চালু করেন একজন খ্রিষ্টান ধনকুবের স্টিভ গ্রিন। তিনি নিলামে কিনে নেন ডেড সি স্ক্রলের নকল ৫টি খণ্ড, আসল ভেবে। এই ৫ টি খণ্ড নিয়ে আদি হিব্রু বাইবেলের মোট ১৬টি খন্ড ছিল ওয়াশিংটনের বাইবেল জাদুঘরের কাছে। সেগুলি নিয়মিত দর্শক এবং গবেষকদের সামনে প্রদর্শিত হতো। কিন্তু আমেরিকার গবেষকদের সন্দেহ হওয়ায়, ১৬টি খণ্ডের মধ্যে ৫টি খণ্ড পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল জার্মানিতে। জার্মানিতে বিস্তর পরীক্ষার পর জার্মানির বাইবেল বিশারদরা ডেড সি স্ক্রলের ৫টি খণ্ডই জাল বলে প্রমাণ করে দেন। ওয়াশিংটনের বাইবেল জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো প্রদর্শনী থেকে সরিয়ে ফেলেন। [caption id="attachment_45087" align="aligncenter" width="960"] ওয়াশিংটনের বাইবেল জাদুঘর[/caption] জাদুঘরটির কিউরেটর জেফ্রি ক্লোহা বলেছেন, তিনি আশা করেননি পান্ডুলিপিগুলি জাল প্রমাণিত হবে। তবে এর থেকে তাঁরা শিক্ষা নিলেন। তিনি আরও জানিয়েছেন বাইবেলের পান্ডুলিপির সত্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে তারা যে গুরুত্ব দেন এটা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তবে জেফ্রি যাই বলুন বাইবেল জাদুঘরটির মালিক স্টিভ গ্রিনের খুব একটা সুনাম নেই পুরাতত্ত্বের বাজারে। স্টিভ গ্রিনের কোম্পানি "হবি লবি"র বিরুদ্ধে ইরাক থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চোরাচালানের অভিযোগ ওঠে ২০১৭ সালে। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ওই কোম্পানিকে ৩০ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হয়। তাই স্টিভ গ্রিনের বাইবেল জাদুঘরে জাল বাইবেল দেখে গবেষকরা চমকালেও সাধারণ মানুষ আর অবাক হচ্ছেন না।