শেষ আপডেট: 5th July 2024 15:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: চোপড়া কাণ্ডের রেশ কাটেনি এখনও। এবার খবরে আরেক সালিশি সভা ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ।
অভিযোগ, আদালতে বিচারাধীন থাকা মামলার বিচারের জন্যে ডাকা হয়েছিল সালিশি সভা। সেই সালিশি সভায় হাজির না হওয়ায় চরম মাশুল গুনতে হল বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলেকে। তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। পাশাপাশি খুনের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল নেতার সাগরেদদের বিরুদ্ধে। এই হুমকি শোনার পরেই প্রাণ বাঁচাতে ওই বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলে ভয়ে নিজেদের ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার কুবাজপুর গ্রামের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বিরোধীরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছে ওই পরিবার। লিখিতভাবে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি, জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককেও। জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, “অভিযোগের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
জামালপুর ব্লকের চকদিঘি পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম কুবাজপুর। এই গ্রামেই বাড়ি কৃষিজীবী পরিবারের বৃদ্ধ দম্পতির। তাঁদের সঙ্গেই একই বাড়িতে থাকেন তাঁদের ছেলে। বৃদ্ধা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে তাঁর ছেলের সঙ্গে বর্ধমান থানা এলাকার এক তরুণীর বিয়ে হয়। কিন্তু ছেলের বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। বৌমা তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে 'বধূ নির্যাতনের’ অভিযোগ এনে মামলা করে। ওই মামলায় বর্ধমান সিজেএম আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে। এরপর দায়ের হয় 'খোরপোষের’ মামলা। সেই মামলা এখন বর্ধমান আদালতের বিচারাধীন রয়েছে।
তাঁর অভিযোগ, আদালতে বিচারাধীন ওই মামলার বিচার এখন আদালতের বাইরে করতে চাইছেন তাঁদের এলাকার তৃণমূলের নেতা। সেই কথা জানাতে, গত ১৩ জুন তাঁদের বাড়িতে আসেন চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আজাদ রহমানের অনুগামীরা। তিনি বলেন, "ওরা জানিয়ে যায়, আমাদের বৌমার করা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আজাদ রহমান চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস অফিসে বিচারসভা ডেকেছে। ১৪ জুন সেই বিচার সভায় আমাদের পরিবারের সবাইকে হাজির থাকতে হবে। ওরা এও বলে আমরা যদি আজাদ রহমানের বিচার সভায় হাজির না হই,তাহলে তারা আমাদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে, জ্বালিয়ে দেবে। এমনকি আমাদের প্রাণে মেরে দেওয়া হবে।"
হুমকি পেয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধার ছেলে জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, জীবনহানির শঙ্কায় তাঁরা কেউ ১৪ জুন চকদিঘির তৃণমূল পার্টি অফিসে আজাদ রহমানের বিচারসভাতে যাননি। সেই কারণে ওইদিন রাতেই লাঠি-সোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় আজাদ রহমানের ১২ জন সাগরেদ সহ আরও অনেকে। তাঁদের ছেলেকে ব্যাপক মারধর করে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেতে হয় বৃদ্ধ দম্পতিকেও।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করে জখম বসিরকে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। এরপরেও থানা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ঘর বাড়ি, ফসল, গবাদিপশু সব ফেলে বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে তাঁদের। বৃদ্ধা বলেন, “প্রশাসন নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে আমাদের আর বাড়ি ফেরা হবে না।"
বৃদ্ধার ছেলে বলেন,“ভবঘুরে হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে এখন দিন কাটাতে হচ্ছে। আমার বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মায়েরও শরীর ভালো যাচ্ছে না। চাষের জমির ফসল এখন জমিতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে সপরিবারে ’আত্মহত্যা’ করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।"
এই ঘটনা জানাজানি হতেই সোচ্চার হয়েছেন বিরোধীরা। সিপিএমের মহিলা সমিতির রাজ্য কমিটির সহ-সভানেত্রী ভারতী ঘোষাল বলেন, "কুবাজপুরের বৃদ্ধা সাহানারা বিবি যে অভিযোগ এনেছেন তা সত্যি মারাত্মক। ওই বৃদ্ধার আনা অভিযোগই প্রমাণ করে দিচ্ছে বাংলায় এখন আর আইনের শাসন নেই।" জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,
“জামালপুরের কুবাজপুরের বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলের উপর বর্বরোচিত হামলা,আক্রমণ ও হুমকির ঘটনাই প্রমাণ দিচ্ছে, এখন বঙ্গে তালিবানি শাসন চলছে।"
চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ আজাদ রহমান অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,“ওই পরিবার আমার পরিচিত। তাঁদের যে মামলার বিচার আদালতে চলছে তার বিচারের জন্য আমি কোনও বিচারসভা বা সালিশি সভা ডাকিনি। গ্রাম্য বিবাদ একটা হয়েছে, আর মিথ্যা করে ওই ঘটনার সঙ্গে আমার নাম জড়ানো হয়েছে।" তবে জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এমন ঘটনার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি খোঁজ খবর নেব। অভিযোগ সত্যি হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"