শেষ আপডেট: 24th May 2024 12:57
সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়
সোনা চোরাকারবারীদের দ্বন্দ্বেই কি খুন হতে হল বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিমকে? নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পিছনে কি তাদের বিপুল অর্থ ভাগাভাগিই দায়ী? এই প্রশ্নগুলিরই উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।
নিউটাউনের যে ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন প্রতিবেশী দেশের সাংসদ, তার ভাড়াটে আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী আখতারুজ্জামান শাহিন নিজেও সোনার চোরাচালানকারী বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, কলকাতায় শাহিন ও আনোয়ারুল আজিমের যৌথ ব্যবসা ছিল। সাংসদ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার এই শাহিন। হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছিল আরেক বন্ধু ও বাংলাদেশের চরমপন্থী নেতা আমানুল্লাহ আমানকে।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনার পর বাংলাদেশে চলে যায় শাহিন। সাংসদকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকার বরাত দিয়েছিল আমেরিকা প্রবাসী শাহিন। খুনের আগে আমানকে কিছু টাকা দেয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর।
সূত্রের খবর, গত ৩০ এপ্রিল আখতারুজ্জামান শাহিন ও আমানুল্লাহ আমান শিলাস্তি রহমান নামে এক বান্ধবীকে নিয়ে কলকাতা আসেন। আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। কলকাতায় আরও আগে থেকেই চলে এসেছিল সিয়াম ও জিহাদ। এখানে বসেই তারা সাংসদ আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পুরো দায়িত্ব আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে ১০ মে দেশে চলে যায় শাহিন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমান বাংলাদেশ থেকে আরও দুই ভাড়াটে খুনেকে কলকাতায় নিয়ে আসে। কলকাতার ১০ নম্বর সদর স্ট্রিটে 'হোটেল প্লাজা'য় একটি ঘর ভাড়া নেয় ফয়সাল আলি সাজি ও মোস্তাফিজুর রহমান নামে ওই দুই ভাড়াটে খুনি। ওই হোটেলের ১২এ রুমে ২ মে থেকে ১৩ মে ছিল তারা। হোটেলের রেজিস্ট্রারে তার উল্লেখ আছে।
গোয়েন্দাসূত্রে জানা গেছে আনোয়ারুল আজিম যে ১২ মে কলকাতায় আসবেন, তা আগে থেকেই জানতো শাহিন। সেই মতো তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। ১২ মে দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় আসেন সাংসদ। প্রথম দিন তিনি তার পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে থাকেন। পরদিন ১৩ মে নানা কৌশলে সাংসদকে নিউটাউনের সেই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যায় হত্যাকারীরা। বিকেলের দিকে বাংলাদেশের সাংসদ সঞ্জীবা গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটে আসেন। এরপরেই আমান ও তার সহযোগী ফয়সাল, মোস্তাফিজুর, সিয়াম ও জিহাদ, শাহিনের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য সাংসদের উপর চাপ দেয়। এই নিয়ে শুরু হয় তর্কাতর্কি। তারমধ্যেই একটা সময় সবাই মিলে তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর সে খবরও জানানো হয় এই হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রী আখতারুজ্জামান শাহিনকে।