শেষ আপডেট: 25th July 2024 18:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: জিপ গাড়ির নম্বর প্লেট লাগিয়ে গড়গড়িয়ে ছুটছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বোর্ড লাগানো একটি বোলেরো গাড়ি। এবার লোকসভা নির্বাচনের সময় আসা রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান বিষয়টি প্রথম খেয়াল করেন। তারপরেই চর্চার বিষয় হয় দুধ সাদা রঙের এই চারচাকা গাড়িটি।
যে গাড়ি নিয়ে এত হইচই, সেই গাড়িটি ব্যবহার হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসে। গাড়িটির সামনে ও পিছনে লাগানো রয়েছে নম্বর প্লেট। গাড়িটির সামনের দুই জায়গায় এবং পিছনে লাল রঙে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে Government Of West Bengal। গাড়িটির ড্রাইভার অনিল মুর্মু সরকারি কর্মী। বিডিও অফিসের সরকারি কর্মচারীরা ওই গাড়িতে চেপেই প্রশাসনিক কাজকর্ম করেন।
জানা গেছে, এক সময়ে জামালপুর বিডিও অফিসের জন্য বরাদ্দ ছিল দু'টি জিপ গাড়ি। একটি জিপ গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়ায় অনেকদিন আগেই সেটিকে বাতিল করা হয়। জিপ গাড়িটির অস্তিত্ব এখন শুধুমাত্র বিডিও অফিসের পুরনো নথিতেই আছে। অন্য বিকল জিপ গাড়িটি এখন ভোল বদলে কর্মরত। বর্ধমান জেলা ভাগের আগে সরকারি অর্থ খরচ করেই ওই জিপ গাড়িটির রূপ বদলে দিয়ে সেটিকে বোলেরো গাড়ির রূপ দেওয়া হয়। তবে নম্বর প্লেটে বদল আসেনি কোনও।
গাড়িটির চালক অনিল মুর্মু জানান, WGJ 2585 নম্বরের গাড়িটি আসলে জিপ গাড়ি। আউসগ্রাম ১ নম্বর ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করে গাড়িটি সেখান থেকে জামালপুর বিডিও অফিসে আনা হয়েছিল। তারপর গাড়িটি গ্যারেজে পাঠিয়ে তার ইঞ্জিন সহ সবকিছু বদলে একে ডিজেল চালিত ’বোলেরো’ গাড়ির রূপ দেওয়া হয়। গাড়ির মডেল পাল্টানো হলেও পুরনো নম্বর প্লেটই লাগানো হয়।
অভিযোগ, গাড়িটি সম্পর্কে কোন তথ্য পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে না। অনিল মুর্মু বলেন,গাড়িটির ইঞ্জিন, চেসিস এবং মডেল বদলে দেওয়া হয়েছে বলেই হয়তো পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে গাড়িটির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে জামালপুরের বিডিও পার্থসারথি দে বলেন, “আমি ব্লকের দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই গাড়িটি চলছে। গাড়িটির বিষয়ে আমি সবিস্তারে খোঁজ খবর নেব।"
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলার প্রশাসনিক মহলে। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ এবং সিপিএমের জেলা নেত্রী ভারতী ঘোষাল একে জালিয়াতি বলে দাবি করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছেন। এমন গাড়ির কথা জেনে স্তম্ভিত আইনজ্ঞরাও। তাঁদের কথায়, "এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ হয়েছে। দেশের নতুন পরিবহণ আইন অনুযায়ী এমন কাজের জন্য কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে। এমন গাড়ির দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে মৃতের পরিজনের অ্যাক্সিডেন্টাল বেনিফিট পাওয়াও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে।
আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (পূর্ব বর্ধমান) গোবিন্দ নন্দীও স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “এই নম্বরের গাড়ির কোনও অস্তিত্বই পরিবহণ দফতরের নথিতে নেই। এমন নম্বরের গাড়ি রোডে চলতেই পারে না। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। যদি কেউ এমন গাড়ি রোডে চালায় তবে আইনমাফিক পদক্ষেপ করা হবে।"