শেষ আপডেট: 22nd September 2020 12:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উনিশের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর বড় অভিযোগ ছিল, বাংলায় ‘আয়ুষ্মান ভারত’ ও প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান প্রকল্পের বাস্তবায়ণ করতে দিচ্ছে না নবান্ন। সংকীর্ণ রাজনীতির জন্য গরিব মানুষকে সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী কেন, এখনও এ ব্যাপারে প্রতি পদে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিচ্ছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় থেকে শুরু করে দিলীপ ঘোষরা। পরিস্থিতি যখন এমনই তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষবর্ধন ও কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে চিঠি লিখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দুই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, বাংলায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প ও কৃষক সম্মান প্রকল্পের বাস্তবায়ণে তিনি রাজি। কিন্তু আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের জন্য সমগ্র খরচ কেন্দ্রকে বহন করতে হবে। এবং দুই, ওই অর্থ রাজ্য সরকারের মাধ্যমে খরচ করতে হবে কেন্দ্রকে। একই ভাবে তাঁর দাবি, কৃষক সম্মান প্রকল্পের রূপায়ণেও রাজ্য রাজি। তবে কৃষকদের প্রাপ্য সেই টাকা রাজ্য সরকারকে দিতে হবে কেন্দ্রকে। তার পর রাজ্য সরকার তা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেবে। এখানে বলে রাখা ভাল, কেন্দ্রের অনুদানে চলা এই ধরনের প্রকল্প বর্তমানে ডাইরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফারের মাধ্যমে রূপায়িত হয়। অর্থাৎ উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রের সরকার। এই ব্যবস্থা যে মোদী জমানায় শুরু হয়েছে তা নয়। মনমোহন সিংহ সরকারই এর মূল প্রবক্তা ছিল। কারণ, দেখা গিয়েছে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা না পাঠালে অনিয়ম হওয়ার ঝুঁকি থাকছে। দুর্নীতি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই শর্ত নিয়ে তাই পাল্টা সমালোচনা করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, উমফানের ত্রাণের জন্য ১০০০ কোটি টাকা রাজ্যকে দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই টাকা তৃণমূলের নীচের তলার লোকজন কীভাবে লুটেপুটে নিয়েছে বাংলার মানুষ দেখেছে। রেশনের চাল নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে। ভোটের আগে টাকা লুঠের জন্যই এখন এই শর্ত চাপাতে চাইছে। আসলে গরিব মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই বাংলার সরকারের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলায় স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প ইতিমধ্যেই শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ওই প্রকল্প খাতে রাজ্যে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা দেওয়া হয়। পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা চিকিৎসার জন্য খরচের ব্যবস্থা রয়েছে এই প্রকল্প। আবার কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় সব চাষি ও ভাগচাষিকে বছরে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। রাজ্যের ৭৩ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধা পান। এ ব্যাপারে শুধু বিজেপি নয়, বাম কংগ্রেসের নেতাদেরও বক্তব্য রয়েছে। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এদিন বলেন, তথ্যের অধিকার আইনে সরকার জানাক কারা কারা এই সুবিধা পাচ্ছে। সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা হোক। বিরোধীদের বক্তব্য, বাংলায় যত লোককে রাজ্য সরকার চাকরি দেওয়ার বা কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে, যত মানুষকে ভাতা দেওয়ার কথা বলে তা যদি হতো তা হলে পশ্চিমবঙ্গ স্বর্গরাজ্য হয়ে যেত। ঘটনাচক্রে এদিন রাজ্যপালও কিষাণ সম্মান প্রকল্প নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, কুমিরের কান্না কাঁদলে কৃষকদের দুর্দশা ঘুচবে না। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের জন্যই প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির ৮৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ৭০ লক্ষ কৃষক। নাহলে এতদিনে প্রত্যেক কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১২ হাজার টাকা করে জমা পড়ত। এদিন রাজ্যপাল তিনটি টুইট করেছেন। প্রথম টুইটে অ্যাটাচ করেছেন একটি চিঠি। তাতে ডিয়ার চিফ মিনিস্টার বলে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের গড়িমসি ও অকর্মণ্যতার জন্য ৭০ লক্ষ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই কঠিন সময়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির সুবিধা পাননি। রাজ্য সরকার যদি যথাসময়ে উদ্যোগ নিত, তাহলে কৃষকদের জন্য আসত ৮৪ হাজার কোটি টাকা। প্রত্যেক কৃষক তা থেকে ১২ হাজার টাকা করে পেতেন। পরে রাজ্যপাল বলেন, এই প্রকল্পের পুরো খরচ বহন করে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে গেলে রাজ্য সরকারের ওপরে বাড়তি ব্যয়ভার চাপত না। এই প্রকল্পের ব্যাপারে গড়িমসি করার কোনও কারণই থাকতে পারে না। কেন্দ্রকে দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর ওই চিঠি দেখে আবার অনেকে মনে করছেন, রাজ্য সরকারের কোষাগারে টান পড়েছে। প্রকল্পের খরচ বহন করতে পারছে না। তাই হয়তো কেন্দ্রের প্রকল্প বাস্তবায়ণের কথা বলছে।