শেষ আপডেট: 3 December 2023 23:30
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখ দেখিয়ে সব সময়েই যে রাজ্যের ভোটে জেতা গিয়েছে এমন নয়। অতীতে পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, বিহার, দিল্লি, হিমাচল বা পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে ডাহা হেরেছে বিজেপি। আবার উনিশের লোকসভা ভোটের ঠিক আগে মোদীর নেতৃত্বে এই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগড়— তিনটি রাজ্যেই পরাস্ত হয়েছিল গেরুয়া দল। সেই ভোটকে তখন কোনওভাবেই লোকসভার সেমিফাইনাল মানতে চাননি অমিত শাহরা। এও মানতে চাননি, সেই জনাদেশ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিও জনাদেশ ছিল। বরং অমিত মালব্যরা টুইটে যুক্তির ঝড় তুলেছিলেন যে, রাজ্যের ভোট আর লোকসভা ভোট এক নয়। স্রেফ স্থানীয় কারণে তিন রাজ্যে হেরেছে বিজেপি।
কিন্তু রবিবার তিন রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের পরই দলের সদর দফতরে গিয়ে বিজয় উৎসবে অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর জয়ের পালক নিজের মুকুটে যেন সুন্দর করে গুঁজে নিলেন তিনি। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, “এই জয় বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে জয়, এই জয় আত্মনির্ভরতার সঙ্কল্পের উদ্দেশে জয়”। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চাইলেন, তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিজেপির এই জয় শুধু স্থানীয় কারণে হয়নি, কেন্দ্রে তাঁর সরকারের নীতির সার্বিক প্রভাবেই জিতেছে দল।
বর্তমান সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এমনটা সম্ভবত শুধু নরেন্দ্র মোদীই পারেন। আর কেউ না। এমন নয় যে নরেন্দ্র মোদী এদিন খুব ভুল কাজ করেছেন। কারণ, রাজনীতি বরাবরই ধারণা তৈরির খেলা। যে যত নিপুণ ধারণার জাল বুনতে পারবেন, জয়ের সম্ভাবনা তারই বেশি। লোকসভা ভোট আসন্ন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে এদিনের জয়কে তাঁর এবং তাঁর সরকারের জয় হিসাবে তুলে ধরতে চাইবেন, সেই দেওয়াল লিখন স্পষ্টই ছিল। হয়েছেও তাই। এবং ঘটনা হল, এটা মোদীর কৌশল জেনেও এ ব্যাপারে পাল্টা মুখ খোলার ঝুঁকি নেননি কেউই। বা বিক্ষিপ্ত ভাবে সেই চেষ্টা কেউ করলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ, ভোটে যো জিতা ওহি সিকন্দর। এই বিপুল জয়ের কাছে এখন অন্তত কিছুদিন কোনও যুক্তিই খাটবে না।
তাই কালক্ষেপ না করে রবিবার সন্ধে থেকেই লোকসভা ভোটের আবহ সঙ্গীত রচনা শুরু করে দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমাকে একজন বললেন, আজকের জয়ের হ্যাট্রিক চব্বিশের হ্যাট্রিকেরও গ্যারান্টি দিয়ে দিল।”
বিজেপির এই জয়ের পর বিরোধীরা যে এককাট্টা থাকতে চাইবেন, হয়তো সেটাও এদিন আন্দাজ করতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই এদিন জয়ের পরই ইন্ডিয়া জোটের উদ্দেশে তীব্র সমালোচনা করেছেন। মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, ওই জোট হল পরিবারতান্ত্রিক, দুর্নীতিপরায়ণদের জোট। তাঁর কথায়, “এই জয় ঘামান্ডিয়া জোটের শরিকদের উদ্দেশেও বার্তা। মানুষ পরিবারবাদ, দুর্নীতি ও তুষ্টিকরণের বিরুদ্ধে মত দিয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে অভিযান চালাচ্ছে সরকার, এই জয় সেই অভিযানের প্রতি মানুষের সমর্থনই জানান দিচ্ছে।”
লোকসভা ভোটের দিকে গত কয়েক মাস ধরে ওবিসি-রাজনীতিতে শান দিচ্ছিলেন রাহুল গান্ধী। এদিন কংগ্রেসের সেই কৌশলও ভেস্তে দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, জাতের নামে অনেকেই দেশকে ভাগ করতে চাইছেন। কিন্তু এদিনের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে, জাতপাতের রাজনীতি এখন অতীত। দেশে এখন চারটি জাতই রয়েছে। নারীশক্তি, যুব শক্তি, কৃষক এবং গরিব। ওবিসি, জনজাতি সবাই এর মধ্যেই পড়েন।
চুম্বকে তিন রাজ্যের ভোট সাফল্যকে পুঁজি করে আগামী দিনে বিজেপি কোন মন্ত্র নিয়ে প্রচারে যাবে এদিন তার রূপরেখা বেঁধে দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিজেপিকে ঠেকানো বিরোধীদের সামনে সত্যিই এখন বড় কঠিন চ্যালেঞ্জ।