শেষ আপডেট: 21st July 2024 21:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রবিবার একুশে জুলাইয়ের সভা থেকে বাংলাদেশের চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশে যদি কেউ (ভারতীয়) আটকে থাকেন, আমরা তাঁদের ফেরাবার ব্যবস্থা করব। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারি না। ওটা যা বলার ভারত সরকার বলবে। আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি, বিপদে পড়ে কেউ যদি আমাদের দরজায় কড়া নাড়ে, আমরা তাঁদের পাশে থাকব। এটা আমার কথা নয়। এটায় রাষ্ট্রসংঘের কনভেনশনের প্রস্তাব আছে। যেখানে বলা আছে, বিপদে পড়ে কেউ আশ্রয় চাইলে তাঁকে আশ্রয় দিতে হবে।'
মনে করা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী ১৯৫১ সালে গৃহীত রাষ্ট্রসংঘের রিফিউজি কনভেনশনের প্রস্তাব এবং ১৯৬১ সালের প্রোটকলের কথা বলতে চেয়েছেন। তাতে 'রিফিউজি'র সংজ্ঞা এবং তাদের প্রতি অন্য দেশের করণীয় সম্পর্কে বলা আছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি কোনও দেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে অন্য একটি দেশে আশ্রয় চাইলে কোনও অবস্থাতেই তাঁকে তাঁর আগের দেশে জোর করে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। এই আন্তর্জাতিক আইনের কথাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, মনে করছেন কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের একাংশ।
ঘটনা হল, রিফিউজি সংক্রান্ত ওই দুই আন্তর্জাতিক ঘোষণার স্বাক্ষরকারী দেশ নয় ভারত। যে কারণে আন্তজার্তিক দূনিয়া বারে বারে আর্জি জানানো সত্বেও ভারত সরকার মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়নি। এ দেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হয়।
কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের একাংশের মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হয়েছে, বাংলাদেশে সেনা-পুলিশের ক্র্যাকডাউনের সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। সেনা-পুলিশ অভিযান শুরু করলে বহু মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপারে চলে আসতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগাম জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এমন লোকেদের আশ্রয় দেবেন। অবশ্য রবিবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট আগের কোটা বাতিল করে নতুন মাপকাঠি ঠিক করে দেওয়ার পর আন্দোলনে রাশ পড়বে বলে অনেকে আশা করছেন।
অনেকেই মনে করছেন, রবিবারের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে বাংলাদেশের মানুষকে ইতিবাচক বার্তা দিতে চেয়েছেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার তথা নরেন্দ্র মোদীকেও চাপে রাখলেন। তিস্তার জল দিতে রাজি না হওয়ায় বাংলাদেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার আছে। ওই জলচুক্তি না হওয়ার দায় কেন্দ্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন। আবার, মমতাকে অন্ধকারে রেখে জল নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দিল্লি একতরফা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অপারে চলতি অচলাবস্থার সময় বাংলার দরজা খোলা রাখার কথা বলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা যাবে, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ওপার বাংলার ঘটনা নিয়ে এপারের সমাজ মাধ্যমে শোক, আবেগের বন্যা বইছে। মমতার কথা রাজ্যের মানুষের কাছেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে বলে মনে করছে নানা মহল। কেন্দ্র রাজি না হলে বিদেশি নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়া রাজ্যের পক্ষে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক বাধা রয়েছে। যদিও সেই বাধা উপেক্ষা করেই মিজোরাম সরকার মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত জো জনগোষ্ঠীর বেশ কয়েক হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। ওই রাজ্যের একাধিক এনজিও তাদের সাহায্য করে থাকে। আবার বিজেপি শাসিত মণিপুরে উল্টে চিত্র৷ সেখানে মিয়ানমার থেকে আসা লোকজনকে রাজ্য সরকার জেলে পুরে দিয়েছে।
সত্যিই বাংলাদেশ থেকে সে দেশের মানুষ এপারে চলে আসতে চাইলে মোদী সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেন্দ্র সায় না দিলে বাংলাদেশের মানুষ অন্তত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলতে পারবেন না। রবিবার ধর্মতলায় তৃণমূলের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, 'আমি একটাই কথা বলব। বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেন কোনও প্ররোচণাতে না যাই। আমাদের সহমর্মিতা আছে। আমাদের দুঃখ আছে। কিন্তু এর বেশি কিছু বলতে পারি না।'