নোভাক জোকোভিচের কাছে হেরে সিঙ্গলসে পদকের আশা শেষ নাদালের।
শেষ আপডেট: 29th July 2024 19:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রোলাঁ গারোর গ্যালারির ফার্স্ট টিয়ারের গায়ে বড় বড় করে লেখা, 'ভিক্ট্রি বিলংস টু দ্য মোস্ট টেনাসিয়াস।'
'টেনাসিয়াস' শব্দটা কি রাফায়েল নাদালের জন্য একটু অপর্যাপ্ত হয়ে যায়? ডান পায়ের থাইতে পুরু করে ব্যান্ডেজের আস্তরণ বাঁধা। চোট একেবারে দুরমুশ করে রেখেছে তাঁকে। প্রতিদিন লড়তে হচ্ছে নিজের সঙ্গে। ফরাসি ওপেনের যে সাম্রাজ্য তিনি দীর্ঘ এক যুগ শাসন করেছেন, সেই মাঠেই প্রথম সেটে কেমন ছন্নছাড়া দেখাল তাঁকে। একের পর এক আনফোর্সড করলেন। কার্যত এঁটেই উঠতে পারলেন না নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে।
কিন্তু দ্বিতীয় সেটেই যেন কিংবদন্তীর কামব্যাক! মাত্র কুড়ি মিনিটেই রাফায়েল নাদাল বোঝালেন, কেন এই মাঠ তাঁর নাম ছাড়া অভাবনীয়!
অলিম্পিকের সম্ভবত শ্রেষ্ঠ দ্বৈরথ ছিল আজ। রোলাঁ গারোর লালমাটিতে আজ ৬০-তম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলেন নাদাল-জোকোভিচ। এককালে যে মহারণ উইম্বলডন থেকে ফরাসি ওপেন রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করাত দর্শকদের, আজ সেই লড়াইয়ের আশাতেই ফিলিপ শ্যাত্রিয়েঁ কোর্টে ভিড় উপচে পড়েছিল। গত দু'দিন আকাশের মুখ ভার ছিল প্যারিসে। আজ একেবারে খটখটে রোদ। কার্যত তিল ধারণের জায়গা ছিল না সুবিশাল এই টেনিস-ময়দানে।
ভারতে যে সম্প্রচারকারী ওয়েবসাইটে লাইভ স্ট্রিমিং দেখা গেল, তাতে সন্ধ্যে ছ'টা নাগাদ দেখা যাচ্ছে, ১.৪ কোটি মানুষ শুধু ভারতেই ম্যাচটা দেখছেন। দ্বিতীয় সেটে নাদাল কামব্যাক করতেই ঘন্টাখানেক পরে নাগাদ দেখা যায়, দর্শক পৌঁছে গিয়েছে ১.৭ কোটিতে। বাইশটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের চোদ্দটিই এই ফরাসি ওপেনে জিতেছেন নাদাল। রোলাঁ গারোর কোর্ট তাঁর নিজস্ব রাজত্ব। এদিকে চব্বিশটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেও, এখনও অবধি অলিম্পিক সোনার পদক অধরা জোকোভিচের। বেজিং-এ তাঁকে হারিয়েই সোনা জিতেছিলেন নাদাল।
প্রথম সেটে একেবারে মেজাজে ছিলেন সার্বিয়ার মহাতারকা। ৬-১ উড়িয়ে দিয়েছেন নাদালকে। একবারের জন্যও মনে হয়নি, কোনও অস্বস্তিতে আছেন জোকার। যদিও জোকোভিচেরও বাঁ পায়ে ছিল ব্যান্ডেজ। সবেমাত্র মে মাসের ফরাসি ওপেনের মাঝপথে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন পায়ে। ফিরে এসেছেন তারপর, উইম্বলডনে। প্রায় অতিমানবীয় পারফর্ম করে পৌঁছেছেন ফাইনালে। শেষে অবশ্য কার্লোস আলকারাজের কাছে থামতে হয় জোকারকে। কিন্তু দ্বিতীয় সেটে গিয়ে নাদাল বোঝাতে শুরু করেন, আলকারাজের মত তিনিও আদতে স্পেনীয়। রোলাঁ গারোর মাঠে তাঁর সাম্রাজ্য তিনি বিনা যুদ্ধে ছাড়বেন না।
দুই ব্রেক পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় সেটে পাল্লা সমান করে দেন নাদাল। ৪-০ পিছিয়ে থেকে ৪-৪ করেন তিনি। কয়েকটা এমন শট খেললেন, মনে হল, সেই পুরনো নাদালের ঝলক দেখছি। তিনি 'অ্যাডভান্টেজ' পেতেই উত্তাল হয়ে উঠছে গ্যালারি। স্পেনের পতাকার চাইতেও যেন নাদাল-ভক্তে কানায় কানায় ভরে ছিল ফিলিপ শ্যাত্রিয়েঁ কোর্ট। কিন্তু তাতেও সার্বিয়ার শৌর্যকে শেষ অবধি আটকাতে পারেননি। ৬-১, ৬-৪ স্কোরে নাদালকে হারিয়ে শেষ হাসি হাসলেন নোভাক জোকোভিচ। চলে গেলেন পরের রাউন্ডে। জিইয়ে রাখলেন নিজের অলিম্পিক সিঙ্গলসে সোনা জেতার স্বপ্ন।