ঋদ্ধিমান সাহা
শেষ আপডেট: 29th January 2025 16:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শিলিগুড়ির গলিঘুঁজি থেকে কলকাতার রাজপথ। তারপর সেই সড়ক ধরে জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম। ভারতের প্রাক্তন উইকেট কিপার ঋদ্ধিমান সাহার উত্থানের কাহিনি কোনও রূপকথার রাংতায় মোড়া নয়। তা কঠিন বাস্তবের জমির উপর দাঁড়িয়ে গাঁথা সমুন্নত ইমারত। তাই বাংলার হয়ে সম্ভবত শেষ রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নামার আগে, ক্রিকেটকে চিরবিদায় জানানোর প্রাক-মুহূর্তে যে ঋদ্ধিমান ধরা দেন, তাঁর বক্তব্যে মিশে থাকে আবেগহীন সত্যবচন।
অবসরের পর কী ভাবছেন? নিজের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি রয়েছে যাঁর, তিনি তো চাইবেনই কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে। কিন্তু ঋদ্ধিমান জানালেন, ‘আমি এর জন্য প্রস্তুত নই। সেই কারণেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচের প্রস্তাব এলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছি। জানতাম ওটা সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু পুরোপুরি প্রস্তুত না হয়ে আমি কোনও কাজ করি না। এটা আজকের উপলব্ধি নয়, চিরকালের শিক্ষা। একই কারণে আমি ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ কিংবা ধারাভাষ্যকার হিসেবেও নিজেকে দেখতে চাই না।‘
শেষ ম্যাচ খেলে ব্যাট তুলে রাখার পর ঋদ্ধিমান বিশুদ্ধ অবসর যাপনের আনন্দ নিতে চাইছেন। টিভিতে ফর্মুলা ওয়ান দেখা, সপরিবারে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বেড়ানোই আপাতত তাঁর উইশলিস্টে রয়েছে।
আঠারো বছর আগে বাংলার হয়ে অভিষেক। তারপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজারের উপর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেরোশোর উপর রান, টেস্ট-ওয়ান ডে মিলিয়ে একশোর বেশি ক্যাচ—ঋদ্ধিমান সাহার সাফল্য যথেষ্ট সমীহ করার মতো। তবু এতকিছুর পরে হাল্কা হলেও খেদ ঝরে পড়েছে তাঁর গলায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ৪৫-এর উপর হলে যেন সবদিক দিয়ে তৃপ্তি মিলত। স্পষ্ট জানালেন শিলিগুড়ির ‘পাপালি’।
কেরিয়ারটা কি তবে আরেকটু সাজানো-গোছানো হতে পারত? চোট-আঘাতের জেরে অধরা রয়ে গেল কিছু স্বপ্ন? মহেন্দ্র সিং ধোনির ছায়ায় ঢাকা পড়লেন ঋদ্ধি? ব্যাটিংয়ে অতিরিক্ত পক্ষপাত তাঁর কিপারসত্তাকে আড়ালে ঠেলে দিল?
এইসমস্ত প্রশ্নের সামনেও একইরকম স্পষ্টবাদী ঋদ্ধিমান। জানালেন, ‘কখনও কখনও মনে হয়েছে ঠিকই, আমি যদি ব্যক্তিগত চাহিদাকে দলের ঊর্ধ্ব রাখতাম তাহলে হয়তো আমার পরিসংখ্যান আরও ঝলমলে হতে পারত। কিন্তু আমার কাছে দল সব সময় সবার আগে। আত্মপ্রচারকে আমি তেমন গুরুত্ব দিই না।‘
তাই বলে কি অভিমান এতটুকু নেই? ২০২২ সালে বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কারণ কি স্রেফ অভিমান নয়? অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ছাড়ার স্টাইলে এবার যেন কিছুটা রক্ষণাত্মক মেজাজেই জবাব দিলেন ঋদ্ধি—‘পুরোনো কথা মনে রাখতে চাই না। তবে দাদা (সৌরভ গাঙ্গুলি) আর আমার স্ত্রী রোমি পাশে না থাকলে হয়তো আমি বাংলায় ফিরতাম না। দাদার সঙ্গে লম্বা কথোপকথনই আমায় ফিরে আসতে বাধ্য করেছে।‘