
মহিলা ফুটবলের উন্মাদনায় বুঁদ হবে ইউরোপ, নারী দিবসে শপথ উয়েফার
শুধু প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙা নয়। খেলার মাঠে পুরুষ-মহিলাদের মাঝে তুলে দেওয়া রক্ষণশীলতার প্রাচীর ভাঙাটাও আমাদের কর্তব্য।

ইনসাইড কাট করে, কোমরের মোচড়ে চারজনকেই মাটি ধরিয়ে বাঁ পায়ে সেকেন্ড পোস্টে বলটা রেখেই ভারসাম্য রাখতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলেন ওই ফুটবলারটি। উঠতে উঠতে তাকিয়ে দেখলেন বলটা জড়িয়ে গেছে জালে। চারিদিক থেকে ছুটে আসছেন সতীর্থরা। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা মুখ গুঁজেছেন ঘাসে। আর গোল দাতা জার্সি খুলে ছুটছেন উত্তাল গ্যালারির উত্তাপ নিতে।
ধরা যাক এই ফুটবলারটির নাম লিওনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বা কিলিয়ান এমবাপে। কিন্তু এই সবটা করার পর জার্সি খোলার ঘটনাটা যদি ঘটে কোনও মহিলা ফুটবল ম্যাচে?
১৯৯৯ সালের ১৫ জুলাই। চমকে গিয়েছিল গোটা দুনিয়া। মহিলা ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে পেনাল্টি থেকে চিনের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোল করার পর জার্সি খুলে অন্তর্বাস পরে সারা মাঠ ছুটেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহিলা ফুটবলার ব্র্যান্ডি কাস্টেন। সমালোচনা হয়েছিল বিস্তর। আবার সমর্থনও ছিল অনেক। সারা পৃথিবীর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ছবি আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।
ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে টিমবাসে ওঠার সময়ে ব্র্যান্ডিকে জার্সি খোলার প্রসঙ্গ জিজ্ঞেস করেছিলেন একটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের ক্রীড়া সাংবাদিক। ব্র্যান্ডি জবাব দিয়েছিলেন, এমন প্রশ্ন আপনি কখনও দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনাকে করেছেন?
পরবর্তী সময়ে একাধিক সাক্ষাৎকারে ওই মার্কিন মহিলা ফুটবলার বলেছিলেন, “শুধু প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙা নয়। খেলার মাঠে পুরুষ-মহিলাদের মাঝে তুলে দেওয়া রক্ষণশীলতার প্রাচীর ভাঙাটাও আমাদের কর্তব্য। আমি সেটাই করেছিলাম।”
ব্র্যান্ডির বয়স এখন ৫১। আর ওই ঘটনার প্রায় একুশ বছর পার করার পর ২০২০ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে উয়েফার শপথ– ২০২১ সালের মধ্যে মহিলা ফুটবলকে ছড়িয়ে দিতে হবে ইউরোপের স্কুল, কলেজ, শহর, গ্রামে। আর তা করতে বিশেষ কর্মসূচি নিচ্ছে ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা।
উয়েফার মহিলা ফুটবলের কর্ণধার এখন নাদিন কেসলার। জার্মানির মহিলাদলের জার্সি গায়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলার পর এখন তিনি ফুটবল প্রশাসনে। সম্প্রতি তিনিই জানিয়েছেন উয়েফার পরিকল্পনার কথা।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবলকে বিষয় করার প্রস্তাব দিচ্ছে উয়েফা। ক্লাবগুলির বার্ষিক বাজেটের অন্তত এক চতুর্থাংশ খরচ করার ক্ষেত্রে আনা হচ্ছে কড়া আইন। উয়েফার ভাবনা, শুধু মাঠে মহিলাদের খেলার মধ্যেই এটা সীমাবদ্ধ থাকবে না। গ্যালারির দখলও যাতে তাঁদের হাতেই থাকে সেজন্যও বিশেষ ব্লুপ্রিন্ট আঁকছেন নাদিন কেসলাররা। এবছরের নারী দিবসে উয়েফার শপথ- একুশের ৮ মার্চের মধ্যেই মহিলা ফুটবলের উন্মাদনায় বুঁদ হবে সারা ইউরোপ।