শনিবার সামনে এসেছিল, টেস্ট থেকে অবসর নিতে পারেন বিরাট কোহলি। লাল বলের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন।
বিরাট কোহলি
শেষ আপডেট: 18 May 2025 11:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শনিবার সামনে এসেছিল, টেস্ট (Test Cricket) থেকে অবসর নিতে পারেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। লাল বলের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন। বোর্ডের কাছে একথা জানিয়েও দিয়েছেন।
৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে সেই জল্পনাই সত্যি হল। আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের অবসরের ঘোষণা (Virat Kohli Retirement) করলেন বিরাট। ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি লম্বা পোস্টে টেস্ট ক্রিকেটকে আলবিদার কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ’১৪ বছর আগে প্রথমবারের জন্য টেস্টের ব্যাগি ব্লু টুপি পরেছিলাম। কখনও ভাবিনি এই সফর এতটা লম্বা হতে চলেছে। এই জার্নি আমার পরীক্ষা নিয়েছে, আমায় গড়ে তুলেছে, জীবনের শিক্ষা দিয়েছে।‘
কতটা কঠিন ছিল এই ঘোষণা? তা খোলসা করতে গিয়ে কোহলি লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের এই ফর্ম্যাট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না। কিন্তু এটাই সঠিক বলে মনে হয়েছে। আমার যা কিছু ছিল সব দিয়ে দিয়েছি। এর প্রতিদানে যা পেয়েছি, কল্পনাও করিনি তা কোনও পাব বলে।‘
সবশেষে ধন্যবাদ জানানোর সুরে জুড়ে দিয়েছেন, ‘একরাশ কৃতজ্ঞতা নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। খেলার জন্য, যাঁদের সঙ্গে খেলেছি তাঁদের জন্য এবং যে সমস্ত অনুরাগী আমায় এতদিন উজ্জীবিত রেখেছেন তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি আমার টেস্ট কেরিয়ারের দিকে সব সময় হাসিমুখেই ফিরে তাকাব।‘
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় কোহলির। তিন বছর বাদে দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। এরপর দলকে ৬৮টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন (ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ)। হেরেছেন মাত্র ১৭টি ম্যাচ। জয়ের হার ৫৮.৮২%। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে কোহলিই সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। শেষ টেস্ট খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। বর্ডার-গাভাসকার ট্রফিতে একটি সেঞ্চুরি করলেও ছন্দে ছিলেন না কোহলি। যার জেরে ঘরে-বাইরে সমালোচনাও শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে বুধবার টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। এর দু’দিন বাদেই আচমকা জানা যায়, একই পথের পথিক হতে চাইছেন তাঁরই সতীর্থ, দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। রোহিতের মতো তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কিছু না জানালেও, সূত্রের খবর, দু’সপ্তাহ আগেই নাকি বোর্ডের কাছে নিজের অবসরের বিষয়টি সাফ করে দেন বিরাট। এহেন আচমকা সিদ্ধান্তে কার্যত দিশেহারা বিসিসিআইয়ের শীর্ষকর্তারা ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধও রাখেন।
এতদূর পর্যন্ত ঠিক থাকলেও কেন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি, আইপিএল নিয়ে জমতে থাকা অনিশ্চয়তার মেঘ এবং ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য দল ঘোষণার প্রাক্কালে এমন ‘ইচ্ছে’ বা ‘আর্জি’র কথা জানিয়েছেন কোহলি, সেই বিষয়ে অনুরাগী ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে জল্পনা বাড়তে শুরু করে।
এই বিষয়ে সরকারিভাবে কিছু বলা না হলেও, সূত্রের খবর, দিনকয়েক আগেই বিরাট নাকি বোর্ডের কাছে রোহিতের ছেড়ে রাখা আসনে বসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিসিসিআই সেই দাবি খারিজ করে দেয়। বিরাটকে মিডল অর্ডারের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে দেখতে চাইছেন নির্বাচকরা। টিমের অধিনায়কত্ব অপেক্ষাকৃত তরুণ কোনও সদস্যের হাতে তুলে দিতে ইচ্ছুক নির্বাচকদের একটা বড় অংশ। নেতৃত্বদখলের দৌড়ে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে শুভমান গিল। মোট কথা, আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজ থেকেই টিম ইন্ডিয়ার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে উঠে আসবে নতুন কোনও মুখ।
শুধু তাই নয়। ওই একই সূত্রের তরফে এও বলা হয়েছে, যেহেতু ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ক্যালেন্ডার শুরু হতে চলেছে, তাই অধিনায়ক ও দল হিসেবে তরুণ ব্রিগেডে আস্থা রাখতে চাইছেন গুরু গম্ভীরও। বিরাটকে ফের নেতৃত্বের কুর্সিতে বসালে বিষয়টা ‘সাময়িক সমাধানে’র মতো হত, ‘পাকাপাকি সুরাহা’ মিলত না। শুভমানের অধীনে একদম আনকোরা খেলোয়াড়দের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে এগতে চাইছেন গম্ভীর। তাই বিরাটের প্রস্তাবে ‘না’ করেছেন। আর এই কারণেই অসন্তুষ্ট কিং কোহলি টেস্ট ক্রিকেটকেই ‘গুডবাই’ জানাতে এতটা উদ্গ্রীব।
এই অনুমান কতটা ঠিক, আদৌ ঠিক কি না, তা নিয়ে তর্ক চললেও পুরোপুরি স্বেচ্ছায় যে ক্রিকেটের প্রিয়তম ফর্ম্যাটকে বিদায় জানালেন না বিরাট, তা জলের মতো পরিষ্কার।