ভিনেশ ফোগত
শেষ আপডেট: 7th August 2024 17:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১০০ গ্রাম, মাত্র ১০০ গ্রাম ওজনের জন্য অলিম্পিক্সের ফাইনাল থেকে ছিটকে গেছেন ভারতীয় কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগত। নিজের শরীরের সাধারণ ওজন ৫৩ কেজি হলেও, জোর করে ওজন কমিয়ে ৫০ কেজির ক্যাটেগরিতে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। খেলেওছিলেন সেমিফাইনাল পর্যন্ত। জিতেওছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না ফাইনালের দুয়ারে পৌঁছে। এই ওজনের জন্যই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যেতে হল তাঁকে।
তথ্য বলছে, ভিনেশ ফোগতের উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। এই উচ্চতায় সাধারণত ৫৫ গ্রামের আশপাশে থাকে মেয়েদের ওজন। খেলাধুলো করা যে সব মেয়েদের পেশির ওজন বেশি হয়, তাদের আরেকটু বেশিও হতে পারে। ভিনেশেরও তাই ছিল। ৫৬ থেকে ৫৭ কেজি ছিল তাঁর সাধারণ ওজন।
কিন্তু ভিনেশ খেলতেন রেসলিংয়ের ৫৩ কেজির ক্যাটেগরিতে। খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকা বা রেসলিং করা ব্যক্তিরা জানেন, ২-৩ কেজি ওজন কমিয়ে নির্দিষ্ট ক্যাটেগরিতে খেলতে নামাটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা স্পোর্টসের আঙিনায়। সামনে খেলা থাকলে সেটা সামনে রেখে নিয়মিত কড়া ডায়েট ও অনুশীলনে থাকেন প্রতিযোগিরা, নির্দিষ্ট সময়ের আগে কমিয়ে ফেলেন ২-৩ কেজি ওজন। খেলা হওয়া পর্যন্ত সে ওজন ধরে রাখেন, দরকারে আরও কড়া হন খেলার ঠিক আগের দু-এক দিন। জল খাওয়ার ওপরেও বসে মাপের কাঁটা। এই করে, খেলে, আবার সে ওজন রিকভার করেন তাঁরা। এমনটা হয়েই থাকে।
ভিনেশের ক্ষেত্রেও তাই হতো, ৫৬ কেজির ভিনেশ খেলতেন ৫৩ কেজিতে। কিন্তু এইবার প্যারিস অলিম্পিক্সে চ্যালেঞ্জটা আরও কড়া হয়ে গেল। ৫৩ কেজিতে খেলার সুযোগ পেলেন না তিনি, কারণ সেই ক্যাটেগরিতে নেমেছিলেন তাঁরই সহ-খেলোয়াড় অন্তিম পাঙ্গাল। তাই ভিনেশকে নামতে হল ৫০ কেজির ক্যাটেগরিতে। অর্থাৎ ৫০ কেজির মধ্যেই রাখতে হবে তাঁর শরীরের ওজন। এতটুকু বেশি হলেই ডিসকোয়ালিফায়েড, অলিম্পিক্সের নিয়ম অনুযায়ী।
সেমিফাইনাল পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে সে ওজন ধরে রেখেছিলেন ভিনেশ, যা করতে হয় তাই করেছিলেন। ওজনের পরীক্ষায় পাশ করেই সোমবার খেলেছিলেন সেমিফাইনাল। গোটা দেশকে বিস্মিত করে, হারিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে। প্রবেশ করেছিলেন ফাইনালের রিংয়ে।
কিন্তু বিধি বাম হল তার পরেই। আজ, বুধবার ম্যাচের আগে সকালে ওজন করাতে গেলে দেখা যায়, ভিনেশের ওজন ৫০ কেজি ১০০ গ্রাম। অর্থাৎ যত থাকতে হবে তার চেয়ে ১০০ গ্রাম বেশি। কিন্তু এই 'বেশি'টাও যে আসলে কতটা কম, তার উদাহরণ হল, মঙ্গলবার। তথ্য বলছে, গতকাল, মঙ্গলবারই সে সময়ে ভিনেশের ওজন ছিল ৫২ কেজি। অর্থাৎ, ম্যাচের পরে ২ কেজি বেড়ে গিয়েছিলেন তিনি। এমনটাও খুবই স্বাভাবিক। প্রবল চাপ নিয়ে খেলার পরে সামান্য রিল্যাক্স করলেই, একটু ভাল করে জল খেলেই শেষ মুহূর্তে জোর করে কমানো ওজন বেড়ে যেতে পারে আবার। এমনটাই হয়ে থাকে সাধারণত। তবে ভিনেশের এমনটা হওয়ার কথা ছিল না, যেহেতু সামনেই ফাইনাল তাঁর। ওজন ধরে রাখারই কথা ছিল। যে কোনও কারণেই হোক, তা হয়নি।
এর পরে মঙ্গলবার সারাদিন, সারারাত এই ওজন কমাতে প্রাণপাত পরিশ্রম করেন ভিনেশ। জল প্রায় খানইনি, খাবার তো দূরের কথা। একটানা স্কিপিং, সাইক্লিং, জগিং-এর মতো ঘামঝরানো কার্ডিও এক্সারসাইজ করতে থাকেন। ঝেড়ে ফেলতে থাকেন অতিরিক্ত যেটুকু ওজন আছে সেটুকুও। শেষ মুহূর্তে কেটে ফেলেন চুল। এমনকি শরীর থেকে রক্তও বার করে নেওয়া হয় তাঁর। ফলস্বরূপ, প্রবল ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু এত কষ্ট করেও থেকে গেল শেষ ১০০ গ্রামের কাঁটা। ওইটুকু আর কমেনি ম্যাচের আগে।
জানা যায়, আজ প্রতিযোগিতার আগে সকালবেলায় নিয়মমামাফিক ওজন নেওয়া হয় ভিনেশের। তখন যখনই দেখা যায়, তাঁর ওজন ৫০ কেজির থেকে ১০০ গ্রাম বেশি, তখনই ভিনেশ খানিকটা সময় চেয়ে নেন সেই ওজন ঝরানোর জন্য। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। 'ডিসকোয়ালিফায়েড' হয়ে যান তিনি।
অলিম্পিক্সের নিয়ম বলছে, মোট ১৮টি ওজনের ক্লাস আছে কুস্তিতে। গ্রিসো-রোমান, ছেলেদের ফ্রিস্টাইল ও মেয়েদের ফ্রিস্টাইলে ৬টি করে ভাগ আছে। প্রতিটা ভাগই ওজনের হিসেবে আলাদা। ছেলেদের ফ্রিস্টাইলে ৫৭, ৬৫, ৭৪, ৮৬, ৯৭ ও ১২৫ কেজির ক্যাটেগরি রয়েছে, মেয়েদের ফ্রিস্টাইল ৫০, ৫৩, ৫৭, ৬২, ৬৮, ৭৬ কেজির ক্যাটেগরি রয়েছে। গ্রিসো-রোমানে রয়েছে ৬০, ৬৭, ৭৭, ৮৭, ৯৭, ১৩০ কেজির ক্যাটেগরি। এর মধ্যে মেয়েদের সর্বনিম্ন ক্যাটেগরি ৫০ কেজিতে খেলতে নেমেছিলেন ভিনেশ।
শেষে পৌঁছেও শেষরক্ষা হল না।