খেলার মাঠে তামাক বন্ধ।
শেষ আপডেট: 19th July 2024 18:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিরাট কোহলি থেকে রোহিত শর্মা, কিংবা হার্দিক পান্ডিয়া থেকে সূর্যকুমার যাদবরা সাবধান। এতদিন ধরে তাঁরা নানা ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন করতেন। সেটি আর করা যাবে না এবার থেকে। কারণ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে কেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রক চিঠি দিয়ে এই নতুন নির্দেশিকা জানিয়ে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, অনেক আগেও এই নিয়ে শচীন তেন্ডুলকার ভারতের তারকা ক্রিকেটারদের তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে আপনারা রোলমডেল, তাই এই নিয়ে বিজ্ঞাপন করলে তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্তির শিকার হতে পারে।
শচীন এ-ও বলেছিলেন, তাঁর বাবা রমেশ তেন্ডুলকার তাঁকে এই বিষয়ে প্রথমেই বলে দিয়েছিলেন, তামাকজাত দ্রব্য ও অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপন যেন তিনি কোনওদিন না করেন। বাবার সেই নির্দেশ শচীন শুরু থেকে মেনে এসেছেন।
এবার সেটাই হয়ে গেল 'নিয়ম', যা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড মেনে চলতে বাধ্য হবে। কোনওরকম ফর্মেই কোনও তামাকজাত বস্তুর বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না খেলা দেখানোর সময়ে। সূত্রের খবর, তরুণ প্রজন্মের বড় অংশ খেলা দেখে, অনুপ্রাণিত হয়। তাঁদের এই ধরনের বিজ্ঞাপন থেকে দূরে রাখার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্র। তাই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে তামাক জাতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে বলছে তারা।
অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বিশিষ্ট সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট প্রফেসর ডক্টর শুভদীপ চক্রবর্তী (সার্জিক্যাল অঙ্কোলজি বিভাগের অ্যাকাডেমিক হেড এবং কনসালট্যান্ট) এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, "বেটার লেট দ্যান নেভার!" শুভদীপ মনে করেন, ক্যানসারের ক্ষেত্রে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্যের ভূমিকা অত্যন্ত নিবিড়। সারা দেশে নানা রকম ভাবে তামাক ব্যবহার হচ্ছে। সিগারেট তো বটেই, গুটখা, খৈনিও প্রভাব বিস্তার করেছে। এই সমস্ত কার্সিনোজেনিক টোব্যাকোর প্রভাবে যে ক্ষতি, তাতে সবার আগে আক্রান্ত হয় ফুসফুস। তার পরেই হেড অ্যান্ড নেক।
শুভদীপ চক্রবর্তীর কথায়, "সারা দেশ শুধু নয়, সারা বিশ্ব যে অসুখের সঙ্গে এত কঠিন লড়াই করছে, সেই অসুখের ঝুঁকি বাড়ানো যে কোনও কিছুকেই নিষিদ্ধ করা উচিত। আর আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা তার বদলে এই ধরনের জিনিসপত্র প্রোমোট করছে! এটা তো অন্যায়।"
তাঁর মতে, রুপোলি জগৎ হোক বা খেলার মাঠ, তারকাদের সাধারণ মানুষ অনুসরণ করে থাকেন। অনুকরণও করে থাকেন অনেক সময়ে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তাঁরা আইডল। তাই এটা তাঁদেরই দায়িত্ব, তাঁরা এমন কিছু প্রচার বা প্রসার করবেন না, যা থেকে প্রভাবিত হয়ে সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি হয়। অথচ সেটাই ঘটছে। তবে অবশেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে নড়ে বসেছে, এটাই ভাল ব্যাপার।
শুভদীপ চক্রবর্তী মনে করিয়ে দেন, "বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি মানুষ তামাকে আসক্ত। প্রতি বছর মৃত্যু হয় ৮০ লক্ষের বেশি। তাছাড়া পরোক্ষ ধূমপানে মৃত্যু প্রায় ১০ লক্ষ। ধূমপান ফুসফুসের চরম ক্ষতি করে। এই পরিস্থিতিতে তামাকের যে কোনও রকম ব্যবহার বিপজ্জনক। আর তা প্রচার করা আরও বিপজ্জনক।"
ডাক্তারবাবু বুঝিয়ে বলেন, "সবার ধারণা তামাকজাত দ্রব্য মানেই ধূমপান। তা নয়। আর তামাকে শুধু ফুসফুসে ক্যানসার হয়, তাও নয়। এতে ওরাল ক্যানসার থেকে শুরু করে গলার ক্যানসার, চেস্টের ক্যানসার, প্যানক্রিয়াসের ক্যানসার এমনকি রেক্টাল ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। আর যদি ধরেও নিই যে ক্যানসার হল না, তাহলে অসংখ্য ক্রনিক ডিজিজ হতে পারে। ইনফার্টিলিটি, স্ট্রোক, রক্তচাপ, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া।"
তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ডাক্তারবাবু বলছেন, "এটা একটা উদাহরণ তৈরি হল। এভাবেই সমস্ত স্তরের তারকাদের তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বয়কট করা উচিত। বরং তাঁদের বার্তা দেওয়া উচিত, ক্যানসারের মতো মারণ অসুখ কীভাবে বাড়াচ্ছে তামাক! তাহলে কিছুটা হলেও কমতে পারে তামাকের বিক্রি।"