শেষ আপডেট: 24th August 2021 15:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় প্রায়ই যে কোনও অনুষ্ঠানে বলে থাকেন, ভারতকে প্রথম বিদেশের মাঠে টেস্ট সিরিজ জয়ের সাহস দেখিয়েছিলেন অজিত ওয়াদেকার। ওই মুম্বইকরের জীবনাবসানের পরে সৌরভ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘অজিত স্যারের থেকে অনেককিছু শেখার ছিল, তিনি স্টাইলিশ ক্যাপ্টেন ছিলেন অনেকটা নবাব পতৌদির মতোই।’’ মাইক ব্রিয়ারলির ‘আর্ট অব ক্যাপ্টেন্সি’ বইটি একটা সময় সৌরভ প্রতিটি ট্যুরে ব্যাগে করে নিয়ে যেতেন। মাঝেমধ্যে বইটি পড়তেন হোটেলে একা থাকার সময়, বইটি পড়ে শিখতেন অধিনায়কত্বের নির্যাস। তেমনি ওয়াদেকার নিয়ে বলতে গিয়ে সৌরভের মতোই এ প্রজন্মের অনেক ক্রিকেটারই বলে থাকেন, ওয়াদেকার ছিলেন জাত নেতা। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতেন। ১৯৭১ সালের ইংল্যান্ড সফরে ২৪ অগাস্ট এই দিনেই ওয়াদেকারের অধিনায়কত্বে ভারত প্রথম বিদেশের মাঠে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল। আজ তার ৫০ বছর পূর্তি। গাভাসকার বারবার জানিয়েছেন, তাঁর আসল জন্ম হয়েছিল ১৯৭১ সালে, যেবার বিদেশের মাঠে টেস্ট সিরিজ জয় এককথায় কঠিনই ছিল। ক্রিকেট পরিসংখ্যানের পুরনো পাতা দেখলে মালুম হয়, বিদেশের মাটিতে ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট সিরিজ জয় অবশ্যই বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট বা সিরিজ জয় নয়। সেই বছরই ১০ মার্চ, পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করেছিল ভারত এবং সেই জয়ের সুবাদে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০’এ জিতে প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব গড়েছিল অজিত ওয়াদেকারের ছেলেরা। সেই সিরিজ শুধু জয়লাভের জন্য নয়, সুনীল গাভাসকারের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে আবির্ভাবে তিনটি সেঞ্চুরি ও একটি ডাবল সেঞ্চুরিসহ ৭৭৪ রান ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষ অধ্যায়ের রচনা করেছিল। গাভাসকার এসে গিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটে, সেই পদচারণা শোনা গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল ভারতের সপ্তম ইংল্যান্ড সফর। আগের ছয়টি সফরে ভারতীয় দলের সাফল্যের ভাঁড়ার ছিল কার্যত শূন্য। অন্যদিকে, ১৯৭০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা টেস্ট ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরে ইংল্যান্ড কার্যত হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর সেরা ক্রিকেট দল। ভারতীয় দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে ইংল্যান্ড টানা ২৪টি টেস্ট অপরাজিত ছিল। অপরাজিত থাকার সেই টেস্ট সংখ্যা ২৬-এ নিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড কারণ সফরকারী ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে লর্ডস এবং ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম দু’টি টেস্ট অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছিল। শেষ টেস্টের কথা বলতে গিয়ে এখনও সমান আবেগতাড়িত হন সানি, বিশ্বনাথরা। এমনকি বর্তমান ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রীও জানিয়েছেন, ‘‘আমার সেইসময় বয়স ছিল নয় বছর, কিন্তু এখনও সেই টেস্টের প্রতিটি বল মনে রয়েছে। ওই জয় ভারতীয় ক্রিকেটে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।’’ গাভাসকার স্মৃতি রোমন্থন করে জানিয়েছেন, ‘‘সেবার ইংল্যান্ডের মাঠে সবদিক থেকেই আমরা পিছিয়ে ছিলাম, কিন্তু খেলা শুরু হতে কেউ আর কিছু মনে রাখেনি।’’ গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথও বলেছেন, ‘‘আমাদের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেই সোনালি অতীত আমাদের হৃদয়কে পূর্ণ করে রাখবে।’’ বিরাট কোহলিরা ইংল্যান্ডে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামবেন। লর্ডস টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের পরে পুরো দল চাঙ্গা। কিন্তু বর্তমান দলের কোচ শাস্ত্রী নিশ্চয়ই ৫০ বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে নয়া প্রজন্মের ক্রিকেটারদের উদীপ্ত করবেন।