তাঁর কোচিংয়ে উঠে এসেছেন বহু মহানক্ষত্র, আখতার আলি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই ‘প্যাশনেট টাস্কমাস্টার’
দেবাশিস সেনগুপ্ত
কলকাতা তথা ভারতের ক্রীড়া জগতে আবার নক্ষত্র পতন। প্রয়াত হলেন প্রাক্তন টেনিস তারকা আর কোচ হিসেবে “প্যাশনেট টাস্কমাস্টার” আখতার আলি।
শনিবার গভীর রাতে কলকাতায় মেয়ের বাড়িতে ঘুমের মধ্যেই তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই
কলকাতা তথা ভারতের ক্রীড়া জগতে আবার নক্ষত্র পতন। প্রয়াত হলেন প্রাক্তন টেনিস তারকা আর কোচ হিসেবে “প্যাশনেট টাস্কমাস্টার” আখতার আলি।
শনিবার গভীর রাতে কলকাতায় মেয়ের বাড়িতে ঘুমের মধ্যেই তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই ডিমেনসিয়া, পার্কিনসন, মূত্রনালী ও কিডনির সমস্যা, এইসব বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে অ্যাকিউট ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন হওয়ার জন্য গত ২৯শে জানুয়ারি তাঁকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল।
সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে শনিবারই মেয়ে নীলোফার আলির বাড়িতে গিয়েছিলেন এই টেনিস কিংবদন্তী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। নীলোফার আলি ছাড়া তাঁর আর দুই উত্তরাধিকারীর নাম জিশান আলি এবং জারিন দেশাই।
তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৩৯ সালের ৫ই জুলাই। ১১ বছর বয়সেই তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসে প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন। তাঁর ব্যাকহ্যান্ড খেলায় ছিল ঈর্ষণীয় সৌন্দর্য্য। এবং ফোরহ্যান্ডেও তিনি ছিলেন সাবলীল। ১৯৫০ সাল থেকে দীর্ঘ সময় ভারতের হয়ে তিনি সিঙ্গলস এবং ডাবলস দু’ধরনের টেনিসেই খেলেছেন ডেভিস কাপে। খেলোয়াড় জীবনের অধিকাংশ সময়েই, বিশেষত ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল অবধি ডেভিস কাপে ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ডেভিস কাপের আসরে। টুর্নামেন্টে তাঁর জয় পরাজয়ের রেকর্ডও ছিল ঈর্ষা করার মতো। ডেভিসকাপে ৯-২ রেকর্ড রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। খেলোয়াড় জীবনে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, প্রেমজিৎ লাল, রমানাথন কৃষ্ণাণ, নরেশ কুমারের মত কিংবদন্তীদের সঙ্গে খেলেছিলেন তিনি। ১৯৫৫ সালে জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জুনিয়র উইম্বলডনের সেমিফাইনালে ওঠেন তিনি। নিজের সময়ে তিনি খেলেছিলেন টেনিস কোর্ট মাতিয়ে।
https://twitter.com/Vijay_Amritraj/status/1358264699851218945
টেনিস থেকে অবসরের পর ভারতের হয়ে টেনিস খেলোয়াড় তুলে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন আখতার। ভারতীয় টেনিসে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন অবসরোত্তর পর্বে।পরবর্তী ভারতীয় টেনিসের একঝাঁক তারকা, যেমন রমেশ কৃষ্ণন, বিজয় অমৃতরাজ, আনন্দ অমৃতরাজ, লিয়েন্ডার পেজ, সোমদেব দেববর্মণ, সানিয়া মির্জার কোচ কাম মেন্টরের কাজ করেছিলেন তিনি।
রমেশ কৃষ্ণন, বিজয় অমৃতরাজ, আনন্দ অমৃতরাজ, লিয়েন্ডার পেজ, সোমদেব দেববর্মণের কোচ ছিলেন আখতার আলি। সানিয়া মির্জাকেও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন একটা দীর্ঘ সময় যাবৎ। তাঁর পুত্র জিশান আলিও ভারতীয় টেনিসের প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। ডেভিস কাপে ভারতের কোচের দায়িত্ব বর্তমানে রয়েছে জিশানের কাঁধে।
https://twitter.com/SomdevD/status/1358261009710948352
২০০৮ সালের ডেভিড কাপে ভারতীয় দলের নন প্লেয়িং অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন আখতার আলি। ২০১৫ সালে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলার সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ২০০০ সালে অর্জুন পুরস্কারের সম্মান পান ভারতের এই কিংবদন্তী টেনিস খেলোয়াড়।
প্রাক্তন ডেভিস কাপারের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতীয় টেনিস মহলে। ট্যুইট করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিজয় অমৃতরাজ, সোমদেব দেববর্মনের মত প্রাক্তন তারকারা।
ভারতে টেনিসকে জনপ্রিয় করে তুলতে যাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন আখতার আলি। ভারতীয় টেনিস তাঁকে ভুলতে পারবে না কোনদিন। ভাল থাকবেন, আখতার সাহেব।