শুভ্র মুখোপাধ্যায়
তিনি বরাবরই কথা কম, কাজে বিশ্বাসী। বঙ্গ ক্রিকেটে যখন খেলেছেন, দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পরেও ক্রিকেটের সঙ্গ ছাড়তে পারেননি। সিএবি-তে একবার প্রশাসনে এসেছিলেন, তারপরে সরে যান। ফেরেন গত বছরই, সিএবি সচিব হিসে
তিনি বরাবরই কথা কম, কাজে বিশ্বাসী। বঙ্গ ক্রিকেটে যখন খেলেছেন, দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পরেও ক্রিকেটের সঙ্গ ছাড়তে পারেননি। সিএবি-তে একবার প্রশাসনে এসেছিলেন, তারপরে সরে যান। ফেরেন গত বছরই, সিএবি সচিব হিসেবে। তিনি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি সিএবি-র গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেই বলেছিলেন, ‘‘আমার কাছে এটা হটসিট নয়, সম্মানের একটা পদ, আমি চেষ্টা করব এই চেয়ারের মর্যাদা যাতে অক্ষুন্ন রাখতে পারি।’’
একসময় তাঁর বাবা প্রয়াত চন্ডী গঙ্গোপাধ্যায় সিএবি-র সচিব ছিলেন, তারপর তাঁর বিখ্যাত ভাই সৌরভও ওই পদে বসেছিলেন, বর্তমানে তিনি রয়েছেন। গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের প্রত্যেকেরই কাজের ধরন একই, ক্রিকেটের প্রতি অসম্ভব প্যাশন থেকে প্রশাসনেও তাঁদের সহজাত একটা দক্ষতা।
তারপরেও নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দিয়ে সেই পদকে অলঙ্কিত করে চলেছেন স্নেহাশিস। করোনা মহামারীর মতো এমন এক বিপর্যয়ের মধ্যেও বাংলা ক্রিকেটের দেখভাল করেছেন। নিজে সংক্রমিত হলেও মনের জোরে ফের ফিরে এসেছেন কাজের জায়গায়।
এরকম একটা পরিস্থিতিতে নিজের পারিবারিক ব্যবসার পাশে ক্রিকেট প্রশাসনের জন্যও সময় বের করে নিচ্ছেন। তার মধ্যেই আইপিএল নিয়ে আলোচনার পাশে, ঘরোয়া ক্রিকেটে কী করে জৈব সুরক্ষা বলয় রক্ষা করা যায়, সব প্রশ্নের জবাব দিলেন ‘দ্য ওয়াল’-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে।
প্রশ্ন: আইপিএল কেমন দেখছেন?স্নেহাশিস: খেলা তো ভালই হচ্ছে। আমার তো বেশ ভাল লাগছে। তবে একটাই বিষয়, মাঠে লোক নেই, গ্যালারি ফাঁকা। কিন্তু কিছু করারও নেই। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এই ভাবেই যা করার করতে হবে।
তারপরেও যেভাবে সব দলের ক্রিকেটাররা নিজেদের মোটিভেট করছে, এটা তারিফ করার মতো বিষয়। কারণ আমরা যেহেতু ক্রিকেটার, সেই কারণেই জানি মাঠে দর্শকই হল একটা ক্রীড়াবিদের অক্সিজেন। মাঠে লোক না থাকলে একটা তাগিদের সমস্যা হয়, এটা আমরা যখন খেলতাম, সেই থেকেই এটা হয়ে আসছে। কিন্তু এখনকার ক্রিকেটাররা পেশাদার পরিকাঠামোয় এগুলির সঙ্গেও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে, বেশ বোঝা যাচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি কী ভেবেছিলেন আরবে এত সুন্দরভাবে আইপিএল সংগঠন করা যাবে?স্নেহাশিস: অবশ্যই ভেবেছিলাম। বিসিসিআই ভাল কাজ করেছে। তারা টুর্নামেন্টের আগে সবকিছু খতিয়ে দেখে এসেছে। পুরো টুর্নামেন্টকে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে এনে সুন্দরভাবে টুর্নামেন্ট পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়, কিন্তু সেটি করে দেখিয়ে দিল ওই দেশ।
প্রশ্ন: চলতি আইপিএলে কাদের খেলা ভাল লাগছে? কাদের মনে ধরছে?স্নেহাশিস: দেখুন, মুষ্টিমেয় কয়েকজনের নাম এভাবে বলা যাবে না, সেটি ঠিক নয়। অনেকেই ভাল খেলছে। এবার দেখতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে শেষদিকে কারা কতটা নিজেদের ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছে, সেটিই আসল বিষয়। তবে এই আইপিএলে সব তরুণরা ভাল খেলছে, নিজেদের প্রমাণের চেষ্টা করছে, এটি সত্যিই ভাল দিক।
প্রশ্ন: বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি আগামী জানুয়ারি থেকে ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করতে চান। সেইসময় যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তা হলে কি খেলা শুরু করানো ঝুঁকির হবে না?স্নেহাশিস: আমার তো মনে হয় কোনও ঝুঁকিই হবে না। আমরা রঞ্জি ট্রফিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ে খেলা শুরু করে দিতে পারব। কেননা সদ্য সমাপ্ত আইলিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে এআইএফএফ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে দলগুলিকে নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করল।
আমাদেরও এসব খতিয়ে দেখে আত্মবিশ্বাস এসেছে যে, ফুটবলে করা গেলে ক্রিকেটেও হবে না কেন! তবে এই ব্যবস্থাকে সাফল্যমণ্ডিত করতে গেলে শুধু কর্তাদের নয়, সব দলের ক্রিকেটারদের, তাদের আধিকারিকদেরও সজাগ থাকতে হবে।
তাছাড়া রঞ্জি ট্রফি কোনওদিন বন্ধ হয়নি, এর একটা আলাদা সুনাম রয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও রঞ্জি ট্রফি বন্ধ হয়নি। এই করোনাভাইরাসের সময়টিও বিশ্বযুদ্ধের মতোই সামগ্রিক ভয়াবহতার রূপ নিয়েছে। তবুও আবারও বলছি, যদি আমরা সবাই মিলে সতর্ক থাকি, একে প্রতিহত করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
প্রশ্ন: আবার আইপিএলে ফিরি, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একটা অংশ বলতে শুরু করেছেন চলতি আসরে এম এস ধোনির মধ্যে সেই পুরনো ছন্দ উধাও। সবাই তাঁকে ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার কথা বলছে, আপনি কী বলবেন?স্নেহাশিস: দেখুন, কারা কী বলছেন, কারা কী জবাব দিচ্ছেন, আমি জানি না। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, এম এস ধোনির মতো কিংবদন্তিকে নিয়ে আলোচনা না হওয়াই ভাল। তিনিই জানেন কোন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাঁর সিদ্ধান্ত তাঁর ওপরই ছাড়া উচিত। ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের নিয়ে এমন কথা বলা উচিত নয়, আমি তো অন্তত বলব না।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে ভারত থেকে এবার আরব আমিরশাহীতে চলে গিয়েছে আইপিএল। সেই উন্মাদনা কি আমরা মিস করছি?স্নেহাশিস: আমার তো মনে হয় দর্শকহীন গ্যালারি ছাড়া আর কিছুই আমরা মিস করছি না। খেলার উৎকর্ষতা একইরকম রয়েছে। খেলার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেড়েছে। অনেক খেলাই সুপার ওভার পর্যন্ত যাচ্ছে। ২০০-২৫০ স্কোরও জয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। ক্রিকেটারদের মধ্যেও ভাল খেলার ইচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। আমি তো চেষ্টা করছি সব খেলা দেখার।
প্রশ্ন: আইপিএলে বিদেশি ও স্বদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সুন্দর একটা মেলবন্ধন রয়েছে। আপনার কি মনে হয় ঘরোয়া ক্রিকেটেও বিদেশীদের নিয়ে এসে খেলানো যায়? যাতে করে আন্তর্জাতিক একটা পরিবেশ তৈরি হয়?স্নেহাশিস: আমার তা মনে হয় না। কারণ ভারতে ক্রিকেটে অনেক প্রতিভা। তাদের ঠিক মতো যাতে দক্ষতার বিচ্ছুরণ ঘটে, সেদিকেই আমাদের নজর দিতে হবে। বিদেশি এলে প্রতিশ্রুতিমান কোনও প্রতিভা ঠিক মতো সুযোগ নাও পেতে পারে। আমার মনে হয়, ঘরোয়া ক্রিকেটই সবচেয়ে ভাল মঞ্চ প্রতিভা অন্বেষণের, এমনকি উত্থানেরও।