
জাতীয় বক্সার থেকে অটো ড্রাইভার, অভিমানে শিল্পপতি, অভিনেতার সাহায্যও প্রত্যাখ্যান আবিদের
কেউ কেউ যদি অটোতে বসে খেলা নিয়ে, বিশেষ করে অলিম্পিকে ভারতের পদকের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন, সেইসময় ওই প্রবীন মানুষটি এমন কিছু তথ্য তুলে ধরেন, সেইসময় মনে হয় তিনি বাকিদের থেকে আলাদা। কৌতূহলবশতঃ কোনও কোনও আরোহি প্রশ্ন করেন, ‘ভাইসাব আপ অলিম্পিয়ান হো’? তিনি মুচকি হাসেন, নীরবে হয়তো চোখের জলও ফেলেন।
নিজের আসল পরিচয় গোপন করেই দিন কাটিয়ে চলেছেন আবিদ খান। ৬০ বছরের এই মানুষটি পাতিয়ালা সাই থেকে বক্সিংয়ে এনআইএস কোচিং ডিপ্লোমা নিয়েছেন। নিজেও একজন জাতীয় সেরা বক্সার ছিলেন। চাকরি পাননি বলে চন্ডীগড়ে চলে আসেন। কিন্তু সেইসময় কেউ চাকরি দেননি, ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে একটা অটো কিনে ফেলেন।
সেটাই শেষ ১১ বছর ধরে চালাচ্ছেন আবিদ। ইতিমধ্যেই সৌরভ দু্গ্গাল নামে চন্ডীগড়ের এক সাংবাদিক আবিদের আসল পরিচয় টুইটে জানিয়ে দেন। আর সেটি দেখতে পেয়ে লাইক দেন বিজেন্দর সিং, মনোজ কুমারের মতো দেশের নামী বক্সাররা। এমনকি লাইক করে রিটুইট করেন অভিনেতা ফারহান আখতারও।
আরও অবাক করার মতো বিষয়, শিল্পপতি আনন্দ মাহীন্দ্রা টুইটটি দেখে আবিদ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁকে আর্থিকভাবে সহায়তা করবেন বলে জানান। কিন্তু আবিদের মতো ব্যতিক্রমী সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ রয়েছেন বলেই মনে হয় পৃথিবী এত সুন্দর।
Story of national boxer Abid Khan: From NIS qualified coach to driving auto…
Watch full video at YouTube channel 'Sports Gaon'
And do watch it, we need to strengthen YouTube channel Sports Gaon to bring more such stories.. Thanks pic.twitter.com/hHjhTtW5W9— Saurabh Duggal (@duggal_saurabh) April 14, 2021
তিনি শিল্পপতির সহায়তা নিয়ে বলেন, ‘‘না স্যার, আমার এসবের দরকার নেই। হয়তো সবাই ভাববে আমি ইচ্ছে করে আমার খবর বের করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। আমি যা সঞ্চয় করেছি, সেটি দিয়েই আগামী প্রজন্মের বক্সারদের ট্রেনিং দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনাকে ধন্যবাদ।’’
এমনকি বিজেন্দর ও ফারহানও চেয়েছিলেন আবিদ খানের পাশে থাকতে। তাঁর বাকি জীবন যাতে আরামে ও স্বচ্ছন্দে কাটতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। এই প্রাক্তন বক্সার তাও ‘না’ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘‘জীবনের অর্ধেক সময়টা তো কষ্ট করেই কাটিয়ে দিলাম, পেট চালাতে অটো চালাই, খালাসির কাজ করি। কেউ দেখেনি একটা সময়, তাই বাকি জীবনেও নিজেই নিজেরটা চালিয়ে নেব।’’ অভিমান ও কষ্ট থেকেই বলেছেন এই প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। যিনি ১৯৮২ সালে সিমলা জাতীয় সিনিয়র বক্সিং আসরে পাঞ্জাবের হয়ে সোনা জিতেছিলেন।
১৯৮৮ সালে সাই থেকে বক্সিংয়ে ডিপ্লোমা নেওয়ার পরে চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে চলে যান সৌদি আরবে। সেখানে টানা ছিলেন, ভরণপোষণের জন্য ট্যাক্সি চালাতেন। পরে চলে আসেন দেশে, তারপর চন্ডীগড়ের রাস্তায় অটো চালানো ও গাড়ি থেকে মালপত্তর নামানোর কাজ শুরু করেন, সেটাই এখনও মূল জীবিকা এই ব্যতিক্রমী মানুষটির।