শেষ আপডেট: 6th January 2025 17:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্যাম্পেল সাইজে গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান। যেখানে পারফরম্যান্সের গ্রাফে ধরা পড়েছে ক্রমিক ধস। আর এরই ভিত্তিতে বিরাট কোহলির টেস্ট কেরিয়ার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচকদের আর্জি জানালেন আকাশ চোপড়া। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটারের বক্তব্য, কোহলির অতীত বর্ণোজ্জ্বল। কিন্তু বর্তমান ফ্যাকাশে। যার জেরে ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় দলকেও মাশুল গুনতে হচ্ছে। বিসিসিআই-এর উচিত এ বিষয়ে অবিলম্বে একটা হেস্তনেস্ত করা।
সমালোচনার অন্দরে ঢোকার আগে আকাশ অবশ্য কোহলির অবদান, তাঁর ‘স্বপ্নের মতো’ কেরিয়ারের কথা মনে করাতে ভোলেননি। সামনে টেনেছেন খাস পরিসংখ্যান। ১২৩ টেস্টে সাকুল্যে ৯,২৩০ রান। গড় ৪৬.৮৫। সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩০। এর দৌলতেই তো দিল্লির বিরাট কোহলির ভারতের ‘কিং কোহলি’ হয়ে ওঠা! কিন্তু মুকুট পরা আর মুকুট ধরে রাখার সংগ্রামের যে তুল্যমূল্য আলোচনা, তা-ই যেন প্রকট করে তুলেছে কোহলির ফর্মের আচমকা অধোগতি।
চোপড়া তাঁর বিশ্লেষণে স্পটলাইটে এনেছেন শেষ পাঁচ বছরের ফর্ম। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ৩৯ টেস্টে বিরাটের গড় মাত্র ৩০.৭২। ঘরের মাঠ হোক কি বাইরের উঠোন। কোহলির ফর্ম ধারাবাহিকভাবে নীচে নেমেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, হাই ভোল্টেজ ম্যাচ তাড়া করে প্রায় একা হাতে জেতানোর যে-দক্ষতা তাঁর ট্রেডমার্ক হয়ে হয়ে উঠেছিল, তাও যেন নিমেষে উধাও! টেস্ট বিশ্বকাপে উঠতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে একেই দুষেছেন আকাশ।
এই বক্তব্যের সপক্ষে পেশ করা হয়েছে বছরভিত্তিক তথ্য। চোপড়া গোড়ায় নজর রেখেছেন ২০২০ সালে। কোভিডের জেরে সে বছর মাত্র তিনটি টেস্ট খেলেছিল ভারত৷ কিন্তু সেখানেও কোহলির গড় কুড়ির নীচে। পরের বছর সামান্য উন্নতি। তবুও ১১ টেস্টের একটাতেও সেঞ্চুরি পাননি কোহলি। ২০২২ সালেও একই ছবি—কোনো শতরান নেই। গড়ও কমেছে—২৮.২১ থেকে নেমেছে ২৬.৫০-এ। ২০২৩-এ পরিস্থিতি অনেকটা উজ্জ্বল। ঝুলিতে এবার দুটো সেঞ্চুরি। আটখানা টেস্টে ব্যাটিং অ্যাভারেজ এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫.৯১। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর বোধ হয় ২০২৪। ১০ টেস্টে গড় পঁচিশেরও কম! আর এই পাঁচ বছর ধরে যে-তিনটে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন কোহলি, লক্ষণীয়ভাবে, তার মধ্যে মোটে একটির ক্ষেত্রেই জয়ের মুখ দেখেছে ভারত। এই তথ্য বড়ো ম্যাচের বড়ো খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞান কোনোভাবেই হতে পারে না বলে মত আকাশের।
ইতিমধ্যে আকাশের একদা সতীর্থ, ইরফান পাঠানও ‘কোহলি হঠাও’-এর ধুয়ো তুলেছেন। যে-কোনো অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় পঁচিশের গড় মেপে রান করে যেতে পারে বলে ঠারেঠোরে বিরাটের বদলে তরুণদের সুযোগ দেওয়ারও বার্তা দিয়েছেন তিনি। আকাশ এতটা চাঁচাছোলাভাবে না হলেও নির্বাচকদের চূড়ান্ত হেস্তনেস্ত নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। আপাতত ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ভারত আর কোনো টেস্ট খেলতে নামছে না। এই পরিস্থিতিতে হাতে যথেষ্ট সময় রয়েছে। সন্ধিক্ষণের এমন মুহূর্তে অজিত আগরকর, গৌতম গম্ভীরের উচিত ভবিষ্যতের নীল নকশা এঁকে ফেলা।
বিরাট-ভক্তদের একটা বড়ো অংশ অবশ্য ‘ধীরে চলো নীতি’-র পক্ষপাতী। যুক্তি হিসেবে কোহলির ওয়ান ডে রেকর্ড, বিশেষ করে তেইশের বিশ্বকাপে তাঁর সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তথ্যকে সামনে টেনে আনছেন তাঁরা। চলতি বছরেই রয়েছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। অতএব, তাঁকে টেস্ট দলে রাখা, না-রাখা নিয়ে বুঝেশুনে পা ফেলা হোক।
এক্ষেত্রে চোপড়ার অভিমত—ভাবাবেগের আগে যেন দলকে রাখা হয়। কোহলির মতো অলোকসামান্য ক্রিকেটারের নিজের অবসরের নকশা নিজে থেকে বুনে ফেলার হক রয়েছে ঠিকই। কিন্তু আগামী সিরিজের আগে, হাতে যথেষ্ট সময় আছে যখন, সেক্ষেত্রে অন্তত টেস্ট টিমে নম্বর চারে কোনো উঠতি, প্রতিশ্রুতিমান তরুণ ব্যাটসম্যানকে খেলানোর পরীক্ষা কি করা যেতে পারে না? প্রস্তাব রেখেছেন আকাশ।