তাৎপর্যপূর্ণভাবে, একুশ সালের সফরে রোহিতের সঙ্গী ছিলেন কেএল রাহুল। হিটম্যানের মতো তিনিও তিনশোর উপর রান করেন।
শুভমান ও যশস্বী
শেষ আপডেট: 15 May 2025 12:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মধ্যে পাঁচদিনের ব্যবধান। টিম ইন্ডিয়ার (Test India) টেস্ট টিম (Test Team) থেকে অবসর নিয়েছেন দুই তারকা ক্রিকেটার। একজন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), অন্যজন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)।
আর এই সূত্রেই উঠতে শুরু করেছে একের পর এক প্রশ্ন। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা: এমন একটি দল তৈরি করা, যারা লাল বলের ক্রিকেটকে ধারাবাহিকভাবে শাসন করতে পারবে, শুধু দেশের মাটিতে নয়, বিদেশের জমিতেও একাধিপত্য ধরে রাখবে।
এর বাইরে আরও একটি তাৎক্ষণিক ভাবনা রয়েছে, যার নিরসন এখনও হয়নি। রোহিতের প্রত্যাশিত কিন্তু আচমকা অবসর, অন্যদিকে বিরাটের বিতর্কিত, অপ্রত্যাশিত সরে যাওয়া বিসিসিআইকে (BCCI) অনেক অঙ্ক মেলাতে বাধ্য করেছে। যার শুরুয়াত হতে চলেছে আগামী ইংল্যান্ড সিরিজ (England Series) থেকে। দল এখনও ঘোষিত হয়নি। হলেও রোহিতের ছেড়ে যাওয়া ওপেনিং স্লট এবং বিরাটের অবর্তমানে চার নম্বর জায়গায় কারা আসতে চলেছেন, সেই নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমস্যা ক্যাডিডেন্ট খোঁজা নয়। সমস্যা যোগ্যতা নির্ধারণ নিয়ে। শেষ যেবার ভারত ইংল্যান্ডে যায়, সেই সময় ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন রোহিত। ৪ টেস্ট মিলিয়ে তোলেন ৩৪৫ রান। গড় প্রায় ৫৮-র কাছাকাছি। গত দু’বছরের রোহিতের সঙ্গে সেই জমানার রোহিতের তিলমাত্র মিল নেই। সেই সময় ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে অদ্ভুত এক পন্থা বেছে নিতেন তিনি। প্রথম লাগাতার ডিফেন্স করে বলের পালিশ তুলে ফেলো। তারপর আগ্রাসী মেজাজে ঢুকে যাও। আক্রমণ শানাতে থাকো।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, একুশ সালের সফরে রোহিতের সঙ্গী ছিলেন কেএল রাহুল। হিটম্যানের মতো তিনিও তিনশোর উপর রান করেন। এরপর থেকে ফর্মের আসা-যাওয়ার জেরে বারবার বাটিং অর্ডারে জায়গা পাল্টেছেন রাহুল। কোথাও সেভাবে থিতু হতে পারেননি। সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় বর্ডার-গাভাসকার সিরিজে যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে জুটি বেঁধে ধরাশায়ী ব্যাটিং লাইন আপ একমাত্র রাহুলই পাতে দেওয়ার মতো রান তুলেছিলেন। হয়তো ইংল্যান্ড সিরিজেও ওপেনেই খেলতে নামবেন তিনি।
রোহিতের বদলি যদি হন রাহুল, বিরাটের স্থানে কে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সেকেন্ড ডাউন প্রথম একাদশের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পজিশন। শুভমান কি সেই জায়গা নিতে পারবেন? তরুণ ব্যাটারের দেশের বাইরে ফর্ম এতটাই অনুজ্জ্বল যে, ইংল্যান্ড সফরে কী হতে কী চলেছে, কেউ জানে না! এমনিতে বিরাটের সঙ্গে শুভমানের ব্যাটিং শৈলীর মিল অনেক। স্ট্রোক প্লে, শর্ট আর্ম প্লে হুবহু এক। বিদেশের মাটিতে এই দুই শট জোরালো অস্ত্র। কিন্তু তাকে কাজে লাগানোর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
২০২২ সালে ফার্স্ট ডাউন থেকে চার নম্বরে নামানো হয় শুভমানকে। নির্বাচকরা হয়তো সেই জায়গাতেই তাঁকে খেলে যাওয়ার অনুরোধ জানাবেন। সেক্ষেত্রে তিন নম্বরে আস্থা রাখা হতে পারে দুজনের উপর। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চাইলে সাই সুদর্শন। রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য করুণ নায়ার, যিনি বিগত রঞ্জি ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে ছিলেন। লাল বলের ক্রিকেট দীর্ঘদিন ধরে খেলে চলেছেন।
রজত পাটিদার, করুণ নায়ার, যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমান গিল, সাই সুদর্শন—এঁদের মধ্যে অনেকেই ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের জন্য খেলতে নামবেন। পারবেন বিদেশি জলহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন—ইংল্যান্ডের পিচ প্রতি মুহূর্তে একজন ব্যাটারের পরীক্ষা নেয়। তার দক্ষতা, স্কিল ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেয়। এটা আইপিএল নয়। পাটা পিচের খেলা নয়। বল এখানে বিপজ্জনকভাবে বাঁক নেয়। সুইং, পেস, সিম—মরণফাঁদ প্রতি মুহূর্তে পাতা। তরুণ ব্রিগেডের মধ্যে জোশের কমতি দেখে বকাঝকার সুরে ক্রিকেটের ময়দানকে ‘বাগান’ মনে না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন রোহিত।
সেই যুগ অস্তমিত। এখন ওভাল, লর্ডসের মতো পাঁচটি স্টেডিয়াম শুভমানদের কাছে প্রমোদকানন হয়ে উঠবে নাকি ল্যান্ডমাইন বিছিয়ে রাখবে—তার জবাব মিলবে সফরশেষে, অগস্ট মাসে।