সেইন নদীতে অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার নৌকো। (ছবিঃ রয়টার্স)
শেষ আপডেট: 27th July 2024 18:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অলিম্পিকের উদ্বোধনীতেই একেবারে কূটনৈতিক সংঘাত!
ভাবুন দিকি! সেইনের জলে ভারতীয় দলের নৌকো আসছে। এদিকে মাইকে ঘোষণা করা হল, আসছে পাকিস্তান! যদি এরকমটা হত?
প্রায়ই একইরকম একটা কেলেঙ্কারি বাধিয়ে বসলেন অলিম্পিক আয়োজকরা।
অলিম্পিকের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেজে উঠেছে প্যারিস। সেইনের জলে ভেসে আসছে একের পর এক দেশের নৌকো। তাতে পতাকা হাতে দাঁড়ানো ক্রীড়াবিদরা উল্লসিত। প্যারিসের ঐতিহাসিক নগর স্থাপত্যের সামনে নদীর জলে এক অবিস্মরণীয় উদ্বোধনী যজ্ঞ দেখছে দুনিয়া। আর এখানেই ঘটে গেল বিপত্তি।
আসছিল দক্ষিণ কোরিয়ার নৌকো। তাতে হাজির একঝাঁক খেলোয়াড়! অথচ গমগম করে মাইকে প্রথমে ফরাসিতে, পরে ইংরেজিতে ঘোষণা হল, 'ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া'। যা আদতে উত্তর কোরিয়ার সরকারি নাম!
পীত সাগরের উত্তর-পুবে, কোরীয় উপদ্বীপে দুই কোরিয়ার সম্পর্ক একেবারে আদায়-কাঁচকলায়। কোরীয় যুদ্ধবিরতি অঞ্চলের দুই পাশের দুই দেশের ইতিহাসে মিশে আছে ঠাণ্ডা যুদ্ধ, মতাদর্শের দ্বন্দ্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছিল দুই কোরিয়া। তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল দুনিয়া। একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শে তৈরি উত্তর কোরিয়া, সরকারিভাবে ডিপিআর-কোরিয়া সম্পূর্ণভাবে একনায়কতান্ত্রিক শাসনে চলে। দেশটির সর্বময় কর্তা কিম জং উন এই মুহূর্তে পশ্চিমী দুনিয়ার কাছে তীব্র মাথাব্যথার কারণ। একদিকে আর্থিক সংকট, অন্যদিকে মাত্রাছাড়া সামরিক সজ্জায় পিয়ংইয়ং প্রায়ই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে থাকে। উল্টোদিকে পশ্চিমী গণতন্ত্রের আদর্শে সজ্জিত দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় মাথা তুলেছে। অত্যন্ত উন্নত এই দেশ আজ সারা পৃথিবীতে কোরীয় সংস্কৃতির বার্তাবাহক। রাজধানী সোলে ১৯৮৮ সালে আয়োজিত হয়েছিল অলিম্পিক। বলা হয়, কোরীয় যুদ্ধের পরে উন্নত গণতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের চূড়ান্ত স্বাক্ষর দেখিয়েছিল সোল অলিম্পিক।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি নাম রিপাবলিক অফ কোরিয়া। কিন্তু তাদের উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতেই বেজায় চটে গিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তারা। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) যদিও সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা চেয়েছে। এক্স হ্যান্ডলে লিখেছে, 'আমরা গভীরভাবে দুঃখিত।' কিন্তু এতেই বিষয়টি থামছে না। খবর প্যারিস থেকে গিয়ে পৌঁছেছে সোলে। নড়েচড়ে বসেছেন দক্ষিণ কোরীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।
আইওসি মুখপাত্র মার্ক অ্যাডামস যেমন বলেছেন, 'এটা অত্যন্ত দুঃখের। একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা ক্ষমা চাইছি। এত কিছু একসঙ্গে হচ্ছে, নিশ্চিতভাবেই কোথাও ভুল হয়ে গিয়েছে।'
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি ও ক্রীড়ামন্ত্রক এবার সরব হয়েছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, এরকম ভুল এত বড় মঞ্চে কীভাবে হয়? এটা বরদাস্ত করা যাবে না। সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়ার তরফে ফরাসি সরকারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানোর কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি লিখিতভাবে বলা হয়েছে, এরকম ভুল যেন আর না ঘটে।
বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমেছেন আইওসি প্রধান টমাস বাখ। তড়িঘড়ি তিনি জানিয়েছেন, এই নিয়ে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক-ইয়েওলের সঙ্গে কথা বলবেন। ঘটনাচক্রে, দুই কোরিয়াকে গুলিয়ে ফেলার ঘটনা আগেও ঘটেছে। লন্ডন অলিম্পিকেও উত্তর কোরিয়ার মহিলা ফুটবল দলের ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা দেখানো হয়েছিল। আয়োজকরা এবার বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলবেন বলে জানানো হয়েছে।