পোলিশ ওপেন জয়ের পরে আরও এক সাঁতারুর সঙ্গে বাংলার রিমো।
শেষ আপডেট: 14th August 2024 16:42
পোলিও আক্রান্ত হয়েছিলেন ছোটবেলাতেই। পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল ডান পা। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, সাঁতার না কাটলে চিরতরে পায়ে পক্ষাঘাত হয়ে যেতে পারে। সেই থেকেই চ্যালেঞ্জ শুরু।
হাওড়া সালকিয়ার রিমো সাহার কাছে নতুন লড়াই শুরু হল। তিনি দিনরাত এক করে পড়ে থাকলেন সফল সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। ইতিমধ্যেই ২০১৯ সালে ক্যাটলিনা চ্যানেল ও ২০২৩ সালে ইংলিশ চ্যানেল জিতেছিলেন রিমো। তিনি ৫২টি সোনা, ৩৮টি রুপো ও ১৯টি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন বাংলার এই প্যারালিম্পিয়ান সাঁতারু। তিনি বাংলা থেকে প্রথম কোনও সাঁতারু প্যারালিম্পিক্সে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতেছিলেন রিমো।
এবার রিমোর মুকুটে নয়া পালক। তিনি গত সোমবারই জিতেছেন পোলিশ ওপেন। ভারত থেকে এই ওপেন সাঁতরে কেউ সাফল্য পাননি। তিনি পোল্যান্ডের হেল থেকে গুডেনিয়া পর্যন্ত সাঁতার সফলভাবে পেরিয়েছেন। তিনি ১৮ কিলোমিটার জলপথ সাঁতরাতে সময় নিয়েছেন ছয় ঘণ্টা ৩৩ মিনিট।
পোল্যান্ডে এই প্রণালী সাঁতরানো যেমন কৃতিত্বের, তেমনি রিমো আরও একটি অসাধ্যসাধন করেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মুর ডাকা নৈশভোজে বিশেষভাবে আমন্ত্রিত। পোল্যান্ড থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে বাংলার এই প্যারালিম্পিয়ান সাঁতারু জানালেন, রাষ্ট্রপতির ডাকা আমন্ত্রণে যোগ দিতে আমি দিল্লিতে পৌঁছাব বৃহস্পতিবার সকালেই। আমি গর্বিত এমন অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
পোলিশ ওপেনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রিমো জানালেন, এমন কঠিন জলপথ আমার জীবনে আমি কম পেয়েছি। আগেই তো জল প্রবল ঠাণ্ডা ছিল, তার পাশাপাশি জেলি ফিস বারবার আমাকে আক্রমণ করেছে। সেগুলি কাটিয়ে এই ওপেন জয়ের পরে আমাকে সবাই উৎসাহ ও অভিনন্দন জানিয়েছে। আমাকে আন্তর্জাতিক পদক ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। বাংলার প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি বলে যেমন আনন্দের, পাশাপাশি ভারতের জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা দিবসের আগে বিদেশে ওড়াতে পেরেও গর্ববোধ হচ্ছে।
রিমোর বাবা এক বেসরকারী সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী। মা ছেলেকে নিয়ে বহু চিকিৎসা করিয়েছেন, কিন্তু কোনও প্রচেষ্টাই কাজে আসেনি। রিমোর স্বপ্ন সফল করতে প্রেরণা দিয়েছেন স্ত্রী প্রিয়া, তিনি নিজেও একজন সাঁতারু।
একটা সময় বাংলা থেকে মাসুদুর রহমান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্যারালিম্পিয়ান সাঁতারু হিসেবে বাংলার গর্ব ছিলেন। তাঁরই পথ ধরে রিমোর হাতে সেই সাফল্যেরই রিমোট কন্ট্রোল।