শেষ আপডেট: 12th November 2024 12:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জয় বাঙ্গারের ছেলে আরিয়ান লিঙ্গ পরিবর্তন করিয়েছেন। এই নিয়ে রীতিমতো হইচই চারদিকে। তিনি আরিয়ান থেকে অনয়া হয়েছেন হরমোন থেরাপির সাহায্যে। লিঙ্গ পরিবর্তনের পরে অনয়া নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ছবিও পোস্ট করেছেন।
কিন্তু, এই হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি আসলে কী? কীভাবেই বা শারীরিকভাবে পুরুষ হয়ে জন্মানো কোনও মানুষ সম্পূর্ণ নারী হয়ে উঠতে পারেন? এই ব্যাপারে চিকিৎসকদের মতামত জেনে নেওয়া যাক।
চিকিৎসকদের মতে, শরীরের লিঙ্গপরিচয় ঠিক করে, শরীরের মধ্যে বইতে থাকা হরমোনের স্রোত। এই হরমোন বাইরে থেকে বাড়িয়ে-কমিয়ে বদল আনা যায় শরীরে। আবার হরমোন পুরোপুরি বদলে দিয়ে করা হয় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিও, যাতে বদলে যায় লিঙ্গপরিচয়।
সহজ কথায় বুঝিয়ে বললে, মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন থাকে, যা মূলত তাঁদের ‘নারীত্বের’ কারণ। এই হরমোনের জন্যই মহিলারা ঋতুমতী হন, সন্তান ধারণ করেন ও জন্ম দেন। তাঁদের শারীরিক কাঠামোও নির্ধারণ করে এই হরমোনই। মেনোপজের পরে শরীরে এই হরমোন কমতে থাকে, যাতে তাঁদের ‘নারীত্ব’ নির্ধারক বিষয়গুলি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অনেক সময়ে এই হরমোনের বেশি ঘাটতি দেখা গেলে, বাইরে থেকেও দেওয়া হয় ইস্ট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরন।
(তথ্যসূত্র: ক্লেভল্যান্ড ক্লিনিক- https://my.clevelandclinic.org/health/treatments/15245-hormone-therapy-for-menopause-symptoms )
ঠিক তেমনই পুরুষ শরীরের ‘পুরুষত্ব’—তা সে তাঁর লিঙ্গপরিচয় হোক বা যৌন পছন্দ, অথবা তাঁর শারীরিক কঠোরতা, এ সবই ঠিক করে টেস্টোস্টেরন হরমোন। এই হরমোনের ঘাটতি থাকলে বহু পুরুষের মধ্যেই ‘নারীসুলভ’ আচরণ দেখা যায়। আবার উল্টোদিকে, হরমোনাল ডিসঅর্ডারের কারণে কোনও নারীর শরীরে যদি কখনও এই টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তবে তাঁর মুখে লোম বৃদ্ধি পেতে পারে, ঋতুচক্রে সমস্যা হতে পারে।
এখন লিঙ্গ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মূল বিষয় হল এই হরমোন এবং তা বদল করার প্রক্রিয়া। যাতে এক কথায় বলা হয় হরমোন থেরাপি। মূলত দু’ধরনের থেরাপি করা হয়। যেমন—ম্যাসকুলনাইজিং হরমোন থেরাপি (Masculinizing hormone therapy) বা ফেমিনাইজিং হরমোন থেরাপি (Feminizing hormone therapy)। এটাকে অনেকে আবার ট্রান্সজেন্ডার হরমোন থেরাপিও বলে থাকেন।
আরিয়ান যে থেরাপি করিয়েছেন, সেটাকে ফেমিনাইজিং হরমোন থেরাপি বলে, কারণ তাঁর শরীরে নারী হরমোন প্রবেশ করানো হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কোনও ব্যক্তির শরীরে বাইরে থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন দেওয়া হয়, যা তাঁর শরীরে থাকা টেস্টোস্টেরন হরমোনকে রিপ্লেস করে। যে শারীরিক গঠনের কারণে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা হন, সেটা এই ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাধ্যমেই হয়।
ফলে চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে, ধাপে ধাপে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন প্রবেশ করানো শুরু হলে, ধীরে ধীরে পুরুষ শরীরে স্তনের আভাস আসে, কমে যায় দাড়িগোঁফ, আচরণেও বদল আসে। এর পরে বাইরে থেকে অস্ত্রোপচার করে বদলে ফেলা হয় যৌনাঙ্গও।
এবার প্রশ্ন হল, এই হরমোন কীভাবে দেওয়া হয়? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই হরমোন দেওয়ার বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন ট্যাবলেট, জেল কিংবা ক্রিম এবং ইঞ্জেকশন। কোনও ব্যক্তির থেরাপি কীভাবে করা হবে, সেটা চিকিৎসকরাই ঠিক করেন।
কতদিন কাজ করবে এই হরমোন থেরাপি? এটা ব্যক্তির বয়স, হরমোন রিসেপ্টার্স এবং ওষুধের উপর নির্ভর করবে। হরমোন রিসেপ্টার্স একধরনের প্রোটিন। এটা শরীরের হরমোনকে একত্রিত করে রাখে।
তবে এই হরমোন থেরাপির বেশ কয়েকটি সমস্যাও রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হল বন্ধ্যত্ব। তবে এই ব্যাপারে চিকিৎসকরা অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। পাশাপাশি রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, রক্তচাপ বাড়তে পারে। এমনকী, কিডনি এবং লিভার সংক্রান্ত রোগও শরীরে দানা বাঁধতে পারে।