শেষ আপডেট: 12th September 2024 12:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতবর্ষে এমন বহু অ্যাথলিট রয়েছেন, যাঁরা অলিম্পিক্স টুর্নামেন্টে পদক জয় করলেও আজ তাঁদের কেউ আর মনে রাখে না। এমনই একজন অ্যাথলিট হলেন মধ্যপ্রদেশের সীতা সাহু। অলিম্পিক থেকে পদক জয় করলেও, তাঁর পরিবারে আর্থিক পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। দেশের এই 'রত্ন'কে আজ ফুচকা বিক্রি করে দু'বেলার অন্ন সংস্থান করতে হচ্ছে।
মধ্যপ্রদেশের রিবা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সীতা সাহু। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাঁকে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। ২০১১ সালে আথেন্সে আয়োজিত স্পেশাল অলিম্পিক্সে ২০০ মিটার এবং ১,৬০০ মিটার অংশগ্রহণ করেছিলেন। দুটো ইভেন্টেই তিনি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন। সীতার এই সাফল্যের পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্মান জানানো তো অনেক দুরের কথা, সামান্য তাঁর খবরটুকু নেয়নি। ২০১১ সালে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ঘোষণা করেছিলেন, সীতার জন্য় একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। কিন্তু, ঘোষণাই সার! কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সীতা সাহুর ভাই ধর্মেন্দ্র সাহু বলেন, 'স্পেশাল অলিম্পিক্সে আমার দিদি জোড়া ব্রোঞ্জ পদক জয় করলেও, সরকারের তরফ থেকে কোনও সাহায্য করা হয়নি। না দিদিকে খেলার ব্যাপারে কোনও সাহায্য করা হয়েছে।'
স্পেশাল অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে জোড়া পদক জয় করলেও, সীতার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনও বদল দেখতে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাবা ঠেলাগাড়িতে পাপড়ি চাট বিক্রি করতেন। আর এভাবে প্রতিদিন তিনি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা উপার্জন করতেন। কিন্তু, বাবা অসুস্থ হওয়ার পর সীতা নিজের কাঁধেই সংসারের জোয়াল টানতে শুরু করেন। তিনি ফুচকা বিক্রি করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সীতা স্কুলেও যেতে পারেননি। বাবা-মা এবং দুই ভাইকে তিনি এক কামরার ঘরে তিনি বসবাস করেন।
প্রসঙ্গত, পদক জয়ের তিন বছর পর পরিবারের আর্থিক অবস্থা তাঁকে রীতিমতো হতাশ করে দেয়। এই পরিস্থিতির কিছুটা সুরাহা করতে তিনি ভোপালে গিয়ে শিবরাজ সরকারের দ্বারস্থ হন। ২০১৩ সালে রাজ্য সরকার এবং এনটিপিসি যৌথভাবে তাঁর হাতে ৯ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল। অবশেষে সীতার পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও উন্নত হয় এবং তিনি আবারও অনুশীলনে মনোনিবেশ করতে পারেন।
সীতার এই কাহিনী শোনার পর আপনারা কী বলবেন? দেশের খেলাধুলোকে উৎসাহিত করতে আরও বেশি করে রাজ্য সরকারের এগিয়ে আসা উচিত নয়? যাঁরা দেশের হয়ে পদক জয় করছেন, তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি কি এভাবেই প্রতিদিন ধুলোয় মিশবে? স্পেশাল অলিম্পিক্সে দুটো পদক জেতার পর সীতাকে কি একটাও সরকারি চাকরি দেওয়া যেত না? জবাবটা আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম।