শেষ আপডেট: 16th September 2024 19:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতীয় মহিলা অ্যাথলিটদের মধ্যে মেরি কম ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন। ২০১২ অলিম্পিক্স পদকজয়ী ভারতের এই মহিলা বক্সার দেশের হয়ে একাধিক পদক জয় করেছেন। কিন্তু, আপনারা কি জানেন যে ছোটবেলায় মেরির কাছে সামান্য খাবারের পয়সাটুকুও ছিল না। কিন্তু, যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি ৬ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব জয় করেছেন। আসুন, সেই সাফল্যের কাহিনী আলোচনা করা যাক।
মেরির যাত্রাপথ কিন্তু একেবারেই সহজ ছিল না। ছোটবেলায় তাঁকে দারিদ্রতার বিরুদ্ধে যথেষ্ট লড়াই করতে হয়েছিল। একেবারে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসার কারণে একাধিক প্রতিবন্ধকতার মুখে তাঁকে পড়তে হয়েছিল।
মণিপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মেরি কম। তাঁর বাবা-মা দুজনেই ঝুম চাষ করতেন। চরম দারিদ্রতা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই লড়াই করতে শিখিয়ে দিয়েছিল। তুলে নিয়েছিলেন সংসারের একাধিক দায়িত্ব। মাঝেমধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে কৃষিকার্যে সাহায্য করতেন তিনি। স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবারে ভাই-বোনদেরও খেয়াল রাখতে হত।
এরপর তাঁর জীবনে বক্সিং আসে। কিন্তু, সাফল্যের রাস্তাটা তাঁর সামনে একেবারেই সহজ ছিল না। বেশিরভাগ লোকজনই মনে করতেন, এটা একমাত্র পুরুষদেরই খেলা। তার থেকেও বড় কথা, এমন কথা তাঁর বাবা-মা'ই মনে করতেন। উচ্চতা খুব একটা বেশি না হওয়ার কারণে কেউ বিশ্বাসই করতে পারতেন না যে তিনি বক্সিংও লড়াই করতে পারেন। যাইহোক প্রাথমিক বাধা অতিক্রম করে তিনি ক্রমশ বক্সিং দুনিয়ার ভিত শক্ত করতে শুরু করেন। তবে যথেষ্ট সময় লেগেছিল।
জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দেওয়ার আগে মেরি তাঁর পরিবারকে বক্সিংয়ের ব্যাপারে বলার সাহস পাননি। ২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মেরির বাবা টোনপা জানিয়েছিলেন, একটা সময় তাঁর পক্ষে সংসারের খরচ টানা কার্যত দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল। সেইসময় তিনি মেরিকে জানিয়েও দিয়েছিলেন যে মেয়ের স্পেশাল ডায়েটের খরচ তিনি আর দিতে পারবেন না।
তখন মেরি তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন, চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। যেখানে অন্য বক্সাররা ৫০ টাকার মিল খেতেন, সেখানে মেরি মাত্র ২৫ টাকাতেই তাঁর পেট ভরাতেন। এরপর থেকে মেরির পরিবার ধীরে ধীরে তাঁর পাশে দাঁড়াতে শুরু করে।
এরপর থেকে মেরিকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে তিনি নিজের সাফল্যের রাস্তা ক্রমশ চওড়া করতে শুরু করেন। তবে অলিম্পিক্স পদক জয় করার পর তাঁর জীবন একেবারে বদলে যায়। বর্তমানে দেশের স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদদের মধ্যে মেরি একজন। আশা করা যায়, মেরির এই সাফল্যের কাহিনী গোটা দেশকে অনুপ্রাণিত করবে।