
মাকে গঞ্জনা শুনতে হয়েছিল, গর্বে বুক ভরিয়ে দিলেন লভলিনা
মুখ বুজে সব সহ্য করত ছোট্ট লভলিনা বড়গোঁহাই, কখনও কখনও দুই দিদির সঙ্গে সে-ও চোখের জল ফেলত, আর মনের ভেতরে প্রতিবাদের একটা আগুন জ্বলত। একদিন ঠিক, বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাব, এই ছিল ছোট্ট মেয়েটির প্রতিজ্ঞা।
করলেনও তাই, ভাল বক্সার হয়ে যেই নাম করতে শুরু করলেন, অমনি গ্রামের ওই মানুষগুলোই বলতে লাগলেন, তোমরা ভাগ্য করে মেয়ে পেয়েছো। তাও রাগ যায়নি লভলিনার। অলিম্পিকের মতো মহা মঞ্চে ভারতকে পদক এনে দিয়ে তিনি পুরনো স্মৃতি হাঁতড়ে বেরিয়েছেন। বলেছেনও, ‘‘এতদিনে মনে হয় বাবা-মা-র কষ্ট মেটাতে পারলাম। তাঁদের এসে গ্রামের কিছু মানুষ বাড়িতে এসে বলে যেত, নানা অপমান করত। এও বলত, বাবা-মা নাকি গত জন্মে কোনও ভুল কাজ করেছিলেন, তাই ছেলে না হয়ে পরপর তিনটি মেয়ে হয়েছে!’’
তিনি শুধু বিপক্ষ বক্সারের মুখেই সপাটে পাঞ্চ করেননি, বরং ওই নিন্দুকদের মুখেও জোরে মেরেছেন। এই মার হয়তো প্রতিবাদের, ভুল কথা বলার।
ইতিমধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে টেলিফোন করে কথা বলেছেন। তাঁকে আগামী দিনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। তিনি এই মুহূর্তে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়ে নিভৃতে থাকতে চান। কারণ গত দু’বছর ধরে কতটা পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটি তাঁর কোচ আলি কামার জানিয়েছেন।
আলির বক্তব্য, ‘‘লভলিনা নিজের সব আনন্দ ত্যাগ করেছিল, যে খাবারগুলো খেতে ভালবাসত, সেগুলি পর্যন্ত খেত না। ফোন সঙ্গে রাখলেও কোনও হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ফেসবুক ব্যবহার করত না। একমাত্র নিজের প্রতিক্রিয়া ও অনুভূতি তুলে ধরত টুইটারে।’’
লভলিনা যে সোনা জিততে না পেরে খুবই হতাশ, সেটিও কোচ বারবার জানিয়েছেন। বাংলার নামী প্রাক্তন বক্সার আলি কামার বলেছেন, পদকের ম্যাচের আগে তো দু’দিন ভাল করে খাইনি। যদি ওজন বেড়ে যায়, সেই ভয়েই। তবে এই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে যে অন্য লভলিনাকে দেখা যাবে, সেটিও বলেন আলি।