
আজ সেই দিন! রক্তাক্ত নাকে বরফ চেপে ১৬’র কিশোর বলেছিল ‘ম্যায় খেলেগা’
আরও পড়ুন ‘রসগোল্লা’-তে মিশে রয়েছে প্রেমের গন্ধ, নবীন ময়রার আত্মা, আর অনেক লড়াইয়ের জবাব
কাট টু, ১৫ নভেম্বর ২০১৩। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তিল ধারণের জায়গা নেই। গ্যালারি জুড়ে খালি একটাই আওয়াজ, ‘শচীন….শচীন….’। শেষবারের মতো সাদা জামা, সাদা ট্রাউজারে মাঠে নামছেন তিনি। মুম্বইয়ের ঘরের ছেলে। দেশের সবথেকে প্রিয় সন্তান। ব্যাট ধরা প্রত্যেক ছেলের আইডল। শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর।
১৫ নভেম্বর ১৯৮৯ থেকে ১৫ নভেম্বর ২০১৩। দীর্ঘ ২৪ বছরের যাত্রা। করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের নেটে ১৬ বছরের শচীনকে দেখে ওয়াসিম, ওয়াকাররা ভেবেছিলেন বছর ১২-১৩ ছেলেকে নিয়ে খেলতে এসেছে ভারত। ওয়াসিম, ওয়াকার, ইমরান, আকিব জাভেদদের ভয়ঙ্কর বোলিং আক্রমণ সামলাবে কী করে এই ছেলে? নাক সিঁটকেছিলেন অনেকেই।
নাকে বল লেগে রক্তপাত হওয়ার পরেও খেলেছিলেন শচীন। ১৫ রানের মাথায় আরেক ডেব্যুটান্ট ওয়াকার ইউনিসের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে এই ছেলেটার ব্যাট থেকেই এসেছিল ম্যাচ বাঁচানো ৫৮ রান। এই ছোট্ট ইনিংসেই বিশ্ব ক্রিকেট জেনে গেছিল, এসে গেছেন এক নক্ষত্র।
তারপর পুরোটাই ইতিহাস। ২৪ বছরের কেরিয়ারে ২০০ টেস্ট খেলে করেছেন ১৫ হাজার ৯২১ রান। করেছেন ৫১ টি সেঞ্চুরি। পাশাপাশি ৪৬৩ ওয়ান ডে ম্যাচে ৪৯টি শতরান সহযোগে কিংবদন্তির ঝুলিতে রয়েছে ১৮ হাজার ৪২৬ রান। ১০০ সেঞ্চুরি হাঁকানো একমাত্র ক্রিকেটার। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানও যাঁর ব্যটিং দেখে বলেছিলেন, ” ছেলেটা অনেকটা আমার মতোই খেলে।” এর থেকে বড় পুরষ্কার হয়তো নিজের ক্রিকেট জীবনে পাননি শচীন। জীবনের শেষ ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৭৪ রান করেছিলেন শচীন। ভারত ম্যাচ জিতেছিল ইনিংস ও ১২৬ রানে।
প্রথম ব্যাট হাতে নামার সেই ঘটনা আজ ২৯ বছর হলো। এতদিন পরেও এই দিনকে মনে করতে গিয়ে নস্টালজিক শচীন। নিজের টুইটারে এ কথা উল্লেখ করেছেন মাস্টার ব্লাস্টার। সেখানে তিনি লিখেছেন, ” প্রত্যেক বছর এই দিনটা আমায় একগুচ্ছ স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়। এইদিনেই আমি প্রথম ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। ২৪ বছর ধরে দেশের হয়ে খেলতে পারাটা আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের।”
This day, every year, brings back so many memories of the day I 1st represented India. It was an honour to play for the country and be able to represent India for 24 years. #TBT #ThrowbackThursday pic.twitter.com/k6cT1aT5XE
— Sachin Tendulkar (@sachin_rt) November 15, 2018
এই কীর্তিকে স্মরণ করেছে বিসিসিআই ও আইসিসিও। বিসিসিআইয়ের তরফেও এই বিশেষ দিনকে স্মরণে রেখে টুইট করা হয়েছে। শচীনের প্রথম দিনে পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে নামা ও শেষ টেস্টে ওয়াংখেড়েতে খেলতে নামার ছবি দিয়ে বিসিসিআইয়ের তরফে লেখা হয়েছে, ” এই দিনে অতীতে ফিরে যান। ১৯৮৯- প্রথম টেস্টে শচীনের খেলতে নামা। ২০১৩- শেষ টেস্টে নামছেন শচীন।”
On this day ???
— BCCI (@BCCI) November 15, 2018
Rewind the clock ?
1989 – Sachin made his Test debut
2013 – Walks out to bat for one final time #legend #TeamIndia pic.twitter.com/KXGJX3KB3O
আইসিসি’র তরফে আবার শুধু শচীনই নয়, এই বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে আরেক ডেব্যুট্যান্ট ওয়াকার উইনিসকেও। তাঁদের তরফে টুইটারে লেখা হয়েছে, ” এই বিশেষ দিনে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম দুই লেজেন্ড শচীন তেন্ডুলকর ও ওয়াকার ইউনিস যথাক্রমে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সে প্রথম খেলা শুরু করেছিলেন।”
#OnThisDay in 1989, Sachin Tendulkar and Waqar Younis, aged 16 and 17 respectively, made their Test match debuts against each other in Karachi.
Two true legends of the game. pic.twitter.com/lGrPM700ai
— ICC (@ICC) November 15, 2018
বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে খুব কম দৃশ্যই রয়েছে যা সারাজীবনের জন্য ফ্রেমবন্দি হয়ে যায় দর্শকদের মনে। লর্ডসের ব্যালকনিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শার্ট খুলে ঘোরানোর ছবি যেমন চিরকাল ক্রিকেট সমর্থকদের মনে থাকবে, ঠিক সেভাবেই ক্রিকেটের অমর ফ্রেম হয়ে থাকবে শেষ টেস্টে জিতে ওয়াংখেড়ের পিচে শেষবারের মতো প্রনাম করছেন ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয়, শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর।