স্টিভেন ভ্যান দে ভেল্ডেকে নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে।
শেষ আপডেট: 27th July 2024 18:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অভিযোগ ওঠা এক ব্যাপার! অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে, জেল খেটেও ফের অলিম্পিকে 'দেশের প্রতিনিধিত্ব' করার সুযোগ পাওয়া? একেবারে এরকটাই ঘটেছে এবারের অলিম্পিকে। তাও আবার ধর্ষণের মত গুরুতর অপরাধে।
স্টিভেন ভ্যান দে ভেল্ডের বয়স ২৯। তিনি নেদারল্যান্ডসের বিচ ভলিবল দলে খেলেন। এবারের অলিম্পিকেও তিনি ডাচ দলের সঙ্গে এসেছেন। নামবেন আইফেল টাওয়ারের সামনে বানানো, অস্থায়ী বিচ ভলিবল মাঠে।
অথচ তাঁকে নিয়েই এবার প্রায় নজিরবিহীন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল প্যারিস অলিম্পিক।
২০১৪ সালের আগস্ট মাস। স্টিভেনের বয়স তখন মাত্র ১৯। ফেসবুকে আলাপ হয়েছিল বছর বারোর এক ব্রিটিশ কিশোরীর সঙ্গে। আলাপের জের এমনই গড়ায় যে স্টিভেন সটান লন্ডনে চলে আসেন। চলে যান সেই কিশোরীর বাড়িতে। তার মা তখন ছিলেন না সেখানে। সেই সুযোগেই মদ্যপান করিয়ে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করেন স্টিভেন। পরে তিনি চলে আসেন আমস্টারডামে। কিন্তু কিশোরীর পরিবারের তরফে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথা মেনে, অভিযোগের সারবত্তা মিলতেই স্টিভেনকে ব্রিটেনের হাতে তুলে দেয় নেদারল্যান্ডস।
দীর্ঘদিন ধরে বিচার চলে স্টিভেনের। পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয়, নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ পুরোপুরি সত্যি। দোষী সাব্যস্ত হ'ন স্টিভেন। বিচারক চার বছরের কারাদণ্ড দেন। বলা হয়, তাঁর খেলার কেরিয়ার শেষ। ধর্ষক বলেই তাঁকে চিনবে সমাজ। ইংল্যান্ডে কিছুদিন জেল খাটার পর স্টিভেনকে ফের নেদারল্যান্ডসে ফিরিয়ে দেয় ব্রিটেন। বাকি মেয়াদ তিনি ডাচ কারাগারেই কাটাবেন। শেষ অবধি এক বছর পরেই মুক্তি মেলে স্টিভেনের।
প্রায় তিন বছর নানা সংশোধনমূলক কার্যক্রমের মধ্যে ছিলেন স্টিভেন। শেষ অবধি নেদারল্যান্ডসের কেন্দ্রীয় ভলিবল অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে ফের প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ দেয়। ২০১৮ সাল থেকে খেলাধুলোয় ফিরতে থাকেন স্টিভেন। এতেই বিতর্ক মাথাছাড়া দেয়। একজন ধর্ষককে কীভাবে খেলার জগতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হল? প্রশ্ন তুলেছিল সমাজকর্মীদের সংগঠন। কিন্তু ডাচ সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, সংশোধনের পরে স্টিভেনকে মূলস্রোতে ফেরানোই তাঁদের লক্ষ্য। তাঁরা সব রকম সতর্কতা অনুসরণ করছেন। ডাচ অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, 'ভ্যান দে ভেল্ড কিন্তু সর্বক্ষণই এই ঘটনা নিয়ে স্পষ্ট থেকেছে। ও স্বীকার করেছে, এটা ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। ও অত্যন্ত দুঃখিত।' বিবিসিকে আলাদাভাবে কমিটি জানিয়েছে, 'ভ্যান দে ভেল্ড দীর্ঘদিন পেশাদার মনোবিদের কাছে ছিল। অনেকটাই উন্নতি করেছে।'
স্টিভেন নিজে কী বলছেন? একাধিক সাক্ষাৎকারে স্টিভেন বলেছেন, তিনি নিজেও তখন অল্পবয়সী। জীবনে কোনও লক্ষ্য ছিল না। হতাশ ছিলেন। এমন একটা কাজ করেছেন, যেটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। এতে অবশ্য বিরোধীরা মানছেন না। সর্বস্তরে আওয়াজ উঠেছে, এভাবে একজন ধর্ষক অলিম্পিকে সুযোগ পেলে তো ক্রীড়াবিদদের রোল-মডেল হওয়ার সংজ্ঞাটাকেই পাল্টাতে হবে। দাবি উঠেছে, স্টিভেনকে সরানো হোক। যদিও অলিম্পিক আয়োজকরা এখনও অবধি সূচি বদলাচ্ছেন না। এই ব্যাপারে তাঁরা ডাচ অলিম্পিক কমিটির ওপর ভরসা রেখেছেন। আগামীকাল, রবিবার ম্যাথু ইমার্সের সঙ্গে জুটি বেঁধে নামছেন স্টিভেন। প্রতিপক্ষ ইতালির অ্যালেক্স র্যানগিয়েরি এবং আদ্রিয়ান কারাম্বুলা।