জসপ্রীত বুমরাহ-মহম্মদ সামি
শেষ আপডেট: 21st February 2025 16:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতের ক্রিকেট টিমের ড্রেসিং রুমের যা পরিস্থিতি, তাতে তারকা খেলোয়াড়দের একজোট করে অনায়াসে ‘শোলে’র (Sholay) ব্লকবাস্টার রিমেক বা সিক্যুয়েল বানিয়ে ফেলা সম্ভব। তাতে ঠাকুর (Thakur) এবং বীরুর (Veeru) রোলে রোহিত আর বিরাটকে বেছে নিতে পারেন যে কোনও দুঁদে পরিচালক। ক্যারিশমা, আগ্রসন আর ‘ক্রাউড-পুলিং’ আবেদনের জন্য বুমরাহকে (Jasprit Bumrah) বাছা যেতে পারে গব্বরের (Gabbar) রোলে। আর জয়ের চরিত্রে খাপে খাপ মিলে যেতে পারেন মহম্মদ সামি (Mohammed Shami)। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা, অথচ সেই ঠিকরানো দীপ্তিটা নেই। শান্ত, মেদুর এক তারা। অথচ নিকষ কালো আঁধারে চির-উজ্জ্বল!
বাইনারির খেলা, বনামের রাজনীতিতে না ঢুকেও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, মহম্মদ সামি ভারতীয় ক্রিকেটের এমন তারকা, যিনি জন্মেছেন ভুল সময়ে। একজন সুপারস্টারের সমস্ত মশলা মজুত। অথচ কেরিয়ারের বেশির ভাগ সময় রয়ে গেলেন জসপ্রীত বুমরাহ নামক তেজোময় জ্যোতিষ্কের প্রচ্ছায়ায়।
কী হত যদি সামি সাত, আট বা নয়ের দশকের ভারতীয় ক্রিকেট টিমে জায়গা পেতেন? সেই জমানার নিবিষ্ট ক্রিকেট্মোদীর নিশ্চয় মনে পড়ে যাবে, অধিনায়ক সুনীল গাভাসকারের হাতে বল নিয়ে প্যান্টে ক্রমাগত মুছে চলার দৃশ্য। যাতে লাল বলের শাইন আরেকটু কমে, আরেকটু ভোঁতা হয়। যাতে স্পিনাররা হানতে পারে আঘাত। শুধু জার্সি কিংবা ট্র্যাক প্যান্ট নয়, পেসারদেরও বলের জেল্লা মোছার কাজেই দীর্ঘদিন কাজে লাগানো হয়েছে! ভারতীয় ক্রিকেট অতীতে কখনওই সিমারদের তেমন রমরমা ছিল না। বরাবর স্পিনারদেরই আধিপত্য। এমনকি জাহির খানের মতো তারকাও যখন ‘উদীয়মান’, যখন ‘মধ্যগগনে’ শ্রীনাথ, তখনও মনোজ প্রভাকরের মতো পড়ন্ত বেলার নাবিককে বয়ে বেড়িয়েছে ভাঙা তরীর টিম ইন্ডিয়া! সেই প্রজন্ম যদি শামিকে পেত, তাহলে তাঁর ইমেজ, তাঁর লেগাসি কোন স্তর, কোন শিখর ছুঁত—সমর্থক ও ক্রিকেট গবেষকদের মনে এই সম্ভাবনাই ঘা মেরে চলে।
একটা ফেলে আসা অতীতে কী হতে পারত ভেবে কাজ নেই, এখন কেন হচ্ছে না—প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে রেকর্ড যখন সামির পক্ষেই কথা বলছে! ২০২৩-এর বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। শেষ তিনটি ওয়ার্ল্ড কাপেও শীর্ষে সামি। নিয়েছেন ৫৫টি উইকেট। শেষ তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে ভারত খেলেছে ২৮টি ম্যাচ। অথচ সবচেয়ে বেশি উইকেট দখল করেও সামি খেলেছেন ১৮টি ম্যাচ! কোন রহস্যে এটা সম্ভব হল? কী কারণে বঞ্চিত হলেন তিনি? গত বিশ্বকাপেও সবচেয়ে বেশি উইকেট যার ঝুলিতে তাঁকে কেন শেষ মুহূর্তে দলে ঢুকতে হয়? কেন এখনও ‘অটোমেটিক চয়েস’ হয়ে উঠতে পারেননি সামি?
আর এখানেই চলে এসেছে শোলের জয়ের সঙ্গে তুলনা। ছায়াছবির সবচেয়ে মৌনমুখর চরিত্র জয়। একটু উদাসী, ভাবুক, আত্মমগ্ন হিসেবেই পর্দায় হাজির হয় অমিতাভ অভিনীত জয়। সামির মধ্যেও যেন তারই কপিবুক ছাপ দেয় ধরা। না তাঁর বোলিং অ্যাকশন, না উইকেট নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রদর্শন—কোত্থাও ‘বুমরাহোচিত’ ঔদ্ধত্য, সেই গ্ল্যামার ঝলকে ওঠে না। বদলে তিনি স্রেফ নিজের কাজটুকু করে যান। কোনও পিআর টিমের ধার ধারেন না। নিজের ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্ক দানা বাঁধলেও সেটাকে প্রচারের আলোয় আসার কৌশল হিসেবে কাজে লাগান না।
আর এই কারণেই গব্বরের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যান জয়েরা। বুমরাহর খ্যাতিতে ম্লান হয় সামির গরিমা। হয়তো সত্যিই তিনি সেই হাতেগোনা সুপারস্টার খেলোয়াড়দের একজন, যিনি জন্মেছেন ভুল সময়ে।