শেষ আপডেট: 7th March 2025 18:31
২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালীন মহম্মদ সামি একটি অযাচিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। আসলে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলার সময় তিনি রোজা ভাঙেন এবং এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করেন। এই ঘটনার ইতিমধ্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। তবে সামি একা নন, গোটা বিশ্বে এমন অনেক অ্যাথলিট রয়েছেন, যাঁরা রমজান মাসে ম্যাচ চলাকালীন উপোস করেন না। এই তালিকায় সর্বাগ্রে নাম রয়েছে ইজিপ্টের ফুটবলার মহম্মদ সালাহের। বেশ কয়েকবার তিনি রোজা বন্ধ রেখেছেন। ২০১২ সালে অলিম্পিক্স চলাকালীন ব্রিটিশ রোয়ার মোয়ে সিবিহিও একই কাজ করেছিলেন।
সামির এই রোজা ভাঙার ঘটনায় সর্বভারতীয় মুসলিম জামাত সংগঠনের সভাপতি মৌলানা সাহাবুদ্দিন রাজভি বরেইলভি প্রকাশ্য সমালোচনা করেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই তারকা পেস বোলারকেও তিনি 'ক্রিমিনাল' বলে কটাক্ষ করেন। একথা অস্বীকার করা যায় না, রমজানে কেউ উপবাস রাখবেন কি না, সেটা তাঁর একেবারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আর মহম্মদ সামির মতো একজন ক্রিকেটারের কাছে এই উপবাস তো অনেক বড় একটা বিষয়। তবে এই পরিস্থিতিতে সকলের মুখে আপাতত একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। একজন অ্যাথলিটের কি আদৌ রোজা রাখা উচিত? এই ব্যাপারেই খোঁজ নিল দ্য ওয়াল।
উল্লেখ্য রমজান চলাকালীন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন যে উপবাস রাখেন, সেটাকেই রোজা বলা হয়। ইসলাম ধর্ম অনুসারে এই সময় টানা এক মাস দিনে ১৩ থেকে ১৮ ঘণ্টা নির্জলা উপোস পালন করেন। কিন্তু, ওই ব্যক্তি কোন জায়গায় বসবাস করছেন, তার উপরেও এই উপবাসের সময় নির্ভর করে।
বিশ্বের এমন অনেক অ্যাথলিট রয়েছেন যাঁরা উপবাস পালন করেই খেলাধুলো করেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের শরীরে জলের অভাব দেখতে পাওয়া যায়। এমনকী, ফিটনেস সংক্রান্ত একাধিক সমস্যাও আসতে শুরু করে। তবে সেটা যে নেহাতই ব্যক্তি নির্ভর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু, প্রশ্নটা হল যে আদৌ একজন অ্যাথলিটের রোজা পালন করে খেলতে নামা উচিত কি না? ২০১২ সালে জার্নাল অফ স্পোর্টস সায়েন্সে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, রমজানের উপবাস খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে শরীরে জল এবং গ্লুকোজের অভাব খেলোয়াড়দের অসুস্থ করে তোলে।
এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়েছিল, যে সকল খেলাধুলোয় শারীরিক কসরত জড়িয়ে থাকে, সেই জায়গায় রোজার উপবাস অবশ্যই পার্থক্য সৃষ্টি করে। বিশেষ করে এই উপবাসের শেষ সপ্তাহে তরুণ ফুটবলারদের ইয়ো-ইয়ো টেস্টের উপর অনেকটাই প্রভাব পড়ে। যদিও ২০২২ সালে নিউট্রিয়েন্টস পত্রিকায় আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, এই উপবাসের কারণে অ্যাথলিটদের নিম্নাঙ্গে শক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়।
তবে এক্ষেত্রে ২০০৭ সালে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। 'ইমপ্যাক্ট অফ রামাদান অন ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স ইন প্রফেশনাল সকার প্লেয়ার্স' শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, 'এই উপবাসের কারণে অ্যাথলিটদের গতি, স্বতঃস্ফুর্ততা, ড্রিবলিংয়ের গতি এবং সহ্যের ক্ষমতা (p<0.05) অনেকটাই হ্রাস পায়। রামাদান শেষ হতে হতে অনেকের এনার্জি স্তর অনেকটা কমে যায়। প্রায় ৭০ শতাংশ খেলোয়াড়রা মনে করেন যে এই উপবাস তাঁদের অনুশীলন এবং পারফরম্যান্সের উপর অনেকটাই প্রভাব ফেলে।'
এ তো গেল বিদেশের কথা। এবার ভারতীয় প্রেক্ষাপটের বিচারে বিষয়টা আলোচনা করা যাক। ভারতেও এই বিষয় নিয়ে কোনও ব্যতিক্রমী মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে খেলা এবং ব্যক্তিবিশেষে তাঁদের পারফরম্যান্স নির্ভর করে। তবে ম্যাচের সূচি এবং কার মধ্যে উপোস করার কতটা ক্ষমতা রয়েছে, তার উপরেও অনেককিছু নির্ভর করে। মহম্মদ সামির রোজা ভাঙা প্রসঙ্গে বাংলার প্রাক্তন ফুটবলার রহিম নবি বললেন, 'এটা ওর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি মুসলিম বলেই যে রোজা রাখতে হবে, এমন তো কোনও ব্য়াপার নেই। তাছাড়া সামি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল। দেশের জন্য খেলতে নেমেছিল। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ও রোজা ভাঙতেই পারে। এমন কোনও বড় ব্যাপার এটা নয়।'