কেএল রাহুলদের বিরুদ্ধে কি আগের মতোই জ্বলে উঠবেন স্টার্ক?
শেষ আপডেট: 5th May 2024 13:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সঞ্জীব গোয়েঙ্কা কী ভাবছেন এখন? চব্বিশ ঘন্টাও হয়নি। যুবভারতীতে মুম্বই সিটি এফসির কাছে একেবারে চুরমার হয়ে গিয়েছে মোহনবাগান সুপার-জায়ান্টস। রাত সাড়ে দশটার সময় ইএম বাইপাসের ধারে দাঁড়ালে মনে হবে, যেন কোনও বিখ্যাত ব্যক্তির স্মরণসভা শেষ হল। কাতারে কাতারে জনজোয়ার বেরিয়ে আসছে যুবভারতী ছেড়ে। অথচ কোনও উচ্ছ্বাস নেই, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, হতাশ। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই, এবার ক্রিকেট মাঠে বড়-ম্যাচ! ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সিএবি টুর্নামেন্ট নয়। বরং, ফুটবল আবেগ উস্কে দেওয়া আইপিএল ময়দানে আজ আবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের মুখোমুখি হতে চলেছে লখনউ সুপার-জায়ান্টস।
যুবভারতী বা কলকাতা থেকে লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামের দূরত্ব কতটা? রেল বা বিমানপথে মাপা ওই হাজার খানেক কিলোমিটারের ফারাকটা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন কলকাতার শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। নববর্ষের দিন কলকাতায় সবুজ-মেরুন জার্সি পরিয়ে কেএল রাহুলদের নামিয়েছিল গোয়েঙ্কাদের ম্যানেজমেন্ট। লাভ হয়নি। লখনউয়ের ১৬১ রানের জবাবে ফিল সল্টের দাপটে ১৫ ওভারেই জয় তুলে নিয়েছিল কেকেআর। কিন্তু তারপর আধ মাসে অঙ্ক অনেকটাই ঘুরে গিয়েছে। লখনউ আর কলকাতা এখন লিগ টেবলে দুই ও তিন নম্বরে আছে। দুই দলই আগের ম্যাচে রোহিত শর্মা, হার্দিক পাণ্ডিয়াদের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে এসেছে। বিশেষ করে ২০১২ সালের পরে প্রথমবার ওয়াংখেড়েতে গিয়ে মুম্বই-বধ করে এসেছে কেকেআর।
এই পরিস্থিতিতে লখনউয়ের ডুয়েল আজ নিঃসন্দেহে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে। ঘটনাচক্রে, আজই এই মরসুমে শেষবারের মত একানায় নামতে চলেছে লখনউ। এরপর তাদের সব ম্যাচই অ্যাওয়ে। শেষ ম্যাচটা অতএব জিতে শেষ করতে রাহুলরা মরিয়া থাকবেন। মার্কাস স্টোয়নিস ভাল ফর্মে আছেন। চেন্নাই-মুম্বই দুই দলের বিরুদ্ধেই ব্যাট হাতে নজর কেড়েছেন। অধিনায়ক রাহুল টুকটুক করে হলেও বড় রান তুলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। ওদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া নিকোলাস পূরণ আজ কিছু একটা করবেন আশা রাখাই যায়। সঙ্গী হতে পারেন অ্যাশটন টার্নার, আয়ুষ বাদোনি।
কিন্তু লখনউকে ভোগাচ্ছে চোট-আঘাত। শুরু থেকেই মায়াঙ্ক যাদব নেই। এই মরসুমে আর মায়াঙ্ককে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কুইন্টন ডি-কক হাতের চোটে বাইরে। বিশ্বকাপের আগে তাঁকে নিয়ে ঝুঁকি নেবেনা ম্যানেজমেন্ট। অ্যাশটন তাঁর জায়গায় আছেন। মায়াঙ্কের জায়গায় যশ ঠাকুরকে খেলানো হতে পারে। সঙ্গে রবি বিষ্ণোই আর নবীন উল-হক আছেন।
কেকেআর যদিও দলে বিশেষ রদবদল করছে না। মুম্বইতে অবশেষে ফর্মে ফিরেছেন মিচেল স্টার্ক। ওয়াংখেড়েতে ১৮ ওভারে যখন স্টার্ক বল করতে এলেন, আবার হৃৎকম্প শুরু হয়েছিল কলকাতা-ভক্তদের। এবারের আইপিএলে স্টার্ক যা বল করছেন, তাতে শেষ ওভারে নেহাত কপালের জোর না থাকলে আরসিবির বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতে না কলকাতা! মুম্বই তখন ১৩৮, পড়ে গিয়েছে সাত উইকেট, ক্রিজে টিম ডেভিড আর জেরাল্ড কোটজি। ১২ বলে ৩২ চাই। প্রথম বলেই ডেভিড ফাইন লেগের ওপর দিয়ে সুইপ করে ছক্কা হাঁকালেন! মনে হচ্ছিল, এবারেও বুঝি তীরে এসে আরব সাগরে ডুবতে হবে! কিন্তু তারপর শুরু হল স্টার্ক ম্যাজিক। পর পর দুই বলে ডেভিড ও পীযুষ চাওলাকে ফেরালেন স্টার্ক। ৫ নম্বর বলে যখন কোটজিকে পাশ কাটিয়ে মিডল স্টাম্প উড়ে গেল, গ্যালারিতে ক্যামেরা ধরল অ্যালিসা হিলিকে। স্টার্কের সহধর্মিনী, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া মহিলা দলের অধিনায়ক! যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
লখনউতে স্টার্কের এই ফর্মে ফিরে আসা ধরে রাখা যাবে কি? এখন এটাই প্রশ্ন। একানাতে এমনিতে ২০০-পার করা স্কোর ওঠে না। সেক্ষেত্রে বোলারদেরই বাড়তি ভূমিকা নিতে হয়। এদিকে ফিল সল্ট, নারাইন, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, রাসেল, রিঙ্কুদের চেনা লাইন-আপ তো থাকছেই। কিন্তু বোলারদের এই বধ্যভূমি আইপিএলে আজকের ম্যাচে সম্ভবত বড় ভূমিকা হতে চলেছে বোলারদেরই। বরুণ চক্রবর্তী, নারাইন, বৈভব অরোরার পাশাপাশি বলে রাসেলের ওপরেও আজ বাড়তি ভরসা করতে পারে কেকেআর। লখনউয়ের প্রাক্তন মেন্টর, বর্তমানে কলকাতার গৌতম গম্ভীরের চেনা মাঠ একানা। স্পিন অস্ত্রে শান দেওয়ার এই সুযোগ তিনি বোধ হয় ছাড়বেন না।