শেষ আপডেট: 13th April 2024 20:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতার তিন প্রধান ক্লাব যা পারল না, সেটাই করে দেখাল ভবানীপুর ক্লাব। ভারতে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিভা তুলে আনতে উদ্যোগী হয়েছে লা লিগা। আমদানি করা হয়েছে ‘ফুটবল ডেভলপমেন্ট প্ল্যান’।
এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ভবানীপুর এফসি প্রো ইন্ডিয়া সেন্টার অব এক্সেলেন্স। যার মূল উদ্দেশ্য, এ দেশের তরুণ, সম্ভাবনাময় ফুটবলারদের, নিজ-পদ্ধতিতে তালিম দেওয়া। ট্রেনিং করানো। ঠিক যে পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশ্ব ফুটবলকে তারা বহু ফুটবল-প্রতিভার সন্ধান দিয়েছে। যে ফুটবলাররা পরবর্তী সময়ে দাপিয়ে বেরিয়েছেন বিশ্বমঞ্চে। আর পুরো প্রকল্পই লা লিগার ‘গ্লোবাল টেকনিক্যাল ডিরেক্টর’ ও তাঁর টিমের মস্তিষ্কপ্রসূত।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন প্রদেশের ফুটবল-সংস্কৃতির সঙ্গে স্পেনীয় ফুটবলের নৈপুণ্য ও টেকনিকের সংমিশ্রন ঘটানো। এই বিশেষজ্ঞদের টিমে রয়েছেন স্পেনের মিগুয়েল কাসাল, যিনি ভারতের লা লিগা অ্যাকাডেমি ফুটবল স্কুলের ডিরেক্টর।
ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া সেন্টার অফ এক্সেলেন্স তিনটে বিষয়ে মন দিচ্ছে। তিনটে কাজ করছে। প্রথমত, লা লিগা অ্যাকাডেমি প্রদত্ত ফুটবল-পাঠ্যক্রম এএফসি ও লা লিগার অনুমোদিত কোচদের হাতে তুলে দেওয়া।
দ্বিতীয়ত, ‘স্টেপ আউট অ্যানালিটিক্স’-কে নিযুক্ত করা। বেঙ্গালুরু-জাত যে সংস্থা আই লিগের বিভিন্ন পেশাদার টিমের দেখভাল করে। তৃণমূল স্তর থেকে যুব পর্যায় পর্যন্ত ফুটবল অ্যানালিটিক্সের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে এই সংস্থা। কোথায় কী করতে হবে, কী করা দরকার, ধাপে-ধাপে সমস্ত পর্যবেক্ষণ করে তা শেষ পর্যন্ত তারা তুলে দেবে কোচ আর স্কাউটদের হাতে।
তৃতীয়ত, পেশাদারি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা। যারা কি না দেশজুড়ে অ্যাকাডেমি ম্যাচ, এআইএফএফ ‘ব্লু কাবস’ ও প্র্যাকটিস সেশন সম্প্রচার করবে।
অনুষ্ঠানে ভারতের লা লিগা অ্যাকাডেমি ফুটবল স্কুলের ডিরেক্টর মিগুয়েল কাসাল বলেন, ‘‘লা লিগা অ্যাকাডেমি ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি খুশি। এই দেশে আমাদের প্রচুর কর্মসূচী রয়েছে। আমরা একাধিক ভাবে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিতে ইচ্ছুক। যেমন সেন্টারে-সেন্টারে যাওয়া, কোচদের তালিম দেওয়া। আমরা তৃণমূল স্তরে বেশি করে জোর দিচ্ছি কারণ আমরা চাই লা লিগার ফুটবল পদ্ধতির সঙ্গে বেশি সংখ্যক কিশোর সহজাত হোক। সে ভাবে খেলুক। আমরা তাদের স্পেনীয় ঘরানা অনুযায়ী ফুটবল খেলাতে চাই, শেখাতে চাই। ভারতবর্ষের অন্যতম ফুটবলপ্রেমী শহরের নাম কলকাতা। তাই এই শহরকে নির্বাচন করতে আমাদের বিন্দুমাত্র সমস্যা হয়নি।’’
ভবানীপুর এফসি-র পক্ষ থেকে কর্ণধার সৃঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘বাংলাজুড়ে একাধিক ফুটবলার ডেভলপমেন্ট সেন্টার গড়বে ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া। বিভিন্ন জেলার নানা স্কুলে। সেই সব সেন্টার থেকে এআইএফএফ স্কাউটরা নিজের হাতে প্রতিভা বেছে নিতে পারবেন। যাদের তারপর নিয়ে যাওয়া হবে আমাদের এলিট প্লেয়ার ডেভলপমেন্ট সেন্টারে এবং শেষ পর্যন্ত ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে। সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে লা লিগা অ্যাকাডেমির সামগ্রিক পাঠ্যক্রম থেকে উপকৃত হবে প্লেয়াররা। যাদের তৈরি করা হবে এআইএফএফ এবং আইএফএ-র বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের জন্য। যেমন অনূর্ধ্ব ১৩, অনূর্ধ্ব ১৫ ও অনূর্ধ্ব ১৭।’’
স্টেপ আউট অ্যানালিটিক্স’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সায়ক ঘোষ বলেন, ‘‘এই গাঁটছড়ার মাহাত্ম্য সম্পূর্ণ আলাদা। তৃণমূল স্তরে পেশাদারি অ্যানালিটিক্স আমদানি করার ভাবনা, ভারতে এর আগে কেউ ভাবেনি। আমরা গর্বিত যে, বাংলা ফুটবলের জন্য কিছু করতে পারছি। আমাদের কাজের মাধ্যমে অবদান রাখতে পারছি। আমি নিশ্চিত যে, ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করছে, তা ফুটবলের উন্নতিতে শক্তিশালী অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে।’’
ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া অ্যাকাডেমির সিইও অপরূপ চক্রবর্তী আবার ভারতীয় ফুটবলে স্পেনীয় প্রভাবের বিষয়কে তুলে ধরছেন। জাভি-ইনিয়েস্তার দেশ থেকে প্রচুর কোচ এখন ভারতের বিভিন্ন ক্লাবে এখন কোচিং করান।
সেই প্রসঙ্গে অপরূপ বলেছেন, ‘‘আইএসএলের অধিকাংশ প্রথম সারির টিমে এখন স্পেনীয় কোচরা কোচিং করান। যাঁরা নিজেদের ট্যাকটিক্যাল জ্ঞান ও অননুকরণীয় খেলার স্টাইল আমদানি করেছেন ভারতে। কিন্তু সেই প্রগতিকে যদি সঠিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, একেবারে তৃণমূল স্তরের রন্ধ্রে স্পেনীয় ফুটবলের দর্শনকে রোপন করা প্রয়োজন। যাতে ছোট থেকে ভারতীয় ফুটবলাররা তার সঙ্গে সহজাত হয়ে যেতে পারে। আমরা যদি অল্প বয়সে আমাদের দেশের ফুটবলারদের ধমনীতে স্পেনীয় ফুটবল ঘরানাকে ঢুকিয়ে দিতে পারি, তা হলে ভবিষ্যতে যখন তারা স্পেনীয় কোচদের কাছে যাবে, অসুবিধায় পড়বে না। ছোট থেকে কোনও সিস্টেমকে আয়ত্ত্বে আনা সহজ। ২১ বছর বয়সে সেটি ওই ফুটবলার পারবে না, যতই তাকে আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক না কেন।’’
ইতিমধ্যেই এই অ্যাকা্ডেমির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্কুলকে কাজে লাগানো হবে। মেয়েদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আবাসিক শিবিরের পরিকল্পনা না থাকলেও পরবর্তীকালে সেটি ভাবা হবে। নামমাত্র খরচে এই অ্যাকাডেমির ডালপালা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে, সেটাই ভাবছেন আয়োজক কর্তারা।