কোনেরু হাম্পি
শেষ আপডেট: 11th March 2025 18:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দোম্মারাজু গুকেশ থেকে রমেশপ্রভু প্রজ্ঞানন্দ। ভারতে দাবার দুনিয়ায় নতুন ভোর এসেছে বললেও অত্যুক্তি হয় না। কিন্তু এরই মধ্যে লম্বা ছায়া বিস্তার করে কেরিয়ারের পড়ন্তবেলাতেও নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছেন যারা, তাঁদেরই একজন কোনেরু হাম্পি।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা দাবাড়ু হিসেবে র্যাপিড দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন। শেষ রাউন্ডে পরাস্ত করেন আইরিন সুকন্দরকে। এর আগে ২০১৯ সালেও বিশ্ব র্যাপিড দাবায় খেতাব জিতেছিলেন। ৩৭ বছরের হাম্পি ফের একবার সেরার শিরোপা মাথায় তুলে কামব্যাকের নতুন সংজ্ঞা লিখেছেন।
২০১৫ সালে মা হওয়ার পর দু’বছর প্রতিযোগিতার বাইরে ছিলেন হাম্পি। ফিরে আসেন ২০১৮-এ। তারপর মস্কোয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে অধরা খেতাব ফের মুঠোয় পোরেন তিনি।
মাতৃত্ব কতখানি প্রভাব ফেলেছে? সরিয়ে রেখেছিল দাবার দুনিয়া থেকে, সেখানে ফিরে আসতে কষ্ট হয়নি? হাম্পির বিশ্লেষণ খুব স্পষ্ট: মা হওয়াটা বাড়তি বোঝা নয়, তা আদতে বর্মের কাজ করেছে। আগের চেয়ে বেড়েছে ধৈর্য। আরও সহিষ্ণু হয়েছেন তিনি। চরিত্রে জুড়েছে আরও লড়াই করার মানসিকতা আর জেদ।
দক্ষিণী দাবাড়ু বলেন, ‘আমি মেয়েকে খুবই মিস করি। আমাদের টুর্নামেন্ট ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে চলে। তাই প্রায়শই ঘুরে বেড়াতে হয়। মেয়ে থাকে ওর দিদিমার কাছে। দুজনে একে অন্যের খুব কাছের হয়ে উঠেছে। দেখে খুবই ভাল লাগে।‘
এখন দেশের দাবা মহলে অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় একদিন উঠতি খেলুড়ে হিসেবে নাম করে নিয়েছিলেন। বিস্ময় প্রতিভা হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে সুখ্যাতি। ২০০২ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব অর্জন। সেই সময় হাম্পিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু।
২০১৪ সালে জীবনে আচমকা বাঁকবদল। অন্বেশ দেশাইকে বিয়ে করেন তিনি। পরের বছর কন্যাসন্তান, অহনার জন্ম। এরপর দাবাখেলা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি আমূল বদলে যায়। হাম্পির স্মৃতিচারণ: ‘আমার এখনও মনে আছে, ২০১৯ সালে যখন র্যাপিড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতি, তার আগে প্রায় দেড় বছর আমি খেলার মধ্যেই ছিলাম না। ২০১৭ সালে ব্রেক নিয়েছিলাম। ফিরে আসি পরের বছর ডিসেম্বরে। তখন প্রস্তুতি আর অধ্যবসায় আগের মতোই ছিল। কিন্তু আমি আগের চেয়ে আরও কঠিন মানুষ হয়ে উঠি। বাচ্চাকে মানুষ করা মানেই বিনিদ্র রজনী কাটানো। তখন বুঝেছিলাম, ঠিকঠাক খাবার ছাড়াও আমি কাজ করতে পারি। আগের বিষয়টা এমন ছিল না। কিছু একটা হলেই সেটা আমার পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলত। কিন্তু মাতৃত্ব আমায় মানসিকভাবে আরও বলিষ্ঠ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।‘
অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ার একটি ছোট অঞ্চলে বেড়ে ওঠেন হাম্পি। বাবার স্নেহচ্ছায়ায়, ছত্রচ্ছায়ায়। তখন সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট সেভাবে জাঁকিয়ে বসেনি। দাবার দামি বইপত্র জোগাড় করে জেরক্সের পর বাঁধিয়ে রাখতেন তাঁর বাবা। তারপর দাগিয়ে দাগিয়ে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দাবার প্রতিটি মুভ ধরে চলত প্রস্তুতি। সবকিছুর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন কোনেরু অশোক। ২০১২ সাল পর্যন্ত এভাবেই চালিয়ে যান। তারপর সফটওয়্যারের দুনিয়ায় প্রবেশ। বই ছেড়ে হাতে ল্যাপটপ তুলে নেওয়া।
এখন দেশের দিকে দিকে দাবা খেলার স্ফুরণ। বর্ণমালা শেখার আগে খুদেরা সিসিলিয়ান ডিফেন্স রপ্ত করে ফেলে। এমন পৃথিবীতে কোনেরু হাম্পি যেন এক বটবৃক্ষ। যিনি মাতৃত্বকে কোনও অজুহাত নয়, এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র হিসেবে জপে চলেন।