হার্দিক পান্ডিয়া
শেষ আপডেট: 7th March 2025 14:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যে কোনও উপন্যাসের সাব-প্লট থাকে; নায়কের পাশে রয়ে যান পার্শ্বনায়ক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের রূপকথার মতো উড়ান যদি আখ্যান হয়, তাহলে তার একাধিক নায়কের ভিড়ে লুকিয়ে রয়েছেন এমন এক চরিত্র, যিনি দলের জয়ে ভূমিকা নিয়ে চলেছেন অবিরত, অথচ কিছুতেই, কোনওভাবেই স্পটলাইটে আসছেন না। তাঁর নাম হার্দিক পান্ডিয়া।
চোট সারিয়ে কামব্যাক করা মহম্মদ সামির কামব্যাক নাকি বিরাটের উত্থান? স্পিনারদের আধিপত্য না শ্রেয়সের ধারাবাহিকতা? এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিম ইন্ডিয়ার এক্স-ফ্যাক্টর কে বা কারা—তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, বিতর্ক দেখা দেবে। কিন্তু তবুও তাতে উঠবে না হার্দিক প্রসঙ্গ।
এবার তাকানো যাক চলতি টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালের দিকে। অবিবেচকের মতো শট খেলে যখন বিরাট আউট হলেন তখন দলের স্কোর ২২৫/৫। ব্যাটিং গভীরতা থাকলেও সেমিফাইনালের চাপ, সামনে যখন জয়ের স্বাদ পাওয়া অস্ট্রেলিয়া, তখন ২৬৫ রানের লক্ষ্যও পাহাড়প্রমাণ ঠেকে। কিন্তু সেই সম্ভাব্য প্রেসারকে মুহূর্তে মুছে দিয়েছিলেন হার্দিক। ২৪ বলে ২৮ রানের ইনিংস। চোখধাঁধানো নয়, কিন্তু কার্যকরী। তিনটে ছক্কা, যার মধ্যে একটি দলের প্রধান স্পিনার অ্যাডাম জাম্পারকে মারা—এক লহমায় ম্যাচের ভোল বদলে দেয়। বিরাটের ৮৪ রান ভারতকে জয়ের দোরগোড়ায় এনেছিল, যা নিশ্চিত করেছিলেন সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামা বিতর্কিত এক পিঞ্চহিটার।
অথচ শুধু ব্যাটিং নয়, বোলিংয়েও নিজের পুরোটা নিংড়ে দিয়েছেন হার্দিক। কেরিয়ারে সেভাবে কখনওই ওপেনিং স্পেল করেননি। কিন্তু বুমরাহ দলের বাইরে চলে যাওয়ার পর সামিকে সঙ্গত দিতে গোড়াতেই তুলে নিয়েছেন বল, তাও অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী ওপেনার ট্র্যাভিস হেডের বিরুদ্ধে। নিট ফল: প্রথম ওভারে ১ রান, হেডকে অসহিষ্ণু করে তোলা এবং তারপরই বরুণ চক্রবর্তীর বলে চালিয়ে খেলতে গিয়ে লোপ্পা ক্যাচ। রেকর্ডে এতকিছু লেখা থাকবে না। রেকর্ড বলবে ট্র্যাভিসকে আউট করেছেন বরুণ। নবাগত স্পিনারের স্বীকৃতি এতটুকু কেড়ে না নিয়েও একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে—অজি ওপেনারকে ফেরানোর পেছনে হার্দিকের ওই ওভারের গুরুত্বও কিন্তু কম নয়!
সাতে ব্যাট করতে আসছেন এক ব্যাটসম্যান, যিনি চালিয়ে খেলে দলের জয় ৫০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে নিয়ে যাচ্ছেন—এই ঘটনা ক্রিকেটভক্তদের মনে আরও একটি নাম জাগিয়ে দিচ্ছে—অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। একুশ শতকের শুরুতে প্রতিস্পর্ধী অস্ট্রেলিয়া বাহিনীর ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠেছিলেন ‘গিলি’। ওয়ান ডে-তে ওপেনে নামলেও টেস্টে নীচের দিকে নামতেন আর এক লহমায় বিপক্ষের মুখ থেকে কেড়ে নিতেন গ্রাস।
আর এরই সূত্রে উঠতে শুরু করেছে আরও একটি প্রশ্ন—তেইশের বিশ্বকাপে যদি চোট পেয়ে মাঠের বাইরে না যেতেন হার্দিক, তাহলে কী হত? ফাইনালে একপেশে লড়াইয়ে হারাতে পারতেন কামিন্সরা? এই ‘যদি’-র কোনও নিশ্চিত সমাধান কোনওদিন মিলবে না। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল অলরাউন্ডারের সামনে আরও একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। সেই সুযোগ প্রতিশোধের, ফিরে আসার, প্রায়শ্চিত্তের।
সেই সঙ্গে জবাব দেওয়ারও নয় কি? আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক। গত মরশুমে যে দল সবার পিছে, সবার নীচে রেস শেষ করেছে। টানা ১০ ম্যাচ পরাজয়। সিজন শেষে মাত্র ৪টি জয়। ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দর্শকদের সমবেত বিদ্রুপ শুনে যাওয়া। টি-২০ বিশ্বকাপ জিতে সেই অপমানের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন হার্দিক। নিন্দুক, সমালোকদের বোলতি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের বৃত্ত এখন পূরণ হয়নি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়েই তা সম্ভব।
হার্দিক আর ক্রুনাল—পান্ডিয়া ভাইদের চোখের সামনে বেড়ে উঠেতে দেখেছেন কিরণ মোরে। বরোদার অ্যাকাডেমিতেই প্রশিক্ষণ নিতেন দু’ভাই। হার্দিকের এই পারফরম্যান্স এবং তৎসত্ত্বেও আড়ালে রয়ে যাওয়ার ঘটনায় মোটেও অবাক নন প্রাক্তন ক্রিকেটার। ভারতের অলরাউন্ডারকে ‘সিংহহৃদয়’ আখ্যা দিয়ে মোরে জানান, ‘গত ছ-সাত মাস ধরে বোঝাই যাচ্ছে হার্দিক খেলাটা উপভোগ করছে। হার্দিক কারও বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ পুষে রাখে না। ক্ষমা করে আর এগিয়ে যায়।‘
ওয়াংখেড়ের বিদ্রুপ, টক শো-এ মন্তব্যের জেরে ‘সেক্সিস্ট’ তকমার একপ্রস্থ জবাব পেয়েছিল বার্বাডোস। পুরোপুরি ধার মিটবে দুবাইয়ে। অপেক্ষায় হার্দিক অনুগামীরা।