প্রথম ম্যাচ কাসপারভ জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে সব্বাইকে হতচকিত করে জয় ছিনিয়ে নেয় ডিপ ব্লু। অভাবনীয় কৌশলে কাসপারভ কিস্তিমাত!
গ্রাফিক্স: দিব্যেন্দু দাস
শেষ আপডেট: 4 July 2025 11:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অতিসম্প্রতি ডি গুকেশের খেলার শৈলী নিয়ে নজরটানা কথা বলেছেন প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও কিংবদন্তি দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভ। তাঁর চোখে, বছর উনিশের দক্ষিণ ভারতীয় খেলোয়াড়ের চালের ধরন অনেকটা কম্পিউটারের মতো! যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত গুকেশ লড়ে যান। মনঃসংযোগে সামান্যতম ঘাটতি থেকে পালটা থাবা বসান, লড়াইয়ে প্রত্যাবর্তন করেন!
রাশিয়ান দাবাড়ুর কথায়, ‘গুকেশ এমন খেলোয়াড়, যাকে হারানো খুব কঠিন। প্রতিটি ম্যাচে অনেকবার জীবন ফিরে পায়। ওর ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কম্পিউটারের তুলনা চলতে পারে। সম্ভবত, দুনিয়ার সবচেয়ে নমনীয় দাবাড়ুর নাম গুকেশ। বিতর্কিত নরওয়ে টুর্নামেন্টে ম্যাগনাসের বিরুদ্ধে ম্যাচটাই যদি দেখেন… আমি অন্তত কোনওদিন ওকে (কার্লসেনকে) +৩ কিংবা +৪-এর অ্যাডভান্টেজ নিয়ে হারতে দেখিনি।’
এরপরই কম্পিউটারের প্রসঙ্গ তুলে কাসপারভ বলেন, ‘মেশিনের বিরুদ্ধে খেলতে বসে যে মুহূর্তে মনঃসংযোগ হারালে, সেই মুহূর্তে তুমি শেষ। গুকেশকে হারাতে গেলে তাই একবার নয়, পাঁচবার খতম করা প্রয়োজন।’
বস্তুত, কম্পিউটারের তুলনা আলটপকা, অযথা তুলে ধরেননি কাসপারভ। প্রসঙ্গটা টেনেছেন নিজের অতীতের অভিজ্ঞতা ছেঁকে। এক সময় নিজে বসেছিলেন দাবার আসরে, যেখানে বোর্ডের উল্টোদিকে কোনও দাবাড়ু নন, ছিল উন্নত কম্পিউটার।
আজকের দুনিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জলভাত হলেও ১৯৯৭ সালে ছবিটা অন্যরকম। একুশ শতক তখনও ডানা মেলেনি। প্রযুক্তির উন্মেষকাল। সেই সময় খেলার দুনিয়ায় ছকভাঙা কাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন গ্যারি কাসপারভ। শুধু বোর্ডের খোপে নয়, দাবার ছক ছাড়িয়ে শুরু হয়েছিল এক নতুন লড়াই—মানুষ বনাম যন্ত্রের বুদ্ধির সংঘাত। গ্যারি কাসপারভ, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং দাবা ইতিহাসের অন্যতম সেরা গ্র্যান্ডমাস্টার, মুখোমুখি হন আইবিএমের তৈরি সুপারকম্পিউটার ‘ডিপ ব্লু’-র। এই ম্যাচ ছিল প্রযুক্তিকোষ বনাম মানবমস্তিষ্কের ঐতিহাসিক দ্বৈরথ—যা আজও স্মরণীয়, বিতর্কিত এবং অধুনা ডালপালা মেলে চলা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক মোড় ফেরানো ঘটনা!
একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে রাশিয়ার) দাবা জাদুকর গ্যারি কাসপারভ। ১৯৮৫ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন। আশ্চর্য গেম সেন্স, কৌশল আর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে জুড়ি মেলা ভার।
অন্যদিকে আইবিএমের তৈরি বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন সুপারকম্পিউটার ডিপ ব্লু। যে কিনা এক সেকেন্ডে প্রায় ২০ কোটি চাল বিশ্লেষণ করতে দড়। তাকে বানানোি হয়েছিল কেবল কাসপারভকে হারানোর উদ্দেশ্যে!
প্রথম লড়াই আয়োজিত হয় ১৯৯৬ সালে। ছয় ম্যাচের সিরিজের ফলাফল বুঝিয়ে দেয়: অ্যাডভান্টেজ কাসপারভ। ৪–২ ব্যবধানে রাশিয়ার দাবাড়ু জয় ছিনিয়ে নেন।
দ্বিতীয় দ্বৈরথে শুধু ফল নয়, ইতিহাস যায় বদলে! পরের বছর, ১৯৯৭ সালের মে মাসে আবারও মুখোমুখি হন দুজন। এবার ডিপ ব্লু-কে আরও মাজাঘষা করা হয়। উন্নততর পজিশন বিশ্লেষণ, বিস্তৃত ডেটাবেস এবং নতুন কৌশলগত অ্যালগরিদম নিয়ে সেজে ওঠে আইবিএমের সুপারকম্পিউটার।
প্রথম ম্যাচ কাসপারভ জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে সব্বাইকে হতচকিত করে জয় ছিনিয়ে নেয় ডিপ ব্লু। অভাবনীয় কৌশলে কাসপারভ কিস্তিমাত! ম্যাচ হেরে বিড়ম্বিত ও বিস্মিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আড়ালে মানুষের হস্তক্ষেপের অভিযোগ পর্যন্ত তুলেছিলেন! পরবর্তী ম্যাচেও এই পরাজয়ের রেশ বজায় থাকে। কাসপারভ বেশ কয়েকটি লড়াই ড্র করেন এবং আবারও একবার হেরে যান।
অন্তিম ফলাফল: ৩.৫–২.৫ ব্যবধানে ডিপ ব্লু টুর্নামেন্ট জেতে! পরাস্ত হন গ্যারি কাসপারভ! এরপর থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন অভিযাত্রা শুরু। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় উৎসাহ ও বিনিয়োগ অনেক গুণ বেড়ে যায়।