দুই দলের নজর বাঙালিয়ানা ও বাঙালি আবেগে।
শেষ আপডেট: 14th April 2024 16:19
দল লখনউয়ের। নবাব সাদাৎ খাঁ, সুজা-উদ-দৌলা, আসফ-উদ-দৌলা, ওয়াজিদ আলি শা, বেগম হজরত মহলের শহর আজ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মুখোমুখি। কিন্তু বাংলা নববর্ষের দিনে কলকাতার মুঘলাই রেস্তোরাঁয় বিরিয়ানির জন্য লাইন পড়লেও, বিরিয়ানির শহরের দলে ঘি-মাংসের চেয়েও যেন বেশি মিশে রয়েছে বাংলার মিষ্টি দই। শহরের মালিক যে কলকাতার!
বাঙালি আবেগ মোক্ষম বোঝেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। হালখাতার দিনে তাই ইডেনে নিজের দল নামানোর আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, লখনউ সুপার-জায়ান্টস আজ খেলবে মোহনবাগানের সবুজ মেরুন জার্সি পরে। কলকাতায় ঢুকে পড়েই এক্স হ্যান্ডলে লখনউ বাংলায় লিখে দিয়েছে, 'দেখা হবে'। মোহনবাগানের প্রধান বিনিয়োগকারী ও 'মোহনবাগান সুপার-জায়ান্টস' দলের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা মাঠের বাইরেও কড়া চ্যালেঞ্জে ফেলতে চলেছেন কলকাতাকে। নববর্ষের বিকেলে তাই খোদ শাহরুখ খান নিজের বক্সে হাজির থাকবেন জেনেও অতএব চিন্তা যাচ্ছে না কলকাতা ম্যানেজমেন্টের।
প্রশ্ন উঠতে পারে, আদৌ কি বাঙালি আবেগ কাজ করবে এখানে? লখনউ দলের মালিকই শুধু কলকাতার। ঘটনাচক্রে তিনি আবার ভারতের শতাব্দীপ্রাচীন, বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল ক্লাবটির সঙ্গেও জড়িয়ে। কিন্তু তারপর? ক'জন বাঙালি খেলোয়াড় আছেন লখনউতে? এবার এই প্রশ্নের সোজা জবাব কোনও কলকাতা-ভক্তের কাছে নেই। কারণ কেকেআরেও সেই একই সমস্যা। নামেই কলকাতা! একজনও কি বাঙালি আছেন? আইপিএল শুরুর দিনে আইকন হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন। ঋদ্ধিমান সাহা, অশোক দিন্দা, দেবব্রত দাস, মনোজ তিওয়ারি, লক্ষ্মীরতন শুক্লরা খেলেছেন। ওপার বাংলার সাকিব আল হাসানও খেলে গিয়েছেন। এখন সেসব অতীত। বহুদিন হল, বাঙালি ক্রিকেটারদের খেলানোর পাট তুলে দিয়েছেন নাইট সিইও বেঙ্কি মাইসোর। কলকাতার সমর্থকদের মধ্যেও দেখা যায়, সেই অর্থে ফুটবল-ভক্তদের মত গ্রাম-মফস্বল উজাড় করা বাঙালি নেই। শহরের অবাঙালি জনতা বরং অনেক সপ্রতিভভাবে পাশে থাকেন।
কেউ হয়ত বলবেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের সমর্থকভিত্তি ফুটবলের মত শিকড়গাঁথা হবে কীভাবে? এতেও গলদ। আইপিএলেই গাদা গাদা উদাহরণ আছে। চেন্নাই সুপার-কিংস যেমন। কিংবদন্তীর মত জনসমর্থন তাদের। তাও তাদের রেকর্ড ঈর্ষণীয়। আইপিএলের পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু? একবারও আইপিএল না জেতা দলের ভক্তসমাগম দেখলে যে কোনও প্রতিপক্ষ চিন্তায় পড়বে। কলকাতায় এখন পর পর পাঁচটা ঘরের ম্যাচ। এদিকে আজ থেকেই সামনের রবিবার বিরাট কোহলিদের ম্যাচ নিয়ে টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে।
ফলে বলাই বাহুল্য, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা আঁটঘাঁট বেঁধেই নেমেছেন। 'এটিকে' উঠে গিয়েছে। মোহনবাগান দুর্দান্ত খেলছে। আগের ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসিকে চার গোল মেরেছে। ফলে লখনউ আজ মোহনবাগানের জার্সিতে নামলে শহরের বাগান সমর্থকরা কি গঙ্গাপারের মাঠে এক সন্ধ্যার জন্য গোমতীপারের দলের হয়ে গলা ফাটাবেন? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অন্তত এতে তো সন্দেহ নেই, তুল্যমূল্য বিচারে একশো বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মিশে থাকা সবুজ মেরুন বা তাদের প্রতিপক্ষ লাল হলুদ জার্সির কাছে আইপিএলের মত বিনোদনসর্বস্ব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের বেগুনি-সোনালি জার্সি কিছুই না।
এই একই দ্বন্দ্বে পড়তে পারেন গৌতম গম্ভীর। কলকাতাকে দুইবার চ্যাম্পিয়ন করেছেন। কিন্তু লখনউ দল গড়ার পরে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার নেতৃত্বাধীন ম্যানেজমেন্ট তাঁকে মেন্টর করে নিয়ে গিয়েছিল। তাতেও সাফল্য এসেছে। এবার গম্ভীরকে মেন্টর হিসেবে নিয়ে এসেছে কলকাতা। গম্ভীরের কাছে ঘরে ফেরা হলেও, দুই বছরের পুরনো ঘরের বিরুদ্ধে কি আবেগ একটুও কাজ করবে না? গম্ভীর যদিও ওসবে কান দিচ্ছেন না। সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, 'আমাকে তো ওরা ভালই চেনে। তাতে চাপের কিছু নেই। আইপিএলে সবাই সবাইকে চেনে। আমিও যে ওদের জন্য আলাদা কিছু পরিকল্পনা করছি এমন নয়। জেতার জন্য যেটা দরকার, সেটাই করব।'
ঘরের মাঠে অ্যাডভান্টেজ হলেও কেকেআরকে চিন্তায় রাখছে রেকর্ড। এখনও অবধি তিনবার মুখোমুখি হয়েছে লখনউ ও কলকাতা। তিনবারেই হেরেছে কেকেআর। যদিও খুব অল্প ব্যবধানে। কিন্তু হারের নিরিখে ধরলে, এটা খুবই নড়বড়ে রেকর্ড। ওপরে সুনীল নারাইন-ফিল সল্ট ঠিক মত না দাঁড়ালে বা একটা চেনা রাসেল ঝড় না এলে সেই রিঙ্কুর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে কলকাতাকে। সবুজ-মেরুন জার্সি পরানোর চাল কাজে লাগলে ঘরের মাঠে সমর্থক নিয়েও জেরবার হতে পারে কেকেআর। মাঠ বা মাঠের বাইরে, সর্বত্রই বাঙালিয়ানায় পাখির চোখ রাখছে লখনউ।