শেষ আপডেট: 10th March 2025 12:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গতকাল রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে চার মারলেন রবীন্দ্র জাদেজা। জয়সূচক বাউন্ডারি। তারপর উত্তেজিত ভঙ্গিতে দৌড়ে গেলেন আর সেই সঙ্গে ভারতের আকাশ সেজে উঠল অকাল-দিওয়ালির আলোকমালায়।
উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে কেএল রাহুল। চাপের মুখেও স্থিতধী। জাদেজার মতো উল্লাসে ফেটে পড়লেন না। হাত দুটো মুঠো করে উপরে তুললেন মাত্র।
ডাগআউট থেকে ড্রেসিং রুম—দলের জয় নিশ্চিত হতে না হতেই বাঁধভাঙা আনন্দে ফেটে পড়েছে গোটা দল। প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে নামা হর্ষিত রানা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচ থেকেই মাঠের বাইরে, জায়গা করে দিয়েছেন বরুণ চক্রবর্তীকে। কিন্তু গতরাতের আনন্দযজ্ঞে নিজেকে ব্রাত্য করে রাখেননি তিনি। কোনও হিংসা নেই, চাপা অভিমান নেই, নেই ব্যক্তিগত বিদ্বেষ-আক্রোশও। ১২ বছর বাদে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের উৎসবে সামিল সকলে।
এমনকী কোচ গৌতম গম্ভীরও। এমনিতে খোলসে থাকতে ভালবাসেন তিনি। মিডিয়ার সামনে হাশিখুশি, প্রাণবন্ত মেজাজে ধরা দিলেও চরিত্র ভেঙে বেরিয়ে আলটপকা কিছু কোনওদিন করেননি। গতকাল বরুণ চক্রবর্তী, ওয়াশিংটন সুন্দরদের সঙ্গে তাঁকেও দেখা গেল হুল্লোড়ে মেতে উঠতে। দুবাইয়ের ময়দান জুড়ে ততক্ষণে বাজতে শুরু করেছে ‘লেহরা দো’, ‘চাক দে ইন্ডিয়া’র জয়ধ্বনি।
জিততে গেলে তুলতে হবে ২৫২ রান। অঙ্কের হিসেবে খুব বড় টার্গেট নয়। কিন্তু ফাইনালের চাপ আর দুবাইয়ের থমকে যাওয়া উইকেটের কথা মাথায় রাখলে এটাই পাহাড়প্রমাণ মনে হতে পারত।
মনে হয়নি, তার একটা বড় কারণ রোহিত শর্মা। ঘরে-বাইরে চাপে থাকা মুম্বইকরের ব্যাটিং কৌশলকে ফাইনালের আগের দিনই সমালোচনা করেছিলেন সুনীল গাভাসকার। জানিয়েছিলেন, ইমপ্যাক্ট নয়, বড় রানের কথা চিন্তা করুক রোহিত। দ্রুত রান তোলার চক্করে ওপেনে মেনে ২০-২৫ রানে আউট না হয়ে ২০-২৫ ওভার টিকলে বেশি প্রভাব পড়বে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যেন এই রণকৌশল বেছে নেন তিনি।
সুনীলের উপদেশ, প্রথম ওভার থেকেই বোঝা যায়, ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি ভারতীয় ওপেনার। প্রতি আক্রমণের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেন। সঙ্গত দেন আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে পয়লা নম্বর ব্যাটার শুভমান গিল। একজন দ্রুত রান তোলেন, অন্যজন ধরে খেলেন। টিমের স্কোরও শতরানের গণ্ডী পেরিয়ে যায়।
এরপর ম্যাচে কামব্যাক করে কিউয়িরা। মিডল ওভারে চেপে ধরে নিউজিল্যান্ডের তিন স্পিনার। দুটো টাইট ওভার। অসহিষ্ণু হয়ে চালিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে বসেন রোহিত। নামার পরেই বিরাট আউট। তারপর শুভমান। ১০৫/০ থেকে চকিতে ১২২/৩। লড়াইয়ে কামব্যাক করেন উইলিয়ামসনরা। দলের চিরাচরিত ব্যাধি ফের একবার প্রকট করে তোলে কিউয়িদের ধারালো স্পিন-অস্ত্র।
এরপরই হাল ধরেন শ্রেয়স। সঙ্গী অক্ষর। ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ। ম্যাচে ফের কাম্যবাক করে টিম ইন্ডিয়া। স্পিনারদের পালটা আক্রমণ শুরু করেন শ্রেয়স। ঝুঁকি নেন। সাহসের প্রতিদানও পান। চাপের মাথায় ক্যাচ মিস করে নিউজিল্যান্ড দল। ৬২ বলে ৪৮ রানের ঠান্ডা মাথার দরকারি ইনিংস খেলে আউট হন আইয়ার।
তখনও দরকার ৬৯ রান। জয় কাছে, কিন্তু তখনও নিশ্চিত নয়। তীরে এসে তরী ডুববে না তো? দুবাইয়ের বাতাসে যখন পাক খেয়ে চলেছে আশঙ্কার বাতাস, তখন এতদিনের ক্রিকেটীয় বুদ্ধি, পরিণতি ও অভিজ্ঞতা দেখিয়ে জয় হাসিল করেন জাদেজা। দমচাপা টেনশন থেকে রেহাই পান স্টেডিয়াম ভিড় জমানো হাজারো ভারতীয় সমর্থক। আর আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে ভারতের রাজপথ থেকে অলিগলি।