শেষ আপডেট: 4th March 2025 23:19
খুব বেশিদিন আগেকার কথা নয়। গত বছর আইপিএল টুর্নামেন্টের আসর। রোহিত শর্মাকে সরিয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল যে হার্দিক পান্ডিয়াকে দলের অধিনায়ক করা হবে। এই একটা সিদ্ধান্ত রাতারাতি হার্দিক পান্ডিয়াকে গোটা দেশের চোখে 'ভিলেন' করে দিয়েছিল। দেশের এমন কোনও স্টেডিয়াম ছিল না, যেখানে এই অলরাউন্ডারের নামে দুয়োধ্বনি ওঠেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্লা দিয়ে 'ছাপড়ি' হার্দিকের নামে চলেছে শাপ-শাপান্ত। তবে এই অধ্যায় হার্দিকের জীবনে আপাতত অতীত। আজ কান পাতলে শুধুমাত্র একটাই স্লোগান শুনতে পাওয়া যায়। যতই বিপদ আসুক চারদিকে, ভরসা থাকুক হার্দিকে।
হার্দিকের ক্রিকেট কেরিয়ারে এই দুটো ছবি একেবারে বিপরীতধর্মী। গত আইপিএল টুর্নামেন্টে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স একেবারে ভাল পারফরম্যান্স করতে পারেনি। আর সেকারণে সবথেকে বেশি তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল অধিনায়ক হার্দিককেই। কী হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে। মাঠে তো প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিলই, এমনকী তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়েও আকাশকুসুম কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি নিয়ে মেতে উঠেছিল গোটা দেশ।
এরপর এল ২০২৪ টি-২০ বিশ্বকাপ। ফাইনাল ম্যাচে অধিনায়ক রোহিত শর্মা সেই হার্দিকের হাতেই বলটা তুলে দিলেন। ভরসা ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই 'ছাপড়ি' গোটা দেশের মান রাখতে পারবে। হলও তাই। প্রথমে বাউন্ডারি লাইনে সূর্যকুমার যাদবের এই অবিস্মরণীয় ক্যাচ এবং শেষপর্যন্ত ভারতের জয়। এই জয়টাই গোটা দেশের কাছে হার্দিকের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করে দিয়েছিল।
আরও একটি আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলছে ভারত। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ফাইনালের টিকিট ইতিমধ্যে কনফার্ম করে ফেলেছে টিম ইন্ডিয়া। শেষ চারের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ভারত। ৮৪ রানে যখন বিরাট কোহলি আউট হয়ে ফিরে গেলেন, সেইসময় ভারতের জয় অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। সেইসময় আবারও ভরসার হাতটা বাড়িয়ে দিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। বললেন, 'কোনও চিন্তা নেই। আমি তো আছি।'
গোটা দেশের রক্তচাপ তখন হুড়মুড়িয়ে ঊর্ধ্বমুখী। ভারতের জয়ের জন্য দরকার ২১ বলে ২৪ রান। টার্গেট করলেন অস্ট্রেলিয়ার সেরা স্পিনার অ্যাডাম জাম্পাকে। ৪৭ ওভারে শেষ দুটো বলে বিশাল বিশাল ছক্কা হাঁকালেন তিনি। আর এই জোড়া ছক্কাই টিম ইন্ডিয়ার জয় মোটামুটি নিশ্চিত করে দেয়। ড্রেসিংরুমের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বিরাট কোহলি যখন উল্লসিত হয়ে উঠছিলেন, তখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সেই সমর্থকরা হয়ত হাত কামড়াচ্ছিলেন। সামান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের জন্য একজন দেশনায়ককে যেভাবে অপমান করেছিলেন, তারজন্য কোনও ক্ষমাই হয়ত যথেষ্ট নয়। তবে সময় সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। মিলিয়ে দেয় ক্ষতর দাগ। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে সেই 'ছাপড়ি' পান্ডিয়ার জন্য চিরকাল হয়ত বেজে যাবে, 'যতই বিপদ আসুক চারদিকে, ভরসা থাকুক হার্দিকে।'