শেষ আপডেট: 26th January 2025 15:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিনি বিশ্ব-ফুটবলের অন্যতম চাণক্য। ম্যাচ হেরে ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের তুলোধনা করার পর সাংবাদিকদের সামনে বসে ওই একই খেলোয়াড়াদের সুখ্যাতি গেয়ে যান। উএফা তাঁর লকার রুমে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করলে লন্ড্রি বাস্কেটে সেঁধিয়ে চলে যান দলকে ‘পেপ-টক’ দিতে। দশ জন খেলোয়াড় নিয়ে গোয়ার্দিওলার অশ্বমেধের ঘোড়া বার্সেলোনাকে আটকে ন্যু ক্যাম্পের সবুজ গালিচা ধরে ছুটে চলেন… তারপর টানা নব্বই মিনিট ব্রিদ্রুপে মজে থাকা শত্রুপক্ষের সমর্থকদের সামনে জয়োদ্ধত ভঙ্গিমায় উঁচিয়ে ধরেন ডান হাতের তর্জনী।
ফুটবলকে আরও রঙিন, আরও প্রাণময় করেছেন যারা, হোসে মোরিনহো তাঁদের অন্যতম। মোরিনহোর প্রেস কনফারেন্স মানেই বক্স-অফিস। মোরিনহোর ট্যাকটিক্স মানেই ছকভাঙা। তিনি বরাবর আন্ডারডগদের পক্ষে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। তাই অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক রণকৌশলকে যখন কেউ ‘পার্ক দ্য বাসে’র আখ্যা দেয়, তখন তার ড্রাইভার হিসেবে তিনি গর্ববোধ করেন। আস্ত একটা বাস চালিয়ে সমস্ত ব্যঙ্গোক্তির জবাব দেন।
আজ জোসে মোরিনহোর জন্মদিন। নীচে রইল তাঁর বলা ৫টি স্মরণীয় উবাচ:
১. ২০০৩ সাল। সদ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে পোর্তো। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি এত বড় সাফল্য পেতে চলেছে পর্তুগালের ক্লাবটি। মাস্টারমাইন্ড জোসে মোরিনহো। আর ঠিক তখনই ইংল্যান্ডের ফুটবলে পালাবদল ঘটছে। লন্ডনের ক্লাব চেলসিকে কিনেছেন রাশিয়ান ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ। একের পর এক তারকা ফুটবলারকে সই করাচ্ছে তারা। তখনই হোসে মোরিনহোকে কুর্সিতে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় চেলসি। আর প্রথম প্রেস কনফারেন্সে এসেই বোমা ফাটান পর্তুগিজ ম্যানেজার। তথাকথিত ব্রিটিশ ভব্যতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘোষণা করেন, ‘দয়া করে আমায় উন্নাসিক ভাববেন না। কিন্তু এখন যেটা বলতে চলেছি সেটা সত্যি… আমি একজন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ান। আমি মনে করি আমি একজন স্পেশাল ওয়ান!’ নিজের ঢাক নিজেই বাজানোর এমন ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতমই বটে!
২. ২০১৪ সালে অ্যাস্টন ভিলার বিরুদ্ধে লিগের ম্যাচ হেরে বসে চেলসি। দুজন চেলসির খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখেন। সেই ম্যাচের সাক্ষাৎকার দিতে এসে মোরিনহো রেফারির প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেন। কিন্তু একটিবারও সরাসরি নামও নেননি। নাম না করে তির্যকভাবে বলে চলেন, ‘আমি চাইব কিচ্ছুটি না বলতে। যদি কিছু বলে বসি, আমি চরম বিপদে পড়ব। রেফারিদের আর কী চিন্তা! তাঁরা ম্যাচ পরিচালনা করেন, বাড়ি যান, নিজেদের কাজকম্ম করেন। তাঁদের তো আর প্রেস কনফারেন্সে আসতে হয় না!’
৩. ২০১৪ সালে আর্সেন ওয়েঙ্গার দাবি করেন, চেলসি প্রিমিয়ার লিগ জেতার লড়াইয়ে আছে। কিন্তু পরাজিত হওয়ার ভয়ে তারা সেকথা স্বীকার করছে না। মোরিনহো একথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এবং সাফ জানান, ‘আর্সেন ওয়েঙ্গার ব্যর্থতার ‘বিশেষজ্ঞ’। আমি সেটা নই। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই উনি ঠিক আমি ভুল, তাহলে তার কারণ—আমি জীবনে বেশিবার ব্যর্থ হইনি। আট বছর যিনি তাঁর ক্লাবকে লিগ খেতাব জেতাতে পারেন না, তিনি অবশ্যই ব্যর্থ।‘
৪. ২০০৭ সাল। চেলসি বোর্ড ট্রান্সফার মার্কেটে তেমন অর্থ বিনিয়োগ করেনি। সই করেছেন দুজন মিডফিল্ডার—ফ্লোরেন মালৌদা এবং জুলিয়ানো বালেত্তি। লিগের শুরুতে ছন্দ হারিয়ে ফেলে চেলসি। যার প্রেক্ষিতে তিনি নতুন আসা প্লেয়ারদের বিঁধতে নিয়ে আসেন ডিম ও অমলেটের তত্ত্ব। মোরিনহো বলেন, ‘সবই ডিম আর অমলেটের কারবার। ডিম ছাড়া অমলেট হয় না। আবার ভালো অমলেটের জন্য চাই ভালো মানের ডিম। সুপারমার্কেটে তুমি ক্লাস ওয়ান, টু এবং থ্রি—এই তিন ধরনের ডিম পাবে। কোনওটা দামি, কোনওটা সস্তা। দামি ডিমে স্বভাবতই সুস্বাদু অমলেট ভাজা যায়। বাকিগুলোয় সেটা সম্ভবই নয়।‘
৫. মোরিনহো অন্যতম সেরা তোপ দেগেছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী গোয়ার্দিওলার বিরুদ্ধে। বার্সেলোনার বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার বলে বসেন, ‘যখন আপনি ফুটবল উপভোগ করেন, তখন মাথাভর্তি চুল থাকে। যখন উপভোগ করা বন্ধ করে দেন, তখন চুল ঝরতে থাকে। গোয়ার্দিওলা টেকো। তার মানে, ও খেলাটা একেবারেই ভালোবাসে না।‘