রত্নাকর শেঠী
শেষ আপডেট: 4 May 2025 19:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। আইসিসির মসনদে রয়েছেন যিনি, সেই জয় শাহও ভারতীয়। সংস্থার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা।
অথচ অধুনা স্ফীতোদর বিসিসিআইয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল কার্যত কপর্দকশূন্য অবস্থায়! তৎকালীন রাজারাজড়ার অনুদান না পেলে হয়তো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। মুম্বইয়ের একটি আলোচনাসভায় বিসিসিআইয়ের অতীত নিয়ে এমনই টুকরো টুকরো স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরলেন বোর্ডের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার রত্নাকর শেঠী।
পেশাগত জীবনে ছিলেন রসায়নের অধ্যাপক। ১৯৭৫ সালে ক্রিকেটের পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হন রত্নাকর৷ মুম্বইয়ের উইলসন কলেজে স্টাফ-ইন-চার্জ হিসেবে যোগ দেন। তারপর মহানগরীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের টুর্নামেন্ট কমিটির ম্যানেজার। সেখান থেকে বিসিসিআইয়ের মুখ্য প্রশাসনিক আধিকারিক। সবশেষে কেরিয়ারে ইতি টানেন জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে।
অন্যতম শীর্ষ পদে থাকার সৌজন্যে বিসিসিআইকে চোখের সামনে বেড়ে ওঠে দেখেন রত্নাকর। কেমন ছিল শুরুর দিনগুলো? স্মৃতির অতলে ডুব মেরে বলেন, ‘একটিমাত্র রুমের অফিস দিয়েই জার্নি আরম্ভ হয়। ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামের একটি ফ্লোরে কাজ চলত। একতলায় বোম্বে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অফিস। দোতলায় বিসিসিআই। ৫০০ বর্গফুটের রুমই ভরসা। এবার বুঝে নিন, কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছে তারা!’
শুধু পরিকাঠামো নয়। গোড়ায় টাকাপয়সার দিক দিয়েও ধুঁকতে হচ্ছিল। সেই সময় পাশে দাঁড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রাজপরিবার। কারা তারা? এখনও নাম মনে করতে পারেন রত্নাকর। বলেন, ‘প্রথম দিন থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এমএ চিদাম্বরম, মঙ্গলম চিন্নাস্বামী, পিএম রাঙতা এবং বরোদার গায়কোয়াড়। বিসিসিআইয়ের হাতে কোনও টাকা ছিল না। ট্রেজারির কাজ সামলাতেন দু'জন। তাও মিলিতভাবে টানা ৬৫ বছর ধরে! একজন জল ইরানি, যাঁর নামে পরে ইরানি ট্রফি চালু হয়৷ অন্যজন চিদাম্বরম৷ তাঁরা সবকিছুর হিসেবে কঠোর নজর রাখতেন। কর্মকর্তাদেরও বুঝেশুনে খরচ করতে বলতেন।’
ক্রিকেটারদের উপার্জন কেমন ছিল? ভরা আইপিএলের মরশুমে আলাপচারিতায় অবধারিতভাবে এই প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। সবাইকে অবাক করে তারও হিসেব মেলে ধরেছেন রত্নাকর। বলেছেন, ‘এখনকার উঠতি ক্রিকেটারদের হয়তো বিশ্বাস হবে না, কিন্তু সেই আমলে জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলে একজন ক্রিকেটার প্রতিদিন ৫০ টাকা পেতেন। রঞ্জি ক্রিকেটারদের জুটত দিন পিছু ৫ টাকা। কিন্তু সেসব নিয়ে কাউকে মুখ ভার করতে দেখিনি৷ রাজ্য কিংবা দেশ—দু’দলের জার্সি গায়ে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে খেলতে নামতেন তাঁরা। এই ধারাই ক্রমশ বয়ে চলে।’
আজ যে কোনও বিদেশি দল ভারত সফরে আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। যত লম্বা ট্যুর, তত বেশি উপার্জন, তত বেশি মুনাফা। কিন্তু আগে ছবিটা একদম অন্যরকম ছিল। রত্নাকরের কথায়, ‘আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডকে এদেশে আসার অনুরোধ জানালে তারা গ্যারান্টি মানির আর্জি জানাত। এখন ভারতের হাতেই মিডিয়া স্বত্ব। ফলে, বাকিদের কথা ভুলে যান, দুনিয়ার সেরা তিন টিমই এদেশে আসতে চায়।’