মশার উৎপাত সামলেই অনুশীলনে মগ্ন জুলিয়ান নাগেলসমানের দল।
শেষ আপডেট: 29th June 2024 19:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভাবা যায়! যে সমস্যাটা মোটামুটি আমাদের এতই দৈনন্দিন যে এটাকে 'সমস্যা' বলে ভাবতেই খানিক বাধো বাধো লাগে, এবার সেই সমস্যাতেই বেসামাল ইউরোর জার্মান বম্বাররা।
এবারের ইউরোতে অভিনব আয়োজন করেছে জার্মানি। প্রতিটি দল মূল ভেন্যুর কাছাকাছি কোনও ছোট শহরে শিবির ফেলেছে। জার্মানি ফুটবল দল রয়েছে বাভারিয়ার ছোট্ট শহর হারজোগেনৌরাখে। মাত্র হাজার পঁচিশ লোকের বাস। কাছাকাছি বড় শহর বলতে এরল্যাঙ্গেন। তবে ছোট শহর হলেও হেলাফেলা করার জায়গা নয় মোটেই। এই হারজোগেনৌরাখে রয়েছে পৃথিবীর দুই বিশ্ববিখ্যাত স্পোর্টস সরঞ্জাম সংস্থার সদর দফতর। আদিদাস ও পুমা।
এই হারজোগেনৌরাখে আদিদাসেরই বানানো একটি রিসর্টে রয়েছে জার্মান দল। গাছগাছালিতে ঢাকা এই অঞ্চল এককালে ছিল মার্কিন বাহিনীর সেনাঘাঁটি। পরে জায়গার খোলনলচে বদলে ফেলে আদিদাস। কিন্তু এখনও জঙ্গল অনেকটা রয়ে গিয়েছে। সেটা প্রকৃতির স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল কথা। কিন্তু জার্মানিতে এখন গরমকাল চলছে। তাপমাত্রা তিরিশের ঘরে। অল্প ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও হচ্ছে। আর্দ্রতা বেশ বেশি। অতএব খোশমেজাজে পুরো এলাকার দখল নিয়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে মশার দল!
এই মশক-বাহিনীর ব্লিৎজক্রিগ আক্রমণেই এবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে জার্মান ব্রিগেড। ডাই-মানশাফটের অন্দরে খবর, অবস্থা এমনই বেগতিক যে, সন্ধ্যের পরে নাকি রিসর্টে চলাফেরা করাই দায় হয়ে পড়েছে! তড়িঘড়ি ফুটবলারদের ঘরের জানালায় মশারি জাল লাগানো হয়েছে। হুকুম হয়েছে মশা-ছাড়ানো ক্রিম আনার। জার্মানি শিবিরে এতদিন নিয়ম ছিল, পুল-সাইডে বসে সবাই মিলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্য দলের ম্যাচ দেখতেন ফুটবলাররা। কিন্তু ম্যানুয়াল নয়্যার বলছেন, আপাতত সেসবে ইতি টেনে ফুটবলারদের বলা হয়েছে, যা দেখার টিম-রুমে বা যে যার নিজের ঘরে বসে দ্যাখো।
দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়া প্রদেশে এমনিতেই কিছুদিন আগে অতিবৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কিছু এলাকায়। তার ওপর গরমটা বেড়েছে। এতেই মশার উপদ্রবে জেরবার জার্মান আমজনতা। মশা তাড়ানোর ক্রিমের চাহিদা তুঙ্গে। কোচ জুলিয়ান নাগেলসমান জার্মান সাংবাদিকদের বলেছেন, 'বেনজির অবস্থা। মশার ঠেলায় সবাইকে ইন্ডোরে থাকতে বলেছি। একটু জোরে হাওয়া-টাওয়া না দিলে মশার উপদ্রব কমবে বলে মনে হচ্ছে না!'
কিন্তু সেদিকেও বিপদ। অবস্থা আরও বেগতিক করে জার্মানির কেন্দ্রীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, এই সপ্তাহান্তেই প্রবল ঝড়বৃষ্টি হতে পারে বাভারিয়াতে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি, সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের মত ঝোড়ো হাওয়া, এমনকি কোনও কোনও এলাকায় টর্নেডো সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। আজ ভারতীয় সময় রাত সাড়ে বারোটায় ডর্টমুন্ডে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচে নামছে জার্মানি। টিভির পর্দায় অতএব বৃষ্টি দেখতে পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে কি মশার তাড়না কমবে? অন্তত দিশি অভিজ্ঞতায় আমরা জানি, সাময়িক কমলেও জমা জল থেকে আবারও তেড়েফুঁড়ে বেড়ে উঠতে পারে মশকসেনা। এদিকে মশা তাড়াতে গিয়েও উটকো সমস্যা ডেকে এনেছে জার্মান ম্যানেজমেন্ট। মশা তাড়াতে কোকোয়া মেশানো এক জাতের মশার স্প্রে ছিটোনো হয়েছে জার্মানির শিবির জুড়ে। এর একটা অদ্ভুত বিকট গন্ধ আছে। এতে নাকি আরও জেরবার হয়ে পড়েছেন ফুটবলার ও তাঁদের পরিজনরা। প্রথমে মশার ঠেলায়, পরে মশা তাড়ানো স্প্রে-র গন্ধের ঠেলায় অতএব ঘরে সেঁধিয়ে গিয়েছেন সকলে।