দলের জয়ে খুশি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, যাবেন বার্লিনে।
শেষ আপডেট: 11th July 2024 14:43
ওয়াশিংটন ডিসিতে চলছে হাইভোল্টেজ নেটো বৈঠক। একদিকে সিএনএন বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে জো বাইডেনের অবস্থা দেখে আশঙ্কায় ডেমোক্র্যাটরা। অন্যদিকে, কার্যত শিরদাঁড়া দিয়ে হিমশীতল স্রোত নামছে ইউরোপের। ফের যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন, নেটোর ভবিষ্যৎ কী হবে? উদ্যত রাশিয়ার সামনে ইউরোপই বা যুঝবে কীভাবে? ইউক্রেনের অস্তিত্বই বা কদ্দিন? ভূরাজনীতির জটিল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নির্বাচিত হয়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে গুছিয়ে বসার আগেই সটান ওয়াশিংটনের বিমান ধরেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। কিন্তু নেটোর বৈঠকের ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রীর মন ছিল ডর্টমুন্ডে। তিনি তো বৈঠক সেরে লন্ডনে ফিরবেন। কিন্তু ইউরো কি ঘরে ফিরবে?
এক্স হ্যান্ডলে একটা ভিডিও দিয়েছেন স্টার্মার। দেখা যাচ্ছে, নেটোর দর কষাকষির ফাঁকেই টিভির সামনে বসে পড়েছেন স্টার্মার। পাশে উদগ্রীব হয়ে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। এদিকে টিভিতে দেখা যাচ্ছে, সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে পেনাল্টি মারছেন হ্যারি কেন। এক গোলে তখন এগিয়ে ডাচরা। গোল হতেই রীতিমত লাফিয়ে উঠলেন স্টার্মার! ইয়েসসস!
Picked the right moment to pop out from NATO meetings and check the score...@MinPres pic.twitter.com/gqnCK8ogri
— Keir Starmer (@Keir_Starmer) July 10, 2024
ঘটনাচক্রে, নেটোতেও বদল এসেছে। নবনির্বাচিত প্রধান হয়েছেন প্রাক্তন ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রাটা।
একটা সময় খুব অবাক লাগছিল। কী হল এটা? ম্যাচ শুরুর আগে কি ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুমে কেউ পরশপাথর-টাথর ছুঁইয়ে এসেছিল? নয়ত এতটা বদল হয় কী করে? কথায় বলে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে! শেষ রাতের সময়টা রোববার অবধি বাড়িয়ে নিয়েছেন গ্যারেথ সাউথগেট। কিন্তু শেষের আগের রাতে এটা কী হল? গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে বিরক্তিকর ফুটবল খেলে সমালোচনায় এফোঁড়-ওফোঁড় হয়েছিলেন সাউথগেট। ভাবা হচ্ছিল, গতকালই কি শেষ রাত? তাতেই যেন ওস্তাদের সব তাস আস্তিন থেকে বের করে দিলেন তিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এটা কারা খেলছে? দশ জনে মিলে ডিফেন্সে নেমে এসেছে নেদারল্যান্ডস, পায়ে বল পেলেও ধরে রাখতে পারছে না, মাঝমাঠে প্রায় 'ডায়মন্ড ফর্মেশন'-এর মত সাঁড়াশি দখল রেখেছেন ডেক্লান রাইস, জুড বেলিংহ্যাম, বুকায়ো সাকা ও ফিল ফোডেন। কাইল ওয়াকার, কোবি মাইনুরা কোডি গ্যাকপোকে বলের কাছে ঘেঁষতেই দিলেন না। একবার ফোডেনের শট ফিরে এল বারে লেগে। একবার গোললাইনের ওপর দাঁড় করিয়ে কোনওমতে আটকালেন ডামফ্রিস!
এবারের ইউরোতে সম্ভবত ভক্তের ঢলের নিরিখে এক নম্বরে ছিল ডাচরা। প্রতিবেশী দেশে ইউরো, কাতারে কাতারে সমর্থকরা এসেছেন দেখতে। স্রেফ সেমিফাইনাল দেখতেই ডর্টমুন্ডে হাজির ছিলেন প্রায় ৭৫ হাজার ডাচ ভক্ত। সারা শহর জুড়ে যেন কমলা সুনামি চলছে। সকাল দশটার মধ্যেই ডর্টমুন্ডের ফুটপাথ থেকে বড় রাস্তা সর্বত্র কমলা ভিড়ে ভরতে শুরু করে। এগারোটার মধ্যেই দেখা যায়, স্টেডিয়ামের রাস্তায় কার্যত জনসমুদ্র। খেলা শুরু রাত ন'টায়। এদিকে বিকেল চারটে থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে স্টেডিয়ামের রাস্তায় তিলধারণের জায়গা নেই। ডাচ ভক্তরা কমলা জার্সিতে আনন্দে নাচছেন, গান গাইছেন। ইংরেজদের সঙ্গে নাকি টুকরো হাতাহাতিও লেগেছে। অবশ্য বাড়াবাড়ি হয়নি। বিশ্ববিখ্যাত জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ঘরের মাঠের একতা গ্যালারিতে যেন শুধুই কমলা সামিয়ানা টাঙানো। সমাজমাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের পেজেও ভক্তদের ছবির ঢল।
এরকম সমর্থক নিয়েও ভার্জিল ভ্যান ডাইকরা প্রথমার্ধে পনেরো মিনিটের মধ্যেই যেন খেলা থেকে নিঃশব্দে হারিয়ে গেলেন। এমন হওয়ার কথা ছিল না। আন্দাজ ছিল, ইংল্যান্ড মাঝমাঠকে টলিয়ে দিতে শুরু থেকেই অল-আউট আক্রমণে ঝাঁপাবেন জোহান ক্রুয়েফের শিষ্য রোনাল্ড কোম্যান। হলও তাই। মাত্র সাত মিনিটেই প্রতি-আক্রমণে দুর্দান্ত শটে গোল করে যান জাভি সিমন্স। কিন্তু আঠারো মিনিটেই গোলমাল হয়ে যায় পেনাল্টি বক্সে। শরীর ভাসিয়ে শট নিতে গিয়েছিলেন হ্যারি কেন। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে পা বাড়িয়েই ফাউল করে বসেন ডেঞ্জেল ডামফ্রিস। ওটা পেনাল্টি কিনা সেটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক চলতে পারে। কিন্তু হ্যারি কেনের ওই পেনাল্টির পরেই প্রথমার্ধের সম্পূর্ণ দখল নিয়ে নেয় তিন সিংহের দল। দ্বিতীয়ার্ধে নেদারল্যান্ডস তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে উঠলেও লাভ হয়নি।
রোনাল্ড কোম্যানকে ম্যাচের মধ্যে বারবার ছক পাল্টাতে হয়। মেমফিস দিপাই ৩৫ মিনিটের মধ্যে চোট পেয়ে উঠে যান। ভিরম্যানকে নামান কোম্যান। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের ব্রহ্মাস্ত্র গ্যাকপো ও জাভি সিমন্সকে আটকে দিয়েই মোক্ষম চাল চালেন সাউথগেট। অবশ্য তাতেও গোল আসেনি। শেষে ৮১ মিনিটে হ্যারি কেনকে তুলে অ্যাস্টন ভিলার ফরোয়ার্ড ওলি ওয়াটকিন্সকে নামাতেই সব অঙ্ক গোলমাল হয়ে যায় কোম্যানের। শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মিনিট আগে জয়সূচক গোল করে বেরিয়ে যান ওয়াটকিন্স।
জয়ের পরে অবশ্য ফের ট্যুইট করেন উচ্ছ্বসিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। লেখেন, 'বার্লিন, আমরা আসছি।' ভাবা হচ্ছিল, কথাটা হয়ত আলঙ্কারিক। কিন্তু পরে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়ে দেন, আগামী রবিবার, বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে স্পেন-ইংল্যান্ড ফাইনাল দেখতে উড়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে থাকবেন ব্রিটেনের সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সচিব, বাঙালি সাংসদ লিজা নন্দী। বাবা দীপক নন্দী কলকাতা থেকে ইংল্যান্ডে গিয়ে সেখানেই স্থায়ীভাবে থেকে গিয়েছিলেন। পরে লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। লিজার অবশ্য জন্ম ব্রিটেনেই, ম্যাঞ্চেস্টারে। লেবার দলের অন্যতম নামী মুখ। ৪৪ বছরেই লিজাই এবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন বার্লিনের গ্যালারিতে।