শেষ আপডেট: 8th January 2025 12:41
দ্য ওয়াল ব্যুরো : সম্প্রতি সন্তোষ ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে বাংলা ফুটবল দল। সাত বছর পর আবারও বাংলা এই টুর্নামেন্টে খেতাব জয় করেছে। দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশংসার বন্যা বইতে শুরু করেছে। আনন্দে ভাসছে হুগলি জেলার নালিকুল এলাকাও। এখানকার বন্দিপুর গ্রাম থেকেই উঠে এসেছেন সুপ্রিয় পণ্ডিত। সন্তোষে তাঁর পারফরম্যান্স যথেষ্ট নজরকাড়া ছিল।
তবে সুপ্রিয়র সামনে এই সাফল্যের রাস্তা খুব একটা সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই আর্থিক প্রতিকূলতা তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। সুপ্রিয় বললেন, 'ছোটবেলা থেকে বাবা খুব কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছেন। যখন যা চেয়েছি, তখনই সেটা পেয়েছি। এবারের সন্তোষ ট্রফিতে আমাদের গ্রুপে বেশ কয়েকটা কঠিন দল ছিল। কিন্তু, শেষমুহূর্ত পর্যন্ত আমরা লড়াই ছাড়িনি।'
প্রসঙ্গত, ছোটবেলা থেকেই সুপ্রিয় মোহনবাগান কিংবা ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন। পাড়ার মাঠ থেকে প্রথমে বৈদ্যবাটি কৃষ্টিচক্রের হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। তারপর সেখান থেকে তিনি একে একে কলকাতার রেনবো, ভবানীপুর, পিয়ারলেস দলে খেলেছে। বর্তমানে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সুপ্রিয়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়ই ফুটবলের প্রতি ভালবাসা জন্মাতে শুরু করে। কিন্তু, পরিবারে তখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সেকারণে সুপ্রিয়র এই স্বপ্নকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকী, এই আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে একটা সামান্য বুটও কিনে দিতে পারেননি তাঁর বাবা।
কিন্তু, সুপ্রিয় পণ্ডিতের জেদের সামনে যাবতীয় বাধা-বিপত্তি কার্যত ধুলোর মতো উড়ে যায়। পরিবারের অমতেই তিনি বিভিন্ন জায়গায় টুর্নামেন্টও খেলতে যান। আর সেইসঙ্গে শান দিতে শুরু করেন নিজের প্রতিভায়। অবশেষে সন্তোষ ট্রফি জিতে তিনি নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করলেন।
সুপ্রিয়র মা কৃষ্ণা পণ্ডিত ছেলের সাফল্যে হাউহাউ করে কেঁদেই ফেললেন। তিনি বললেন, 'অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। মেরেছি, বকেছে তবু খেলা ছাড়িনি। ওর বাবার ইচ্ছা ছিল না যে ছেলে ফুটবল খেলুক। উনি মনে করতেন, খেলাধুলো করে কিছু হবে না। তবু আমি ঈশ্বরের প্রতি ভরসা রেখেছি। জানতাম, একদিন না একদিন ছেলে ঠিক মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এখন ছেলে অনেক ভাল জায়গায় গেছে। আর সেটা দেখেই আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এখন চাই ছেলে আরও অনেক বড় হোক।'
উল্লেখ্য, এই নিয়ে ৩৩ বার সন্তোষ ট্রফির খেতাব জয় করেছে বাংলা ফুটবল দল। গত ৩১ ডিসেম্বর ফাইনাল ম্যাচে কেরালার বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল বাংলা। টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে রবি হাঁসদার গোলে জয়লাভ করেছে সঞ্জয় সেনের ছেলেরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে গোটা দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। পাশাপাশি ফুটবলারদের জন্য চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
সুপ্রিয়র বাবা কাশীনাথ পণ্ডিত বললেন, 'আমাদের পরিবারে আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল ছিল না। পয়সা ছিল না সামান্য একটা বুট কিনে দেওয়ারও। আমরা অন্যের জমিতে চাষ করতাম। যা পেতাম, তা দিয়ে সংসারটাই ভাল করে চলত না। এই ফুটবল খেলার জন্য সুপ্রিয়কে অনেক বকাবকি করেছি। কিন্তু, কোনও কথাই ও শোনেনি। আজ নিজের জেদের দাম ও পেয়েছে।'